উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে পড়ে থেকে দলের হয়ে একটানা প্রচার চালিয়ে গিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। ফি দিন গো-বলয়ের সবচেয়ে বড় রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে এক প্রান্ত ঘুরে প্রচার সেরেছিলেন। রাজনৈতিক কর্মাকাণ্ডের পাশাপাশি যখনই কোথাও অনিয়মের কথা শুনেছেন দৌড়ে গিয়েছেন তিনি। কথা বলেছেন নিপীড়িত পরিবারগুলির সঙ্গে। তবে ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে তাঁর আর দেখা নেই। দিল্লি ঘেঁষা এই রাজ্যের ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে আর যাননি সোনিয়া-তনয়া। প্রিয়াঙ্কার অনুপস্থিতি এবং হাইকম্যান্ডের চরম ঔদাসীন্যে যোগী-রাজ্যে কার্যত 'ঘুমের দেশে' কংগ্রেসের নেতারা।
এবার মূলত রাজীব-কন্যার নেতৃত্বেই উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমছিল কংগ্রেস। রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের একাংশকে সঙ্গে নিয়ে ভোটের প্রচারে কার্যত ঝড় তুলেছিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা। বিভিন্ন ইস্যুতে ভোটের আগে যোগী আদিত্যনাথ নেতৃত্বাধীন সরকারকে তুলোধনা করতে দেখা যেত সোনিয়-কন্যাকে। মহিলা এবং যুবকদের নিয়ে উত্তরপ্রদেশে দলকে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। তবে এত কিছুর পরেও এবারও উত্তরপ্রদেশে দাগ কাটতে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস।
রাজ্যের মোট ৪০৩টি আসনের মধ্যে মাত্র ২টিতে জয় পেয়েছেন হাত-প্রার্থী। শতাংশের হিসেবে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র ২ শতাংশ ভোট পেয়েছে কংগ্রেস। উত্তরপ্রদেশের এবারের নির্বাচন রাজনৈতিক দিক থেকেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশেষ করে কংগ্রেসের কাছে এবারের নির্বাচন ছিল একটা মস্ত চ্যালেঞ্জ। তবে সেই চ্যালেঞ্জ নিতেও ব্যর্থ হয়েছে হাত-শিবির। রাজ্যে কংগ্রসের নেতারা এবার ভালো ফলের আশায় বুক বেঁধেছিলেন। তবে ভোট ময়দানে দলের এমন হতাশজনক পারফরম্যান্সে তাঁরাও এখন মনোবল হারিয়েছেন। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বচনের আগে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোট ছিল কার্যত সেমিফাইনাল। তবে সেই সেমিফাইনালেও দাগ কাটতেই ব্যর্থ কংগ্রেস।
আরও পড়ুন- কয়লা-চুরিতে CBI ডাক এড়ালেন শওকত, গরু পাচারে সমন পেয়েও গরহাজির অনুব্রত
উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোট এবার প্রিয়াঙ্কার নেতৃত্বেই লড়েছিল কংগ্রেস। তবে বর্তমানে একেবারে মুখে কুলুপ সোনিয়া-তনয়ার। সোশ্যাল মিডিয়াতেও উত্তরপ্রদেশ ইস্যুতে ইদানীং কোনও মন্তব্য করতে দেখা যায় না প্রিয়াঙ্কাকে। যদিও উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের আগের ছবিটা ছিল একদম উল্টো। সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সক্রিয় থাকতেন প্রিয়াঙ্কা। প্রায় প্রতিদিনই যোগী সরকারের একাধিক নীতির বিরুদ্ধে সরব হতেন তিনি। বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অভিযোগ তুলে প্রিয়াঙ্কার চাঁচাছোলা আক্রমণ সেই সময়ে বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছিল।
উত্তরপ্রদেশে লখিমপুর খেরির ঘটনা নিয়ে যোগী সরকারের বিরুদ্ধে অলআউট প্রতিবাদের ক্ষেত্রে দলকে সামনে থেকে
নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। গত বছরের অক্টোবরে লখিমপুর খেরিতে চার কৃষক এবং এক সাংবাদিক নিহত হওয়ার পর তিনিও সেখানে যেতে চেয়েছিলেন। তবে সীতাপুর গেস্ট হাউসেই পুলিশ তাঁকে আটক করে। সেই সময় পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে প্রবল তর্কাতর্কি জুড়ে দিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা।
আরও পড়ুন- ‘সংসদীয় বিশেষাধিকারে হস্তক্ষেপ করছে সিবিআই’, লোকসভার অধ্যক্ষকে কড়া চিঠি চিদাম্বরম-পুত্রের
সংবাদমাধ্যমের দৌলতে প্রিয়াঙ্কার রণংদেহী সেই মূর্তি দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। মূলত প্রিয়াঙ্কার উপর্যুপরি প্রতিবাদের জেরেই তদানীন্তন যোগী সরকার তাঁকে ও তাঁর দাদা রাহুল গান্ধী-সহ দলের অন্য নেতাদের লখিমপুর খেরিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছিল।
তবে সেব এখন অতীত। বিধানসভা ভোটে জিতে আবারও উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি। কংগ্রেসের হাল শোচনীয়। মাত্র ২টি আসন নিয়ে টিমটিম করে জ্বলছে প্রাচীন এই দলটি। ভোটের ফল প্রকাশের পর উত্তরপ্রদেশে আর যাননি প্রাঙ্কা গান্ধী। প্রিয়াঙ্কার অনুপস্থিতিতে উত্তরপ্রদেশে কার্যত 'ঘুমের দেশে' পাড়ি দিয়েছে দলও।
ভোটে দলের খারাপ ফলের জেরে রাজ্যের প্রধান হিসেবে অজয় কুমার লাল্লুকে সরিয়েছিল কংগ্রেস। তবে তারপর দু'মাস কেটে গেলেও লাল্লুর জায়গায় উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। রাজ্যে কংগ্রেসের নেতাদের মনোবল এখন তলানিতে। ঘুরে দাঁড়ানো তো কোন ছাড়, আগামী দিনে রাজ্যে দলের অস্তিতত্ব টিকিয়ে রাখাই এখন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের কাছে মস্ত চ্যালেঞ্জ, এমনই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
Read full story in English