শুভেন্দুর পর এবার রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে পোস্টার-ফ্লেক্স পড়ল। পোস্টারে নেই দল বা দলনেত্রীর ছবি। মন্ত্রীর সমর্থনে লেখা রয়েছে, 'কাজের মানুষ-কাছের মানুষ', 'সততার প্রতীক' এবং 'ছাত্র যুবর নয়েনের মণি'। শ্যামবাজার, গিরিশ পার্ক, কাঁকুড়গাছি, উল্টোডাঙা সহ উত্তর কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় এই পোস্টার-ফ্লেক্স দেখা গিয়েছে।
শনিবারই দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই কলকাতায় বনমন্ত্রীর সমর্থনে পোস্টার ও ফ্লেক্স দেখতে পাওয়া অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
গত কয়েক মাস ধরেই শুভেন্দু অধিকারী ও তৃণমূলের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে। নাম না করেই নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ উগরে রাজ্যজুড়ে একের পর এক অরাজনৈতিক সভা করেছেন নন্দীগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক। পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন জেলায় তাঁর সমর্থনে পোস্টার-ফ্লেক্স দেখা গিয়েছে। যাতে দলনেত্রী বা তৃণমূলের পতাকা ছিল না। তবে উল্লেখ ছিল 'দাদা'র অনুগামী'। কে বা কারা সেই পোস্টার লাগিয়েছিল তা নিয়ে নানা জল্পনা। তৃণমূলের অন্দরেও জোর জল্পনা।
এবার একই কায়দায় মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনেও খোদ কলকাতায় প্রথম পোস্টার লক্ষ্য করা গেল। মন্ত্রীর সমর্থনে লেখা রয়েছে, 'কাজের মানুষ-কাছের মানুষ', 'সততার প্রতীক' এবং 'ছাত্র যুবর নয়েনের মণি'। পোস্টারের শেষের দিকে উল্লেখ রয়েছে উত্তর কলকাতা স্পোর্টস লাভার্স এ্যাসোসিয়েশনের নাম। তাদের সৌজন্যেই এই পোস্টার বলে মনে করা হচ্ছে।
শুভেন্দুর পর আরেক মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যের সমর্থনে কলকাতায় এই ধরণের পোস্টার দেখা যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তি বাড়ল জোড়া-ফুল শিবিরেরে।
প্রসঙ্গত, শনিবার হরিদেবপুরে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রাজ্যের বন মন্ত্রী। দলের দূর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন রাজীব। বলেন, ‘ভালকে খারাপ, খারাপকে ভাল বলতে পারি না তাই আমার নম্বর কম। অন্যদের বেশি। স্তাবকতা করলেই নম্বর বেড়ে যায়। দলে ক্ষমতা লোভীরাই জায়গা পেয়ে যাচ্ছেন। যারা দুর্নীতিগ্রস্ত তারা স্তাবক বলে সামনের সারিতে। যখন মানুষ ভাল কাজ করতে আসে, তখন পিছন থেকে টেনে ধরে।’ একই সঙ্গে মন্ত্রী বলেছেন, ‘যারা ঠান্ডা ঘরে বসে থাকে তারাই এখন নেতৃত্বের সামনের সারিতে।’
সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে রাজনৈতিক জল্পনার অন্ত নেই। শুভেন্দু দল ছাড়তে পারেন বলে জোর চর্চা। এ প্রসঙ্গে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘ওর মত নেতা চলে গেলে দলে অবশ্যই শূন্যতা সৃষ্টি হবে।’
তাহলে কী শুভেন্দু অধিকারীর পথ অনুসরণ করে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যাও মন্ত্রীত্ব ছাড়বেন? দল ছেড়ে তিনিও কী ভোটের আগে বিজেপিমুখী? নেত্বের বিরুদ্ধে উষ্মা-প্রকাশ, তাঁর সমর্থনে ফ্লেক্স দেকতে পাওয়ার পর আপাতত এই প্রশ্নেই তৃণমূলের মধ্যেই জোর চাপানউতোর শুরু হয়েছে।
যদিও রবিবারও রাজ্যের নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, 'রাজীব তৃণমূলেই রয়েছে। ভাল কাজ করছেন। সচেতন মন্ত্রী। অনেকেই তাঁকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন। আশা করব রাজীব তাতে বিভ্রান্ত হবেন না।'
কিন্তু এতেই বিতর্ক মিটছে না। উল্টে রাজ্য রাজনীতির বিতর্কের কেন্দ্রে এখন শাসক দলের মন্ত্রী-নেতাদের অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ-বিক্ষোভ।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন