বাম ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি। তারপর তৃণমূল কংগ্রেস। পরে বিজেপিতে যোগ। শিল্পাঞ্চলে কান পাতলে শোনা যায় একসময় সিপিএম সাংসদ তরিৎবরণ তোপদারের সংস্পর্শে, পরবর্তীতে অর্জুন সিংয়ের ডান হাত হয়ে ওঠার কাহিনী। মণীশ শুক্লা যেন একেবারেই অর্জুন সিংয়ের ছায়াসঙ্গী ছিলেন। অর্জুন নিজেও তা স্বীকার করেছেন মণীশ তাঁর ঢাল ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে বাম, তৃণমূল ও বিজেপিকে ধরে তাঁর উত্থানের কাহিনী। কিছু সময় কংগ্রেসেও ছিলেন। রবিবার হঠাৎ গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় শুক্লার দেহ।
ছাত্রাবস্তায় এফএফআই-এ রাজনৈতিক হাতেখড়ি। তখনই সাংসদ তরিৎবরণ তোপদারের সংস্পর্শে ছিলেন। ধীরে ধীরে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের টিটাগড় এলাকায় নিজের রাজ কায়েম করা শুরু। তাঁর অনুমতি ছাড়া এলাকায় অনেক কিছুই হত না। ব্যারাকপুরের রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশুনা। তখন দাপিয়ে বাম রাজনীতি করেছেন। এসএফআই-য়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ বস থাকতেন কলেজের ইউনিয়ন রুমে। সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ব্যাপক সংঘর্ষ ও গোলাগুলি চলেছিল। সেই সময় তাঁর ভূমিকার কথা শোনা যায়। পরে অবশ্য তরিৎবরণ তোপদারের সঙ্গে সম্পর্কে ছেদ ঘটে। ততদিনে মণীশ আইনজীবী হয়ে গিয়েছেন। ২০০৯ সালে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থীকে পরাজিত করে সাংসদ হন তৃণমূল কংগ্রেসের দীনেশ ত্রিবেদী। যথারীতি পরিস্থিতি অনুধাবন করে ভাটপাড়ার দাপুটে বিধায়ক অর্জুন সিংয়ের হাত ধরে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দেন। এলাকায় দাপট ধরে রাখতে হবে তো!
আরও পড়ুন- ‘পশ্চিমবঙ্গটা উত্তরপ্রদেশ-বিহারের মতো মাফিয়ারাজের দিকে যাচ্ছে’, বেফাঁস দিলীপ
২০১৫ সালে নির্দল প্রার্থী হিসাবে টিটাগড় পুরসভা নির্বাচনে ৭ নম্বর ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়লাভ। তৃণমূল টিকিট না দেওয়ার নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছিলেন। পরে আবার দলে ফিরে যান। ব্যারাকপুরে এক অনুষ্ঠানে তৃণমূলে ফেরেন মণীশ। ভাটপাড়ার তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিংয়ের গাড়িতে মণীশ শুক্লা আছেন, এই অভিযোগে তাঁর গাড়ি তল্লাশি করেছিল পুলিশ। তখন দলের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন খোদ অর্জুন। এই ঘটনার পর সেদিন রাতেই সিঁথির মোড়ে রীতমতো তাণ্ডব চলেছিল অর্জুন ও মণীশের দলবল। তারপর ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিতে যোগ দিয়ে ব্যারাকপুর কেন্দ্রে প্রার্থী হন অর্জুন সিং। ফের পদ্ম শিবিরে তাঁর সঙ্গে চলে আসেন ছায়াসঙ্গী মণীশ। ধীরে ধীরে দলে ক্রমশ নিজের জায়গা পাকাও করে নিয়েছেন।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে রাজনীতির ধরন বাংলার অন্য যে কোনও এলাকার থেকে অনেকটাই আলাদা। এখানকার রাজনীতির ধাঁচ অনেকটাই উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মত। রাজ্যের অন্য জায়গার তুলনায় অবাঙালি বসতিও তুলনামূলক বেশি। সেই সংস্কৃতিতে মণীশ অনেকটাই মাননসই বলে মনে করছেন রাজনীতির কারিবারিরা। সেই স্টাইলই ছিল তাঁর রাজনীতির মস্ত বড় হাতিয়ার। তবে এলাকায় অনেকের কাছে জনপ্রিয়তা ছিল মণীশের। রক্তদান শিবির বা দুস্থ বাড়ির মেয়ের বিয়ের জন্য দরাজহস্ত ছিলেন মণীশ।
ন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন