সিএএ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার জওহরলাল নেহরুর মন্তব্যকে হাতিয়ার করে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। একই সঙ্গে তুলে ধরলেন, আরেক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, সংবিধান প্রণেতা বি আর আম্বেদকরের বক্তব্যও। প্রধানমন্ত্রী মোদী এদিন সংসদে দাঁড়িয়ে স্পষ্টভাবে জানান, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কোনও ভারতীয় নাগরিকের উপর কোনও প্রভাব ফেলবে না, সংখ্যালঘুদের স্বার্থও ক্ষুণ্ণ হবে না।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর মতে, দেশের প্রতিষ্ঠাতারাই সংশোধিত নাগরিকত্বের মত আইন চেয়েছিলেন। নেহরুর প্রধানমন্ত্রীত্বের লোভের কারণেই দেশভাগ হয়েছিল। নেহেরু নিজেই সাম্প্রদায়িক ছিলেন কিনা, সেই গুরুতর প্রশ্নও তুলেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, '১৯৫০ সালে নেহেরু-লিয়াকত আলী চুক্তিতে বলা হয়েছিল, পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের প্রতি যেন কোনও বৈষম্য না করা হয়। কংগ্রেসের কথা অনুযায়ী নেহেরুর অতিবড় ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি ও দারুণ দূরদর্শী হয়েও সমগ্র পাক নাগরিকের কথা না বলে তিনি 'সংখ্যালঘু' কথাটি কেন ব্যবহার করেছিলেন?' সেই প্রশ্নও ছুঁড়ে দেন নরেন্দ্র মোদী।
আরও পড়ুন: ‘কংগ্রেসের জন্য মুসলিমরা ভোটব্যাঙ্ক, আমাদের জন্য তাঁরা ভারতীয়’, সংসদে সুর চড়ালেন মোদী
মোদীর দাবি, 'পণ্ডিত নেহেরু অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে বারবার হিন্দু এবং মুসলিম শরণার্থীদের মধ্যে পার্থক্য করার কথা বলেছিলেন। এছাড়া, ১৯৫০ সালে সংসদেই নেহেরু বলেছিলেন ভুক্তভোগী মানুষ যারা ভারতে বসতি স্থাপন করতে আসছেন, তাঁরা নিঃসন্দেহে নাগরিকত্বের দাবিদার এবং এই সম্পর্কে যদি আইন না থাকে তবে আইন সংশোধন করা উচিত। ১৯৫৩ সালে নেহেরু বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানে সরকার হিন্দুদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে নেহেরু কী সাম্প্রদায়িক ছিলেন?' ফের কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন মোদী।
শুধু নেহরুই নয়, সিএএ পক্ষে বলতে গিয়ে এদিন সংসদে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাত্রীর ১৯৬৪ সালে করা একটি মন্তব্যও তুলে ধরেন মোদী। তাঁর দাবি, 'উদ্বাস্তু নিয়ে আলোচনার সময় সংসদে লাল বাহদুর শাত্রী বলেছিলেন, 'পূর্ব পাকিস্তানের সিদ্ধান্ত থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে সমস্ত অ-মুসলিমকে সেখান থেকে বিতাড়িত করা হবে। সেটি একটি ইসলামিক রাষ্ট্র। অ-মুসলমানরা সেখানে বসবাস করতে পারে না...। তাহলে লাল বাহুদুর শাস্ত্রীও কী সাম্প্রদায়িক ছিলেন?' বিরোধীদের উদ্দেশ্যে ফের প্রশ্ন ছুড়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
রাজ্যসভায় বক্তব্য পেশের সময় রাম মনোহর লোহিয়ার মন্তব্যকে হাতিয়ার করেন মোদী। তিনি বলেন, 'যেসব হিন্দু পাকিস্তানে রয়েছেন তারা পাক নাগরিক বলে আমরা তাদের জন্য চিন্তা করব না এটা হতে পারে না। ভারতের হিন্দু-মুসলমানদের জন্য আমরা যতটা চিন্তা করি, পাক হিন্দুদের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তা করাও আমাদের ততটাই কর্তৃব্য।' সংসদে উপস্থিত সমাজবাদী মনোভাবাপন্ন দলের সাংসদদের কটাক্ষ করে মোদী বলেন, 'সিএএ বিরোধীরা আমাদের সঙ্গে সহমত পোষণ নাই করতে পারেন কিন্তু আমার অনুরোধ লোহিয়াকে অস্বীকার করবেন না।' সিএএ প্রতিবাদে পাঁচ রাজ্যে ইতিমধ্যেই প্রস্তাবনা পাস হয়েছে। যার বিরোধিতা করেন প্রধানমন্ত্রী। জানান, 'উদ্বাস্তু সম্পর্কে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর কথা পড়ুন। তখন আপনারা কী ভাবতেন আর এখন কী ভাবেন তা তুলনা করে দেখুন।'
আরও পড়ুন: ‘কিছু টিউবলাইট এমনই হয়’, রাহুলকে খোঁচা মোদীর
জাতীয় স্বার্থ দূরে ঠেলে ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতির কারণেই কংগ্রেস ও তার সহযোগী দলগুলি সিএএ-এর প্রতিবাদ করছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন সংসদেও সেই কথা বলেন তিনি। 'দেশ গঠনকারী সবাই কী তাহলে সাম্প্রদায়িক ছিলেন?' বিরোধী বেঞ্চের দিকে বারে বারে সেই প্রশ্নই ছুড়ে দেন মোদী।
কংগ্রেসী ভূপেন্দ্রকুমার দত্ত ও যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের উদাহরণ তুলে মোদী সংসদে বলেন, 'এঁরা প্রথমে পাকিস্তানে থেকে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন। পরে হিন্দুদের উপরে অত্যাচারের কারণে ভারতে ফিরতে বাধ্য হন।' কংগ্রেস নেতা তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী ভূপেন্দ্র দত্ত দেশভাগের পরে পাকিস্তানে রয়ে গিয়েছিলেন। সে দেশের সংবিধান সভার সদস্যও ছিলেন।' মোদী বলেন, ' সংবিধান সভায় ভূপেন্দ্র বলেছিলেন, পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের নিশানা করা হচ্ছে।'
Read the full story in English