তাঁর পিতার স্মৃতিচারণায় বিতর্ক বাড়ালেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়। শর্মিষ্ঠা তাঁর প্রকাশিত হতে চলা বই, 'ইন প্রণব, মাই ফাদার: এ ডটার রিমেম্বার্স'-এ ঘুরিয়ে কংগ্রেস হাইকমান্ডের নেতৃত্বকেই খোঁচা দিয়েছেন। বইটিতে ২০০৪ সালে তাঁর বাবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে লিখেছেন শর্মিষ্ঠা। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বাবার নাম সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীর তালিকায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। তিনি সেব্যাপারে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। জবাবে প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'না, তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী বানাবেন না।'
কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখপাত্র শর্মিষ্ঠা ২০২১ সালে রাজনীতি ছেড়েছেন। সদ্য প্রকাশিত হতে চলা বইয়ে তিনি জানিয়েছেন, এতকিছুর পরও প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কোনও রাজনৈতিক বিদ্বেষ ছিল না। তিনি না সোনিয়া গান্ধী, না সোনিয়া গান্ধীর মনোনীত মনমোহন সিং- কারও বিরুদ্ধেই বিদ্বেষ পোষণ করতেন না। বইটির প্রকাশক রূপা পাবলিকেশন। এই বইয়ে সোনিয়া গান্ধীর পাশাপাশি রাহুল গান্ধীর ব্যাপারেও লিখেছেন শর্মিষ্ঠা। রাহুলের ক্যারিশমা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি তাঁকে কার্যত রাজনৈতিক বোধহীন বলেই কটাক্ষ করেছেন। এমনটাই জানা গিয়েছে প্রকাশক সূত্রে।
আরও পড়ুন- ‘শৌর্য দিবস’-এ কাশ্মীর নিয়ে উথালপাতাল করা প্রস্তাব শাহর, শীতেই উত্তপ্ত সংসদের অধিবেশন?
এই বইয়ে নেহরু-গান্ধী পরিবারের চারপাশে ঘোরাফেরা করা ব্যক্তিদের সংস্কৃতিকেও তুলে ধরেছেন লেখিকা। প্রণব মুখোপাধ্যায় ভারতের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিদেশমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতিও হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন দেশের ১৩তম রাষ্ট্রপতি। ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট, ৮৪ বছর বয়সে প্রণব মুখোপাধ্যায় মারা যান।
বইয়ে শর্মিষ্ঠা লিখেছেন, ২০০৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়া একক বৃহত্তম দল কংগ্রেসের সভানেত্রী হিসেবে সোনিয়া গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তে জোটের অংশীদারদের সম্পূর্ণ সমর্থন ছিল। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সেই অনুরোধ সোনিয়া গান্ধী ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত শুধু কংগ্রেসই নয়। জোটের অংশীদার, গোটা দেশকে অবাক করে দিয়েছিল। তাঁর বইয়ের শিরোনামের অধ্যায়, 'দ্য পিএম ইন্ডিয়া নেভার হ্যাড'-এ শর্মিষ্ঠা আরও লিখেছেন, 'প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সোনিয়ার সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের পরে, মিডিয়া এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রের মধ্যে তীব্র জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছিল!'
আরও পড়ুন- ‘নেহেরুর ঐতিহাসিক ভুলেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সৃষ্টি’, ভয়ঙ্কর তোপ অমিত শাহ’র
তাঁর বইয়ে শর্মিষ্ঠা লিখেছেন, সোনিয় গান্ধী না-বলে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য নাম উঠেছিল ড. মনমোহন সিং ও প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর বাবা কয়েকদিন ভয়ংকর ব্যস্ত থাকায় তিনি তাঁকে ফোন করেছিলেন বলে জানিয়েছেন শর্মিষ্ঠা। তিনি লিখেছেন, 'আমি উচ্ছ্বসিতভাবে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন কি না।' জবাবে প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'না, তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী করবেন না। মনমোহন সিং হবেন।' সঙ্গে যোগ করেছিলেন, 'কিন্তু, তাঁর দ্রুত ঘোষণা করা উচিত। এই অনিশ্চয়তা দেশের জন্য ভালো নয়।' শর্মিষ্ঠার দাবি, প্রধানমন্ত্রী হতে না-পারায় তাঁর বাবার মধ্যে কোনও হতাশা জন্ম নেয়নি। হলে, সেটা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ডায়েরিতে ধরা থাকত। কেন প্রধানমন্ত্রী হতে না-পারায় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে হতাশা জন্ম নেয়নি, তার কারণও জানিয়েছেন শর্মিষ্ঠা। তিনি লিখেছেন, তাঁর বাবা এক সাংবাদিককে বলেছিলেন, সোনিয়া গান্ধী তাঁকে প্রধানমন্ত্রী করবেন, সেই প্রত্যাশা তাঁর কোনওদিনই ছিল না।
রাহুল গান্ধী সম্পর্কেও প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ভাবনা নিজের বইয়ে তুলে ধরেছেন শর্মিষ্ঠা। তাঁর বাবার যে ডায়েরির ভিত্তিতে তাঁর এই বই লেখা, সেখানে শর্মিষ্ঠা লিখেছেন, ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে সেবছর আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর রাহুল গান্ধীর সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাসভবনে সাক্ষাৎ হয়। লেখিকার দাবি, সেই সাক্ষাতের পর প্রণব মুখোপাধ্যায় ডায়েরিতে লিখেছেন যে, রাহুল গান্ধী অত্যন্ত বিনীয়। তিনি নানা প্রশ্নও করেন। তবে, রাহুল গান্ধীর শেখার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে প্রশ্ন আছে। একইসঙ্গে, শর্মিষ্ঠা জানিয়েছেন যে প্রণব মুখোপাধ্যায় ডায়েরিতে লিখে গিয়েছেন, রাহুল 'এখনও রাজনৈতিকভাবে পরিপক্ক' নয়। বইটি ১১ ডিসেম্বর প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকীতে প্রকাশ পেতে চলেছে।