সহসভাপতি ১৮ জন, সাধারণ সম্পাদক ৩৩ জন, সম্পাদক ৪৯ জন। না এটা কোনও রাজনৈতিক দলের সর্বভারতীয় কমিটি নয়, মায় রাজ্য কমিটিও নয়। ১৫ পাতার জেলা কমিটি। এই পরিসংখ্যানই বুঝিয়ে দিচ্ছে পুরুলিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন জেলা কমিটির বহর। সব মিলিয়ে সদস্য ১৮৪ জন। প্রায় একই অবস্থা বাঁকুড়া ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির। এখনও রাজ্যের অধিকাংশ জেলা কমিটি ঘোষণা বাকি রয়েছে। দলের অভ্যন্তরেই প্রশ্ন উঠেছে কেন এমন ঢাউস জেলা কমিটি গঠন? অভিজ্ঞ মহলের প্রশ্ন, এভাবে কি ক্ষোভ নিরসন করা সম্ভব?
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৩ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই কমিটিতে নানা ভাবে একাধিক নেতৃত্বকে স্থান দেওয়া হয়েছে। তবে নতুন জেলা কমিটিগুলি তাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। জুলাইতে ঘোষণা হওয়ার কথা ছিল জেলা কমিটিগুলির। নতুন কমিটি গঠন নিয়ে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে রাজ্য কমিটির একাধিক বৈঠক হয়েছে। এখনও পর্যন্ত তিনটে জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে কমিটির গঠন নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে দলের অভ্যন্তরেই।
বাঁকুড়া জেলা কমিটিতে ১৮ জন সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ২০ জন এবং সম্পাদক পদে রয়েছেন ১২ জন। এখানে ব্লক ও শহর রয়েছে ২৫টি। দলের মুখপাত্র দিলীপ আগরওয়াল বলেন, "নতুন ও পুরনোদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৯টি ব্লকের সভাপতি পরিবর্তন করা হয়েছে।" অন্যদিকে পুরুলিয়ায় ব্লক ও শহর রয়েছে মোট ২৩টি। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র নবেন্দু মাহালী বলেন, "আগে পদাধিকারী এত ছিল না। সামনে নির্বাচন আছে। সবাইকে কাজে সুযোগ দেওয়ার জন্য় এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৫টি ব্লকের সভাপতি পরিবর্তন হয়েছে।"
পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার তুলনায় ব্লকের সংখ্যা অনেকটাই কম পশ্চিম বর্ধমানে। সেখানেও বিন্দুমাত্র বহর কমেনি তৃণমূলের ঘোষিত জেলা কমিটির। বরং তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। পশ্চিম বর্ধমানে সহসভাপতি পদে রয়েছেন ৪৩ জন। সাধারণ সম্পাদক ২০ জন ও সম্পাদক ২৯ জন। মাত্র ১৮টি ব্লকের এই জেলায় তিন ধাপের পদাধিকারী 'মাত্র' ৯২ জন। কেন এই জেলায় এতজন পদে রয়েছেন? জেলার তৃণমূলের দুই মুখপাত্র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় ও অশোক রুদ্রের স্পষ্ট জবাব, "কমিটি যাঁরা করেছে তাঁরাই এর জবাব দিতে পারবে।"
প্রশ্ন উঠেছে এই বিপুল সংখ্যক সহসভাপতির নাম স্বয়ং সভাপতির মনে থাকবে তো? ব্যালান্স করার কথা বলা হচ্ছে। রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, আদৌ সেই ব্যালান্স এভাবে পদে বসিয়ে রেখে টিকিয়ে রাখা সম্ভব কি? এবার জেলা কমিটির বৈঠকের আয়োজনেও কম ঝক্কি পোহাতে হবে না। সব প্রশ্নের জবাব মিলবে ২০২১ বিধানসভার নির্বাচনে ফলে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন