Advertisment

Narendra Modi in Bengal: মেদিনীপুর কার্যত ২০১৯ নির্বাচনী প্রচারের ড্রেস রিহার্সাল

Narendra Modi Farmers' Rally in West Bengal: নাটকীয়ভাবে সামিয়ানা ভেঙে পড়া থেকে শুরু করে কালো পতাকা, পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি, সবই ঘটেছে প্রধানমন্ত্রীর সভা ঘিরে। তিনি অবশ্য প্রত্যাশিতভাবেই কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দিলেন, এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে তুলোধোনা করলেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

সম্প্রতি মেদিনীপুরে সভা করে গেলেন নরেন্দ্র মোদী। ফাইল ছবি

একেবারেই ২০১৯ লোকসভা ভোটের আগাম দামামা বাজিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রত্যাশিতভাবেই, মেদিনীপুরে কলেজ ময়দানে কৃষক কল্য়ান সমাবেশে কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা যেমন দিলেন, পাশাপাশি সিন্ডিকেট রাজ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে তুলোধোনা করতেও ছাড়লেন না। উল্লেখ্য, ৪৯ বছর আগে মেদিনীপুরে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তারপর এই প্রথম কোন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর পদধূলি পড়ল জেলায়।

Advertisment

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য় শুরু হওয়ার কিছু পরেই জনসভার ছাউনির একটা বড় অংশে মড়মড় আওয়াজ শুরু হয়। ভাঙতে শুরু করে প্য়ান্ডেল। তাই দেখে সভার সেই অংশের লোকজন দৌড়তে শুরু করেন। ছাউনি ভেঙে এবং দৌড়াদৌড়ির সময় প্রাথমিক খবর অনুযায়ী জনা ত্রিশেক মানুষ জখম হন, যদিও আহতদের সকলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি। তখনকার মত বক্তব্য় বন্ধ করেননি মোদী, কিন্তু সভা শেষে, যখন আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন তড়িঘড়ি হাসপাতালে যান মোদী নিজেও, জখমদের খোঁজখবর নেন।

publive-image আহতদের সঙ্গে দেখা করতে মেদিনীপুর হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজস্ব চিত্র

ঘটনার পরপরই বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেন, প্য়ান্ডেল ভাঙার ঘটনায় ৩০ জন জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্য়ে ২০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ১০ জনের চিকিৎসা চলছে মেদিনীপুর হাসপাতালে। কিন্তু আমাদের শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ৯০ জন আহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৭৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, এবং চিকিৎসাধীন তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলা হয়েছে। মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট তন্ময় কুমার পাঁজা জানান, হাসপাতালে আপাতত ভর্তি রয়েছেন ৫৬ জন পুরুষ এবং ২০ জন মহিলা, এবং ১৪ জন আহতকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর মুক্তি দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার রাজ্যই বহন করবে।

publive-image ভেঙে পড়ল সামিয়ানা। এই ঘটনায় অন্তত ৪৪ জনের আহত হওয়ার খবর রয়েছে। এক্সপ্রেস ছবি: পার্থ পাল

প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে আরও কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটে। শহরে ঢোকার সময় তাঁকে কালো পতাকা দেখান সিপিএম দলের কর্মীরা, পরে তাঁদের একাংশ বিক্ষোভও প্রদর্শন করেন। এছাড়াও খড়গপুরের চৌরঙ্গী অঞ্চলে কিছু বিজেপি কর্মী পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে মারধর করেন বলে খবর। ঘটনাটি ঘটে কর্মীদের জনসভায় আসার সময়, যখন পুলিশ তাঁদের একটি বাস আটকায় বলে জানা গিয়েছে, এবং বাদানুবাদ হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়। এই ঘটনার জেরে পুলিশ এফআইআর দায়ের করেছে, যদিও এখন অবধি কাউকে গ্রেফতার করা হয় নি।

publive-image নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সিপিএম-এর। নিজস্ব চিত্র

এদিন সভায় সকাল থেকেই বৃষ্টি বাদলা উপেক্ষা করে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ময়দান ছাড়াও মেদিনীপুর শহর অচল হয়ে গিয়েছিল বিজেপি কর্মী সমর্থকদের ভিড়ে। বিজেপরি বক্তব্য়, মেদিনীপুর এবং আশপাশের জেলার কর্মী-সমর্থকরা এসেছিলেন সভায়। এদিকে তৃণমূল কংগ্রেস সভার ভিড়কে কটাক্ষ করে বলেছে লোক নিয়ে আসা হয়েছে প্রতিবেশী দুই রাজ্য় থেকে।

