মণিপুর নিয়ে সংসদে অচলাবস্থা অব্যাহত। সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় বলেছেন, ‘সরকার মণিপুর নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত’। তবে সূত্রের খবর মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে শুধু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই কথা বলবেন। সরকার ইতোমধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছে। এদিকে মণিপুর ইস্যুতে মোদীর বিবৃতির দাবিতে অনড় ‘ইন্ডিয়া জোট’। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।
এদিকে এর মাঝেই মোদী গতকাল বিজেপির সংসদীয় বোর্ডেরেক বৈঠকে ইন্ডিয়া জোটকে তুলোধোনা করে বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠনের নামেও ইন্ডিয়া থাকে’। প্রধানমন্ত্রীর বাদল অধিবেশনের বাকি দিনগুলির জন্য সরকারের কৌশল ঠিক করতে মঙ্গলবার সংসদের কার্যক্রম শুরুর আগে এক বৈঠকে মিলিত হয় বিজেপির সংসদীয় বোর্ড। বৈঠকে, বিরোধীদের সম্পূর্ণ দিকভ্রষ্ট বলে কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, বিরোধীদের কাজই প্রতিবাদ করা, দলীয় নেতাদের তিনি নিজেদের কাজে মনোযোগ দিতে বলেছেন।
ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির জোট, ‘ইন্ডিয়া’কে কড়া আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশাপাশি এই জোটকে ব্রিটিশদের ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’র সঙ্গেও তুলনা করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছাড়াও এই বৈঠকে অংশ নেন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা, সমস্ত ক্যাবিনেট মন্ত্রী এবং দুই কক্ষের বিজেপি সাংসদরা। এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জনসংযোগ বৃদ্ধি এবং বিরোধী জোটের মোকাবিলার বিষয়ে দলীয় সাংসদদের বিভিন্ন নির্দেশ দিয়েছেন।
বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিরোধীদের কাজই প্রতিবাদ করা’ তাদের করতে দিন এবং আপনারা আপনাদের কাজে মনোনিবেশ করুন। মোদী আর ও বলেন, ‘তার লক্ষ্য হল ২০২৭ সালের মধ্যে ভারতকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করা এবং তৃতীয় মেয়াদে ভারতকে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করা”।
বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্করও বিরোধী জোটকে আক্রমণ করে বলেন, "প্রধানমন্ত্রী মোদী আমাদের আশা দিয়েছেন যে আমরা ২০২৪ সালেও ফের ক্ষমতায় ফিরে আসব। দেশও এটা জানে, বিরোধীরাও সেটা বোঝে, কিন্তু বারবার বিরোধিতা করে তারা মেনে নিয়েছে যে তারা ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না”।
এদিকে বিরোধী জোটের অনাস্থা প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বিজেপির একটি সূত্র জানিয়েছে এটা নিয়ে তারা মোটেও চিন্তিত নয়। শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, সরকার সংসদের কাজে বিরোধীদের বিঘ্ন ঘটানোর বিষয়ে অযথা উদ্বিগ্ন নয়, এখনও পর্যন্ত তারা আইনসভার ‘এজেন্ডা’ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছে। মঙ্গলবার, সরকার লোকসভায় একাধিক বিল পাস করেছে তার মধ্যে রয়েছে বহু-রাষ্ট্রীয় সমবায় সমিতি (সংশোধন) বিল, ২০২২ এবং জৈবিক বৈচিত্র্য (সংশোধন) বিল, ২০২২-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি। সোমবারও, সরকার জাতীয় নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কমিশন বিল, ২০২৩ জাতীয় ডেন্টাল কমিশন বিল, ২০২৩ এবং সংবিধান (তফসিলি উপজাতি) আদেশ (পঞ্চম) পেশ করেছে।
বিরোধী দলের মোদীর বিবৃতির দাবির মাঝেই দুটি দল, বিএসপি এবং এআইএমআইএম তারা প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিতে খুব একটা জোর দিচ্ছে না, তবে তারা চায় মণিপুর নিয়ে বিতর্কের সময় সংসদে উপস্থিত থাকবেন। বিরোধী দলের এক সাংসদ মনে করছেন সরকারের এই কৌশলে ফাঁদে পড়তে পারেন বিরোধী নেতারা। সরকারের কৌশলের আরেকটি ইঙ্গিত ছিল মণিপুরের কোন উল্লেখ না করেই মঙ্গলবার বিজেপির সংসদীয় দলের সভায় বিরোধীদের ওপর মোদীর তীব্র আক্রমণ।
সোমবার, শীর্ষ সরকারী সূত্র জানিয়েছে যে তারা এখন পর্যন্ত মণিপুরে "অগ্রগতি" নিয়ে সন্তুষ্ট। সূত্র জানায়, ব্রডব্যান্ড সেবা সংক্রান্ত শিথিলতা এরই অংশ। মঙ্গলবার, মোবাইল ইন্টারনেটের উপর নিষেধাজ্ঞার পর্যালোচনা এবং ব্রডব্যান্ড পরিষেবার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের ঘোষণা প্রসঙ্গে মণিপুর সরকার জানিয়েছে, " ইন্টার পরিষেবা বন্ধের ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। ইন্টারনেট বিধিনিষেধ "গুরুত্বপূর্ণ অফিস, প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য সুবিধা, ওয়ার্ক ফ্রম হোমকে প্রভাবিত করেছে"।
প্রধানমন্ত্রীকে হাউসে কথা বলতে রাজি করার জন্য অনাস্থা প্রস্তাব, যদিও একটি বিরল পদক্ষেপ। স্বাধীনতার পর থেকে লোকসভায় মাত্র ২৭টি অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। শেষবার অনাস্থা প্রস্তাব সরকারকে পতন ঘটায় ২০০৩ সালে, যখন কংগ্রেস অটল বিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিত্ব ভেঙে দেয়। ২০০৮ সালে, যখন তার সরকার ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি নিয়ে সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তার সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করার জন্য একটি আস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন এবং জয়ী হন।