লোকসভা নির্বাচনে ‘অপ্রত্যাশিত’ ফলের পর সংগঠন নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা নির্বাচনের আগে লোকসভা নির্বাচনের ধাক্কা সামলে ‘ঘুরে দাঁড়াতে’ মরিয়া তৃণমূলনেত্রী। সেই লক্ষ্যেই ইতিমধ্যে দলীয় নেতৃত্বে বেশ কিছু রদবদল করেছেন তিনি। এবার সেই প্রক্রিয়ায় আরও গতি এনে ডানা ছাঁটা হল রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষের। কোচবিহার জেলার সভাপতির পদ থেকে এদিন সরিয়ে দেওয়া হল রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে। তাঁর পরিবর্তে কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি করা হচ্ছে বিনয়কৃষ্ণ বর্মনকে। জেলার কার্যকারী সভাপতির পদে আসতে চলেছেন পার্থপ্রতিম রায়।
উল্লেখ্য, কোচবিহারে এবার বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে ঘাসফুল শিবির। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিশীথ প্রামাণিকের কাছে হেরে গিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী পরেশ অধিকারী। শুধু তাই নয়, কোচবিহারে এবার লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভাওয়াড়ি ফলাফলের নিরিখে ৫টি বিধানসভাতেই পিছিয়ে মমতার দল। এমনকি, নিজের বিধানসভা কেন্দ্রতেও দলকে জয় এনে দিতে পারেননি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। ফলে, রবীন্দ্রনাথের এই 'শাস্তি' কিছুটা প্রত্যাশিতই ছিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অন্যদিকে আবার দলীয় নেতত্বেরই একাংশের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্কও ভাল নয় বলে জানা যায়। উদয়ন ঘোষ, মিহির চক্রবর্তী, হিতেন বর্মনদের মতো দলের নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি হয়েছে রবীন্দ্রনাথের। ভোটের কাজে দলের সব নেতাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করেননি বলেও অভিযোগ উঠেছে রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে। কোচবিহারে দলের বিপর্যয়ের জন্য তাই রবীন্দ্রনাথকেই কাঠগড়ায় তুলছে তৃণমূল নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন: ‘ঘুরে দাঁড়াবই’, দলকে চাঙ্গা করতে দাওয়াই মমতার
লোকসভা ভোটের পর তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে বেশ কিছু সাংগঠনিক রদবদলের কথা ঘোষণা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। নদিয়া জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয় রাজ্যের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। হাজি নুরুলকে সরিয়ে সংখ্যালঘু সেলের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে। অন্যদিকে, মালদা জেলার দায়িত্ব পান গোলাম রব্বানি ও সাধন পাণ্ডে। এছাড়া, শুভেন্দু অধিকারীকে সব জেলাই নজরে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন দলনেত্রী।
প্রসঙ্গত, এবারের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় জোর ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল। মমতার 'বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশে'র স্বপ্নে ফুঁটেছে পদ্ম কাঁটা। ভোটের ফল প্রকাশের পর কালীঘাটে পর্যালোচনা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় সংগঠনে জোর দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এমনকি তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বের থেকে দলের দায়িত্বই যে এবার থেকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে সামলাবেন, সে কথাও জানিয়েদেন। অন্যদিকে, একের পর এক তৃণমূল বিধায়ক, নেতারা যেভাবে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন, তাও চিন্তায় রেখেছে তৃণমূলকে। তাই ঘর সামলে গড় সামলানোই এখন প্রকৃত চ্যলেঞ্জ তৃণমূলের।