শুক্রবার একটি প্রেস কনফারেন্সে ভাষণ দিয়ে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, জিএসটির হার এবং 'গণতন্ত্রের মৃত্যু' নিয়ে মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। সেই সময় তিনি বলেছিলেন যে বিজেপি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার কারণে যাবতীয় বৈধতা দাবি করতে পারে না। কারণ, 'হিটলারও ক্ষমতায় এসেছিলেন। তিনিও নির্বাচনে জিতেছিলেন। কিন্তু, তিনি কীভাবে নির্বাচনে জিতেছেন? জার্মানির প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁর হাতে ছিল। আমাকে পুরো কাঠামো দিন। আমি দেখাব কীভাবে নির্বাচনে জিততে হয়।' কীভাবে হিটলার ক্ষমতায় এসে প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাঁর হাতের পুতুল বানিয়েছিলেন?
দি গ্রেট ডিপ্রেশন
শিল্পোন্নত বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক মন্দা হল, গ্রেট ডিপ্রেশন। ১৯২৯ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত এই গ্রেট ডিপ্রেশন স্থায়ী হয়েছিল। ১৯২৯ সালের অক্টোবরের শেয়ার বাজারের বিপর্যয়ের সাথে যার শুরু হয়েছিল। জার্মানি সেই সময় বেকারত্বের দ্রুত বৃদ্ধি দেখেছিল। জার্মানির ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি বা নাৎসি দল লক্ষ লক্ষ বেকার ভোটারদের অসন্তোষকে হাতিয়ার করেছিল। ১৯২৯ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত, নাৎসি দলের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ১৯২৮ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রায় ৮ লক্ষ ভোট পেয়েছিল নাৎসি দল। ১৯৩২ সালের জুলাই মাসে তা ১৪০ লক্ষে পৌঁছেছিল। যা মোট ভোটের ৩৮ শতাংশ ছিল।
কিন্তু, ১৯৩২ সালের শেষের দিকে জার্মানিতে বেকারত্ব কমতে শুরু করলে, ১৯৩২ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে নাৎসি পার্টির ভোটও কমে এসে প্রায় ১২০ লক্ষ বা মোট ভোটের ৩৩ শতাংশ হয়ে যায়। ১৯২১ সালে হিটলার নাৎসি পার্টির নেতা নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৯২৩ সালে তিনি একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছিলেন। জেলে থাকাকালীন মেইন ক্যাম্ফ ('আমার সংগ্রাম')-এর প্রথম খণ্ডের অনুলিখনে সহায়তা করেছিলেন। ১৯২৩ সালে তাঁর প্রারম্ভিক মুক্তির পর, হিটলার নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার সংকল্প করেছিলেন। এই সময়ই তিনি বিভিন্ন সংস্থাকে একত্রিত করেছিলেন।
১৯৩২ সালের নির্বাচন
১৯৩২ সালে দুটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল। পার্লামেন্ট বা রাইখস্টাগের নির্বাচন। জার্মান ব্যবস্থায়, কেউই সরাসরি জিততে পারেনি। তবে হিটলার সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন। নাৎসি পার্টি জনগণ, ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্ট্যান্ট, শহর ও গ্রামাঞ্চল, নারী-পুরুষ, যুবক ও বৃদ্ধের বিভিন্ন অংশ থেকে সমর্থন পেয়েছিল। হিটলারের একটি জোট গঠনের প্রয়োজন ছিল। কারণ, তাঁর ৫০ শতাংশ আসনের প্রয়োজন হয়েছিল।
নতুন সরকার গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতিরও তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো দরকার ছিল। কিছু ডানপন্থী এবং কনজারভেটিভ সদস্য, যাঁদের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রবেশাধিকার ছিল, তাঁরাই হিটলারকে সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে প্রেসিডেন্টকে রাজি করায়। তাঁরা ভেবেছিল যে তাঁরা হিটলারকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। সেই জন্যই রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করেছিল।
হিটলার সরকারের মধ্যে শীর্ষ পদ, চ্যান্সেলরশিপের ওপর জোর দিয়েছিলেন। যদিও, তাঁর নাৎসি পার্টির মন্ত্রিসভায় অল্পসংখ্যক আসন ছিল। অবশেষে, একটি চুক্তি হয়। প্রেসিডেন্ট পল ভন হিন্ডেনবার্গ হিটলারকে আমন্ত্রণ জানান তিন সদস্যের জোটের প্রধান হিসেবে সরকার গঠনের জন্য। হিটলার ১৯৩৩ সালের জানুয়ারির শেষে জার্মানির চ্যান্সেলর হন।
আরও পড়ুন- করোনার সুনামি গতি, রক্তচক্ষু দেশের ৬ রাজ্য, অবিলম্বে সতর্কতার নির্দেশ কেন্দ্রের
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩
১৯৩৩ সালের ৩১ জানুয়ারি, হিটলার সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে তাঁর অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য নতুন করে নির্বাচনের আহ্বান জানান। ১৯৩৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, প্রচারের শেষ দিনগুলোর মধ্যে, জার্মান পার্লামেন্ট ভবন রাইখস্টাগ রহস্যজনকভাবে আগুনে পুড়ে যায়। সরকার আতঙ্ক ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। বিশেষ করে নাৎসিদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে। যার ফলে ৪,০০০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। নাৎসিরা অভিযোগ করে যে কমিউনিস্টরা 'ওয়েমার প্রজাতন্ত্রকে উৎখাত করার' জন্য একটি জাতীয় বিদ্রোহের পরিকল্পনা করছে।
অগ্নিকাণ্ডের পরের দিন, প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ 'জার্মান জনগণের সুরক্ষার জন্য জরুরি নির্দেশনামা' স্বাক্ষর করেন। যা নাৎসিদের বিরোধীদের প্রতি নজর রাখার আইনি কর্তৃত্ব সরকারকে দেয়। নাৎসিদের বিরোধীদেরকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এই নির্দেশনামায় মৌলিক ব্যক্তিগত স্বাধীনতা যেমন বাকস্বাধীনতা, সম্পত্তির মালিকানার অধিকার এবং কারাদণ্ডের আগে বিচারের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। নাৎসি সরকারের সন্ত্রাসের জন্য অনেকেই ভোট দিতে ভয় পেয়েছিলেন। কিছু লোক আবার ভয়ে ভোট দিয়েছিলেন।
Read full story in English