Advertisment

সরকারি অনুষ্ঠানে বিরোধীদের তোপ! অনাস্থা বিতর্কের দু'দিন আগে মোদীর মুখে 'ভারত ছাড়ো'

গান্ধীর রক্তে রাঙানো হাত নিয়ে আবার মহাত্মার আন্দোলনের কথা, পালটা তোপ বিরোধীদের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
PM Modi

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ১৯৪২ সালের ৯ আগস্ট শুরু হয়েছিল ঐতিহাসিক 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলন। সংসদে অনাস্থা বিতর্ক শুরু হওয়ার আগে রবিবার সেই ঐতিহাসিক 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনকে বর্ষপূর্তির তিন দিন আগে, ৬ আগস্টই টেনে আনলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সুর চড়ালেন বিরোধীদের বিরুদ্ধে। সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই বিজেপি বিরোধীদের বিরুদ্ধে তোপ দেগে ব্রিটিশ বিরোধিতার কায়দায় বিরোধীদের দেশ ছাড়ার দাবিতে সোচ্চার হলেন। বিজেপি এবং তার বর্তমান প্রাণপুরুষ নরেন্দ্র মোদী বরাবরই বিরোধীদের পরিবারতন্ত্রকে কটাক্ষ করে এসেছেন।

Advertisment

গেরুয়া শিবিরের দাবি, বিরোধীরা শুধু পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি করে। আর, বিজেপি গণতন্ত্রের। পালটা বিরোধীরা বিজেপির বিরুদ্ধে পরিবারতন্ত্রের রাজনীতির অভিযোগ বারবার তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি 'ইন্ডিয়া' জোট গঠন করেছেন বিরোধীদের একাংশ। যার নামকরণ নিয়ে তীব্র কটাক্ষ আগেই করেছেন মোদী-সহ অন্যান্য বিজেপি নেতারা। এবার সেই সূত্র ধরেই মোদীর দাবি, বর্তমানে ভারতবাসী দুর্নীতিতে ভরা পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি দেখে বিরোধীদের 'ভারত ছাড়ো' বা 'কুইট ইন্ডিয়া' বলছেন।

আর, সেটা বললেন তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে লোকসভায় বিতর্ক শুরুর ঠিক দু'দিন আগে। মোদীর অভিযোগ যে বিরোধীরা 'নেতিবাচকতার রাজনীতিতে' আটকে আছেন। বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'কে কটাক্ষ করে তাঁর দাবি, 'লোকেরা বলছেন যে ইন্ডিয়া হল দেশের অসুখ।' অমৃত ভারত স্টেশন প্রকল্পের অধীনে ৫০৮টি রেলওয়ে স্টেশনের পুনরায় উন্নয়নের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে রবিবার একটি ভিডিও ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই তিনি বলেন, 'মহাত্মা গান্ধীর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের আহ্বানে অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষ আজ বলছে ভারত ছাড়ো। সমস্ত অসুস্থতার জন্য। এর মানে, দুর্নীতি ভারত ছাড়ো; রাজবংশ ভারত ছাড়ো; তুষ্টিকরণের রাজনীতি ভারত ছাড়ো।'

মোদী বলেন, 'এটা দুর্ভাগ্য যে, বিরোধীদের একটি অংশ এখনও পুরনো রাস্তায় আটকে আছে। তারা কোনও কাজ করবে না এবং অন্য কাউকে কোনও কাজ করতেও দেবে না। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা মাথায় রেখে দেশ নতুন সংসদ ভবন তৈরি করেছে। সংসদ গণতন্ত্রের প্রতীক, এতে সরকারের পাশাপাশি বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্বও রয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের এই অংশটি এমনকী এই নতুন সংসদ ভবন নির্মাণেরও বিরোধিতা করেছে।' মোদি বলেন, 'বিরোধীরা নতুন কর্তব্যপথের উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতিসৌধেরও সমালোচনা করেছে।'

কার্যত বক্তব্যে কংগ্রেসই তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য ছিল। মোদী বলেন, 'কিছু রাজনৈতিক দল শুধুমাত্র নির্বাচনের সময় সর্দার প্যাটেলকে স্মরণ করে। আজ অবধি, তাদের সবচেয়ে বড় নেতা বিশ্বের বৃহত্তম মূর্তি স্ট্যাচু অফ ইউনিটি পরিদর্শন করেননি। তাই এই নেতিবাচকতার রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আমরা একটি মিশনের মতো ইতিবাচকতার রাজনীতির পথে চলেছি। কোন রাজ্যে কোন দলের সরকার এবং ভোটব্যাংক আছে, তা না-দেখেই সরকার উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।'

মোদী আরও বলেন, 'বিশ্বব্যাপী ভারতের মর্যাদা বেড়েছে। ভারতের প্রতি বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। এর পিছনে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, প্রায় তিন দশক পর ভারতীয়রা পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার নির্বাচিত করেছে। দ্বিতীয়ত, পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার প্রধান সমস্যাগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং দেশের সামনে চ্যালেঞ্জগুলোর স্থায়ী সমাধানের জন্য ক্রমাগত কাজ করে চলেছে। অমৃতকালের শুরুতে ভারত এখন উন্নত হওয়ার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলেছে। নতুন শক্তি, নতুন অনুপ্রেরণা, নতুন সংকল্প আছে। এই চেতনায়, ভারতীয় রেলের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে।'

আরও পড়ুন- কী এই তোষাখানা মামলা, যাতে ইমরানের ৩ বছর কারাদণ্ড হল?

মোদীর এই সব বক্তব্যকে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিরোধীরাও। তৃণমূলের পক্ষ থেকে ফিরহাদ হাকিম বলেন, 'এই দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের জন্যই মেহুল চোকসি, নীরব মোদী থেকে শুরু করে দুর্নীতিগ্রস্তরা দেশের অর্থ লুঠ করে বিদেশে পালিয়ে যেতে পেরেছে। ওঁর সরকার যেভাবে দুর্নীতিতে জড়িত, তাতে নরেন্দ্র মোদীর মুখে দুর্নীতির কথা মাথায় না।' সিপিএমের তরফে শমীক লাহিড়ি বলেছেন, 'বিরোধীরা জোট বাঁধায় উনি ভয় পেয়ে গিয়েছেন। তাই সংসদে বিরোধীদের মুখোমুখি হতে চাইছেন না। মহাত্মা গান্ধীর রক্তে ওঁদের হাত লাল। তারপরও উনি কতটা নির্লজ্জ যে গান্ধীর আন্দোলনের কথা বলছেন।'

narendra modi Mahatma Gandhi Oppositions
Advertisment