আসামের শিলচর বিমানবন্দরে ছ'জন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ এবং দু'জন বিধায়ককে আটক এবং মারধর করার অভিযোগ উঠেছে আসাম পুলিশের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের এই দলটি দুদিনের সফরে আসামে গিয়েছিল ওই রাজ্যে সোমবার প্রকাশিত জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (NRC) সংক্রান্ত একটি কনভেনশনে যোগ দিতে। পরে অবশ্য আসাম সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে কনভেনশন বাতিল করে দেয়, কিন্তু তৃণমূল দলটির সদস্যদের বক্তব্য, তাঁরা স্রেফ সরাসরি সেইসব পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন, যাঁরা তালিকাভুক্ত হন নি।
দলে রয়েছেন সুখেন্দু শেখর রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, রত্না দে নাগ, নদিমুল হক, অর্পিতা ঘোষ, মমতা বালা ঠাকুর, ফিরহাদ হাকিম, এবং মহুয়া মৈত্র। রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুবাবু বলেন, "আমরা শিলচর এয়ারপোর্টে নামতেই আমাদের সামনে এসে দাঁড়ান ডিসট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট এবং বেশ কিছু পুলিশ অফিসার। এদের মধ্যে একজন আমার বুকে ধাক্কা মারেন। তারপর পুলিশকর্মীরা কাকলি ঘোষ দস্তিদার, মমতা বালা ঠাকুর, এবং মহুয়া মৈত্রের গায়েও হাত তোলে।" তিনি আরও বলেন, "যতক্ষণ না আমাদের বাইরে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে, আমরা এখানেই বসে থাকব।" তাঁর বক্তব্য, তাঁদেরকে দিল্লী বা কলকাতার প্লেনের টিকিট কেটে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করে আসাম সরকার, কিন্তু তাঁরা সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন।
বারাসাতের লোকসভা সাংসদ কাকলী বলেন, "এখানে শ'য়ে শ'য়ে পুলিশকর্মী মোতায়েন রয়েছে। আমাদেরকে এয়ারপোর্ট ছেড়ে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের ছবি তুলছিল ওরা, তাতে আমি জিজ্ঞেস করলাম কোন আইনে এটা করা যায়? আমাদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। মহুয়া মৈত্র, মমতা বালা ঠাকুর এবং সুখেন্দু শেখর রায়ের গায়েও হাত তোলা হয়েছে।" কাকলী আরও বলেন, "আমাদের একটা ঘরে আটকে রাখা হলো, একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি সত্ত্বেও। ওঁরা কোনরকম যুক্তি শুনতেই রাজি নন।"
#WATCH Trinamool Congress MP and MLA delegation detained at Silchar airport #NRCAssam pic.twitter.com/G8l2l3OEFp
— ANI (@ANI) August 2, 2018
এদিকে কলকাতায় সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দলের সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন বলেন, "এটি একটি সুপার ইমারজেন্সি। আমাদের সদস্যরা তো ওখানে আইনভঙ্গ করতে যান নি। তাঁরা আইন তৈরি করেন, ভাঙ্গেন না। একজন মহিলা সদস্য আহত হয়েছেন। আমাদের একজন সাংসদ হার্টের রুগী, তাঁর পেসমেকার বসানো আছে। তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হয়।" ডেরেক আরও বলেন, "তৃণমূলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে রাজ্যসভায় বিবৃতি দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল, কিন্তু (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী) রাজনাথ সিং এলেন না। আমরা এর বিরুদ্ধে লড়ে যাব।"
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের সমালোচনা করে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, "ওঁরা নিজেরাই এই সমস্যার সৃষ্টি করেছেন। কে ওঁদের ওখানে যেতে বলেছিল? আর তো কেউ যান নি। ওঁরা ওখানে অশান্তি ছড়াতে গেছেন। ওঁদের ফেরত চলে আসা উচিৎ। আমাদের সাংসদদেরও পশ্চিমবঙ্গের অনেক বিক্ষুব্ধ এলাকায় যাওয়া থেকে আটকানো হয়েছে। তৃণমূল নেতাদের আসামে কী কাজ?
শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, সুখেন্দুবাবু আশঙ্কা করছেন যে তাঁদের গ্রেফতার করা হবে, কিন্তু দলের সদস্যরা তাঁদের বিমানবন্দর থেকে ফেরত না আসার সিদ্ধান্তে অনড় থাকবেন। "এর শেষ না দেখে আমরা ছাড়ব না," বলছেন সুখেন্দুবাবু।