সত্তরোর্দ্ধ সোমেন মিত্রের ওপরেই আস্থা রাখল কংগ্রেস হাই কম্যান্ড! কিছু দিন আগেই তিনি দিল্লির এইমস থেকে চিকিৎসা করিয়ে এসেছেন। কিন্তু 'ছোড়দাকে' রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি করে দলের মরা গাঙে জোয়ার আনতে চাইছে দল। ভেলকি দেখাতে তৎপর সোমেনবাবুও। অধীর চৌধুরীর তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি চরম বিরোধীতায় লাগাম টানতেই কি হঠাৎ করেই সভাপতি বদল করা হয়েছে? এই চর্চা চলছে রাজ্য রাজনৈতিক মহলে। সোমেন মিত্র এদিন প্রদেশ কংগ্রেস ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন একেবারে কূটনৈতিক ধাঁচে। একথাও বলতে ছাড়েননি, এরাজ্যে কংগ্রেসকে তৃণমূল কংগ্রেসই "গিলে খেয়েছে"। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই যে তাঁকে সভাপতি করা হয়েছে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কোনও সন্দেহ নেই।
"২০ বছর আগে পদ ছেড়েছিলাম, এবার আমাকে সভাপতি করে ফের আস্থা ও ভরসা রেখেছেন হাই কম্যান্ড। তাই কৃতজ্ঞ তাঁদের প্রতি।" এদিন সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই অনুগত সৈনিকের মত একথা বলেন সোমেনবাবু। তিনি আবেদন জানিয়েছেন, দল ছেড়ে যাওয়া ও বাড়িতে বসে থাকা দলীয় কর্মীদের ফের কংগ্রেসে যোগ দিতে। তার স্পষ্ট কথা, "এই মুহূর্তে রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষয়িষ্ণু শক্তি। আগে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে।"
কিন্তু রাজ্যে আন্দোলনের কোনও দিশা দিতে পারেননি নব্য কংগ্রেস সভাপতি। কার সঙ্গে জোট, সিপিএমের সঙ্গে কী অবস্থান সব ক্ষেত্রেই দলের ছোড়দার একটাই জবাব, হাই কম্যান্ড যে ভাবে বলবে সেভাবে এগোবে রাজ্য কংগ্রেস। অর্থাৎ একেবারে স্পষ্ট, ২০১৯ সালে লোকসভাকে মাথায় রেখেই সভাপতি বদল করেছেন রাহুল গান্ধী।
সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে কংগ্রেসের প্রয়োজন তৃণমূলকে। সেক্ষেত্রে অধীর চৌধুরী একেবারেই বেমানান, মনে করেন দলের একাংশ। তাই গান্ধী পরিবার বেছে নিয়েছে দলের পুরনো মিত্র সোমেনকে। যিনি এদিন তাঁর বক্তব্যে ঘুরপথে অধীরকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তাঁর মতে, “দল পরিবারের মত। ভুল বোঝাবুঝি থাকবে। কিন্তু সকলকে নিয়ে চলতে হয়।’’ কারণ, সোমেনপন্থীদের অভিযোগ, অধীর দলে কারও সঙ্গে আলোচনা করতেন না। একাই সিদ্ধান্ত নিতেন। অধীরকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন দলের শীর্ষস্থানীয় এক শ্রেণির নেতা।
একসময়ের ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেসের আগ্রাসন নীতি কংগ্রেসকে গ্রাস করেছে। ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সাময়িক লাভ হয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের ঘর ভেঙেছে। যাঁরা দলবদল করছেন, তাঁদের কোনও নৈতিকতা নেই। ভয় ও প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে কংগ্রেস বিধায়করা দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। বিধায়ক পদও ছাড়ছেন না।" সভাপতি হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পর অধীর চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর বিকেল পর্যন্ত কোনও কথা হয়নি বলেই জানান সোমেনবাবু। নতুন কমিটিতে অধীরকে প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। কো-অর্ডিনেশন কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। এই প্রথম চারজনকে কার্যকরী সভাপতি রাখা হয়েছে কমিটিতে।
অনেক কাল পর প্রদেশ কংগ্রেস ভবনও গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছে। সভাপতির নাম ঘোষণা না নির্বাচন-জয় তা বোঝাই দায় হয়ে উঠেছিল। দলে নতুন সভাপতির নাম ঘোষণায় তাসা পার্টি নিয়ে রাজ্য দপ্তরে হাজির হয়েছেন নেতা-কর্মীরা। সবুজ আবিরে মাখামাখি করেছেন তাঁরা। এদিনের এই দৃশ্যের প্রতিফলন রাজনীতির ময়দানে কতটা পরিলক্ষিত হয় সেটাই দেখার।