‘ঘুরে দাঁড়ানো’র চ্যালেঞ্জে তৃণমূলকে সাফল্য এনে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন পিকে। দলকে চাঙ্গা করতে তৃণমূল সুপ্রিমোর আশা-ভরসা প্রশান্ত কিশোরই। উনিশের নির্বাচনী ধাক্কা সামলে তৃণমূলকে ‘ঘুরে দাঁড়ানোর’ দাওয়াই দিতে এবার মমতা বাহিনীর জেলা সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠক সারলেন পিকে। শুক্রবার তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠক থেকে তৃণমূলের জেলা সভাপতিদের একগুচ্ছ পরামর্শ দিলেন নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট। ওই বৈঠকে ছিলেন যুব তৃণমূল সভাপতি তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। তবে তাঁরা নেহাতই ছিলেন দর্শকের ভূমিকায়। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি তৃণমূলের ‘চালিকাশক্তি’ হয়ে উঠছেন প্রশান্ত কিশোর।
আরও পড়ুন: প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে বৈঠক সেরে বিধায়কদের দাওয়াই মমতার
জেলা তৃণমূল সভাপতিদের কী পরামর্শ দিলেন প্রশান্ত কিশোর?
* বুথ স্তর থেকে জনমত যাচাইয়ের জন্য ১৫ জনের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। যেকোনও তথ্য দলকে জানাবেন ওই ১৫ জন। প্রথমে জেলা নেতৃত্বকে জানাতে বলা হয়েছে। পরে জেলা নেতৃত্ব দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানাবেন। কী কী তথ্য? এলাকায় মানুষের কোনও ক্ষোভ আছে কি না, মানুষের কী চাহিদা, এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী, এসবই মূলত দলকে জানাবেন ওই ১৫ জন। প্রয়োজনে ওই ১৫ জনের সঙ্গে প্রশান্ত কিশোর সরাসরি কথা বলতেও পারেন।
* বিরোধী দলের জন্য জায়গা ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন পিকে। উল্লেখ্য, গত পঞ্চায়েত ভোটে ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, এর জেরে দলের শক্তি পরীক্ষা করা যায়নি। ফলে তৃণমূলকে সেই ফল ভুগতে হয়েছে লোকসভা নির্বাচনে। কার্যত এই শিক্ষা নিয়েই প্রশান্ত কিশোর বিরোধী দলের জন্য জায়গা ছাড়ার কথা বললেন বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের আরেক অংশের ব্যাখ্যা, বিরোধী দলের জন্য জায়গা ছাড়লে যদি দেখা যায় মানুষ বিরোধী পক্ষের দিকে ঝুঁকছে, তাহলে তাঁদের দলে টেনে নিয়ে আনা প্রয়োজন। এই পর্যবেক্ষণ থেকেই পিকের এমন পরামর্শ বলে মনে করা হচ্ছে।
* সূত্রের খবর, প্রশাসনের কাছে কোনওরকম হস্তক্ষেপ না করার পরামর্শ দিয়েছেন পিকে। একইসঙ্গে কোনওরকম রাজনৈতিক সংঘর্ষ, বাক-বিতণ্ডায় না জড়ানোর কথাও বলেছেন পিকে।
* দলের নেতাদের জনসংযোগ বাড়ানোয় জোর দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, দু’দিন আগে তৃণমূল ভবনে বিধায়কদের বৈঠকেও জনসংযোগ বাড়ানোর কথা বলেছিলেন মমতা।
আরও পড়ুন: যাঁরা কাটমানি নিয়েছেন এবং দিয়েছেন, দু’জনেই দোষী: পার্থ
প্রসঙ্গত, ২১ জুলাইয়ে তৃণমূলের শহিদ দিবসের মেগা সমাবেশের আগে দলের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বেশ কিছু দাওয়াই দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। নিজেদের কেন্দ্রে বিধায়দের জনসংযোগ বাড়ানোর কথা যেমন বলেছেন দলনেত্রী, তেমনই আলটপকা মন্তব্য করা থেকে বিধায়কদের বিরত থাকার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে আগামী ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে প্রত্যেক বিধায়কের থেকে ৪ জনের নামের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শেই এই নির্দেশ মমতা দিয়েছেন বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের।