Advertisment

'বড়মা'র প্রয়াণে লোকসভার লড়াইয়ের মহড়া দেখল ঠাকুরনগর

"এই রাজনীতি একেবারেই কাম্য নয়। ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের উচিত একসঙ্গে বসে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া। বড়মা জীবন্ত ঠাকুর ছিলেন।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
thakhur bari cover

ঠাকুরবাড়িতে বড়মার শেষকৃত্য নিয়ে দুদল মতুয়া ভক্তের মধ্যে বচসা। ছবি- শশী ঘোষ

মতুয়া সম্প্রাদায়ের বড়মা বীণাপাণি দেবীর মৃত্যুতে ঠাকুর পরিবারের রাজনৈতিক বিভাজনের চিত্র একেবারে প্রকাশ্যে চলে এল। 'বড়মা'র শেষকৃত্য নিয়ে দুদিন ধরে দু'পক্ষের মধ্যে চলল চরম কাদা ছোড়াছুড়ি। চিৎকার, চেঁচামেচি, উত্তেজনা, ঠেলাঠেলি, খুনের অভিযোগ, কিছুই বাদ গেল না এই পর্বে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বীণাপাণি দেবীর মৃত্যু থেকে দাহ ঘিরে যা যা ঘটল, সেই ঘটনা পরম্পরার একটাই উদ্দেশ্য - মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ক। ওয়াকিবহাল মহলের মতে,২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ লোকসভা আসন দখলের যে লড়াই হতে চলেছে, তারই ঝলক দেখা গেল ঠাকুরবাড়িতে। বিগত দু'দিন ধরে একদিকে যেমন তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী-নেতারা মাটি আঁকড়ে পড়ে রইলেন, তেমনি মুহূর্তের জন্য ময়দান ছাড়লেন না বিজেপি নেতৃত্বও।

Advertisment

তৃণমূল জমানাতেই প্রথম সাংসদ, বিধায়ক হয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। ১৯৬২ সালে নদিয়ার হাঁসখালি বিধানসভা থেকে জাতীয় কংগ্রেসের হয়ে জয়ী হয়েছিলেন প্রমথরঞ্জন ঠাকুর। এই প্রমথরঞ্জন ছিলেন হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ পরিবারের বংশধর। তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী বীণাপাণি দেবী মতুয়া মহাসংঘের দায়িত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নেন। আর সেই পরিবারই এখন তৃণমূল-বিজেপির টানাটানিতে বিভক্ত। এই ঠাকুর পরিবারের নানা সদস্যের নেতৃত্বেই বিভাজিত হয়ে গিয়েছে সাধারণ মতুয়াদের একটা বড় অংশ। তবে এ সবের মধ্যেও অনেকেই আবার বড়মার মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতির বিরোধিতাও করেছেন সরবে। এই 'লাশের রাজনীতি' নিয়ে বীতশ্রদ্ধ ঠাকুরনগরের বাসিন্দারাও।

আরও পড়ুন,পরলোকে মতুয়াদের বড়মা বীণাপাণি দেবী

binapanidevi বীণাপাণি দেবীর মৃতদেহ ঘিরে ভক্তরা। ছবি: শশী ঘোষ

বড়মার মৃত্যুর পর চরম রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ির সাক্ষী রয়ে গেল গাইঘাটার ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ি। মৃতদেহ নিয়ে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানিতে বিলম্বতি হল বড়মার শেষকৃত্যও। প্রথম থেকেই এলাকা জুড়ে ছিল কড়া পুলিশি নিরাপত্তা। রাজ্য সরকার গান স্যালুট দিয়ে সম্মান জানিয়েছে। ইতিমধ্যে ঠাকুর পরিবারের উত্তরাধিকার নিয়ে টানাপোড়েনও শুরু হয়ে গিয়েছে। যারা নাগরিকত্ব দেবে তাদের পাশেই থাকবে মতুয়ারা, এই স্লোগানও উঠেছে ঠাকুরবাড়ির অন্দরে। কোন দল ভেকধারী সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকেই। এভাবেই একদিকে বড়মার মৃতদেহ, আর অন্যদিকে দু'দল মতুয়া ভক্তদের বচসার সাক্ষী থাকল ঠাকুরনগর।

রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এদিন বলেন, "এই রাজনীতি একেবারেই কাম্য নয়। ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের উচিত একসঙ্গে বসে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া। বড়মা জীবন্ত ঠাকুর ছিলেন।" বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেন, "ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। বড়মা ডাক দিলেই আমি এখানে চলে আসতাম। আমার সাংসদ কোটার টাকা এখানকার উন্নয়নে বরাদ্দ হয়েছিল।"

এদিন দাহকার্যের সময় একদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মন্ত্রী সুজিত বসু, সাংসদ ইদ্রিস আলি, নির্মল ঘোষ হাজির ছিলেন। অন্যদিকে বিজেপি নেতা মুকুল রায়, রাহুল সিনহারাও এসেছেন ঠাকুরবাড়িতে। এর আগে এখানে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এসেছেন, এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মনে করা হচ্ছে, এবারও এই লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হচ্ছেন গতবারের সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরই। আর বিজেপির প্রার্থী হওয়ার কথা রয়েছে ওই পরিবারেরেই শান্তনু ঠাকুরের।

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বড়মার সৎকারকে কেন্দ্র করে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ কেন্দ্রের লড়াইয়ের একপ্রস্থ মহড়া হয়ে গেল ঠাকুরবাড়িতে। আর সেই ছবি থেকেই স্পষ্ট, এবার লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে। পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে দিয়েছে তৃণমূলের একসময়ের সেনাপতি মুকুল রায়ের ঠাকুরবাড়ির মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকার বার্তা। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এবার মতুয়া ভোট আরও বেশি বিভাজিত হয়ে যাবে। আর শুধু বনগাঁ নয়, রাজ্যের অন্যত্রও মতুয়াদের ভোট ফ্যাক্টর হবে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে, একথা বলাই বাহুল্য।

tmc bjp lok sabha 2019
Advertisment