সভার শুরুতে সাধারণের মন জয় করতে বাংলায় বক্তব্য় শুরু করেন মোদী। কৃষকদের ভিড় দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "কৃষক উপেক্ষিত থাকলে দেশ এগোতে পারে না। গ্রামাঞ্চলের উন্নতি এবং সমৃদ্ধির জন্য় কৃষকদের উন্নতি প্রয়োজন। দেশের কৃষকদের আয় বাড়ানোর সঙ্কল্প নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।" আদিবাসীদের আশ্বস্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, তাঁরা বাঁশগাছের এলাকায় থাকেন অথচ তাদেরই বাঁশ ব্য়বহার করার অনুমতি নেই, তা হতে পারে না। রাজ্য় সরকার আলুচাষি-সহ অন্যান্য কৃষকদের পাশেও দাঁড়ায় না বলেও তিনি মন্তব্য় করেন। কৃষকদের ভোটের ওপর ভর করে ২০১৯ লোকসভার নির্বাচনের বৈতরণী পার করতে তৎপর গেরুয়া শিবির, কাজেই কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা স্বাভাবিক।

publive-image প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হলো মেদিনীপুরের বিখ্যাত মাদুর। এক্সপ্রেস ছবি: পার্থ পাল

তবে কৃষক কল্য়ান সমাবেশ হলেও তৃণমূল কংগ্রেসই ছিল প্রধানমন্ত্রীর আক্রমনের মূল লক্ষ্য়। সিন্ডিকেট নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে কড়া ভাষায় আক্রমন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরাজ্য়ের সমস্ত কিছুই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করছে বলে মন্তব্য় করেন তিনি। বলেন, "পশ্চিমবঙ্গে সিন্ডিকেটের অনুমতি ছাড়া কিছু করার উপায় নেই। ব্য়বসায়ী সংস্থা, হাসপাতাল, কলেজ, সিন্ডিকেট ছাড়া হবে না। বাড়ি বানাতে গেলেও সিন্ডিকেটের কাছ থেকেই সিমেন্ট, বালি কিনতে হবে। কিষান ফসল বিক্রি করতে চাইলেও সিন্ডকেটের অনুমতি চাই। ছোট-বড় ব্য়বসা, সবেতেই সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সবটাই জানে রাজ্য়বাসী। সিন্ডিকেটের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত তৃণমূল এবং রাজ্য প্রশাসন। বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথের জমি সিন্ডিকেট দিয়ে কলঙ্কিত করছে তৃণমূল কংগ্রেস।"

সমাবেশে সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় রাজ্যব্যাপী হিংসা নিয়েও সরব হন মোদী। প্রশ্ন তোলেন গণতন্ত্র নিয়েও। তাঁর বক্তব্য়, ৩৪ বছরের বামপন্থী শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছেন রাজ্য়ের মানুষ, কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনকালে রাজ্য়ের হাল আরও খারাপ হয়েছে। তাই মুক্ত করতে হবে এই রাজ্য়কে।

publive-image কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া উপহার। এক্সপ্রেস ছবি: পার্থ পাল

লালগড় পিরকাটা গ্রাম থেকে এসেছিলেন কিশোর মাহতো, রামেশ্বর মান্ডি। কিশোর আগে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জানান, "তৃণমূল কংগ্রেস গ্রাম বা গ্রামবাসীদের উন্নয়নের জন্য় কিছুই করেনি। গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছি। গ্রামের অনেক লোক এসেছে প্রধানমন্ত্রীর ভাষন শুনতে। জঙ্গলমহলের আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য় বিজেপি কাজ করবে বলে তাদের আশা।"

ঝাড়গ্রামের লক্ষ্মী মান্ডি, বুড়ি মুর্মুরাও সপরিবারে এসেছিলেন সভায়। বস্তুত, জনসভায় জঙ্গলমহলের মানুষের ভিড় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য়। বিজেপির বক্তব্য়, কলেজ ময়দান ছাপিয়ে রাস্তায় যে ভিড় ছিল, তার অধিকাংশ মুখই ছিল ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার মানুষের। পশ্চিম মেদিনীপুরের মানুষ তো ছিলেনই। পুলিশের বক্তব্য়, এই ময়দানে লোক ধরে সত্তর হাজার। কিন্তু ময়দান ভরে যাওয়ার পরও শহরে ভিড় ছিল। শেষ গুনতি অনুযায়ী, সভায় এক লক্ষের বেশী মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন।

তৃণমূল কংগ্রেস মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় এবং সর্বভারতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও' ব্রায়ানের দাবি, এদিনের সভায় ঝাড়খন্ড, ওড়িষ্য়া থেকে লোক নিয়ে এসেছে বিজেপি। বেশ কিছু পাটনার গাড়ি দেখা গিয়েছে মেদিনীপুর শহরে। কর্পোরেটদের টাকায় এই সভা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কৃষকদের কিছুই লাভ হবে না। এই দুই নেতার কথায়, "বিজেপি নেতারা সিন্ডিকেটের বিষয়টি ভাল জানেন। কারণ দেশে ধর্মীয় গোঁড়ামি, গণপিটুনি, দুর্নীতি, অত্য়াচারের সিন্ডিকেট চালাচ্ছে বিজেপি নিজেই।"

bjp west bengal politics narendra modi trinamul
Advertisment