সময়ের ব্যবধানে ছ'মাস অতিক্রান্ত। মেদিনীপুর শহরের পর উত্তর ২৪ পরগণার ঠাকুরনগর। সেই সময় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য চলাকালীন মেদিনীপুরে সামিয়ানা ভেঙে পড়েছিল। এবার তেমন কিছু না ঘটলেও শনিবারের বারবেলায় ঠাকুরনগরের সভা নিয়েও বিতর্ক পিছু ছাড়লো না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঞ্চে ভাষণ শুরু করতেই সভাস্থলে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। পরিস্থতি আয়ত্তের বাইরে যাচ্ছে আঁচ করতে পেরেই সম্ভবত বক্তব্য দীর্ঘ না করে দুর্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দেন মোদী। দুর্গাপুরে গিয়ে ঠাকুরনগরের বিশৃঙ্খলার জন্য ক্ষমাও প্রার্থনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
ভোট বড় বালাই, তাই বিজেপির জনসভা পাল্টে হয়ে গিয়েছিল অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সভা। প্রথমে ঠাকুরবাড়ির পাশে রেললাইনের পাশে মাঠে সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নামকীর্তনের বাধা ছিল, তাছাড়া এসপিজির অনুমতি না মেলায় সেই জনসভা হল ঠাকুরবাড়ির পাশেই কামনা সাগরের মাঠে।
আরও পড়ুন: নাগরিকত্ব বিলকে সমর্থন করুন, মমতাকে আহ্বান মোদীর
যেখানেই হোক, মেদিনীপুরের সামিয়ানা ভাঙার স্মৃতি তাড়া করে বেড়াচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে। সেই স্মৃতিকে এদিন উসকে দিল ঠাকুরনগর। এদিন যে মাঠে সভা হয়েছে, তার যা সামর্থ্য, তার থেকে অনেক বেশি মানুষ বক্তব্য শুনতে আসেন, দাবি প্রধানমন্ত্রীরই। মাঠের বাইরের রাস্তাতেও অনেকে ভিড় করেছিলেন। মেদিনীপুরের সেই অবাঞ্ছিত ঘটনা প্রধানমন্ত্রীর মনে পড়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক।তাই এখানে স্রেফ ১৮ মিনিট বক্তব্য রাখেন মোদী।
প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখার পরই মাঠে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে যায়। পিছনের লোক সামনে এগোতে থাকেন। বাঁশের বেড়া ভাঙতে শুরু করে। মতুয়াদের স্বেচ্ছাসেবকরা আটকানোর চেষ্টা করলেও তাতে কোনও কাজ হয়নি। এবার সামনের দিকের লোক মাঠের বাইরে বেরনোর চেষ্টা করেন। হুলুস্থুল পড়ে যায়। একের পর এক বাঁশের ব্যারিকেড ভাঙা শুরু হয়ে যায়। অনেকেই চিৎকার জুড়ে দেন। চরম ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে যায়। একে অপরের গায়ে পড়তে থাকেন। শুরু হয়ে যায় ধুন্ধুমার।
আরও পড়ুন: “বারাণসীতে মোদী জিতবেন তো?”
এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। অনেকে চাপা পড়ার ভয়ে মোদীর ভাষণের আগেই মাঠ ছাড়তে শুরু করেন। এই হুড়োহুড়ির মধ্যে পড়ে প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে আসা ছোট ছেলেমেয়েরা বাবা-মায়ের হাত থেকে ছিটকে সাময়িকভাবে হারিয়ে যায়। মোদীর বক্তব্য শুনতে এসে অনেকের মোবাইল, মানিব্যাগও খোয়া গিয়েছে। সভার পর এসব নিয়েই মঞ্চ থেকে একাধিক ঘোষণা করা হয়।
ঠাকুরনগরের ভিড় দেখে প্রধানমন্ত্রী একদিকে খুশি। তবে ভাষণের মাঝখানে ভিড়ের ঠেলাঠেলি দেখে তিনিও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ১৬ জুলাই মেদিনীপুরের সভায় সামিয়ানা ভাঙায় অনেকে গুরুতর জখম হয়েছিলেন। মেদিনীপুর হাসপাতালেও জখমদের দেখতে ছুটে গিয়েছিলেন মোদী। এদিন প্রায় জনা কুড়ি মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিন দ্বিতীয় জনসভা ছিল দুর্গাপুরের নেহরু স্টেডিয়ামে। সেখানে ঠাকুরনগরের ঘটনার কারণে ক্ষমা চেয়ে নেন মোদী। তিনি বলেন, "ঠাকুরনগরে মাঠের সামর্থ্যের তুলনায় মানুষ বেশি এসেছিলেন। কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়েছে। মহিলা ও শিশুরা অসুবিধায় পড়েছেন। তাঁদের জন্য সমবেদনা রইল। আমি ওই ঘটনার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।"
অভিজ্ঞ মহলের মতে, প্রধানমন্ত্রীর মত ভিভিআইপির সভার ব্যবস্থাপনা আরও পরিকল্পনা মাফিক হওয়া উচিত। কী ধরনের ব্যারিকেড তৈরি হলো যা একটু ঠেলাতেই ভেঙে যায়? ৮ ফেব্রুয়ারি উত্তরবঙ্গে জনসভা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।