কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির অনুরোধ ফিরিয়ে দলের সর্বভারতীয় সভাপতির দায়িত্ব ছাড়ার বিষয়ে এখনও কার্যত স্থিরসংকল্প রাহুল গান্ধী। সোমবার কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বকে রাহুল ফের জানিয়েছেন, তাঁর পরে কে সভাপতি হবেন, তা দ্রুত স্থির করা হোক। লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর তিনি আর ওই পদে থাকতে চান না।
সূত্রের খবর, কংগ্রেসের সিনিয়র নেতাদের রাহুল বার্তা দিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁর উত্তরসূরী পাওয়া যাচ্ছে, তিনিই দায়িত্ব পালন করবেন। তবে তিনি দ্রুত পদত্যাগ করতে চান। কংগ্রেস নেতাদের একাংশের মতে, রাহুলের মন্তব্যেই তাঁর অনীহা স্পষ্ট। আবার দলের অন্য অংশের বক্তব্য, শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে চূড়ান্ত পারস্পরিক অবিশ্বাসের মনোভাব রয়েছে। তাই রাহুলের উত্তরসূরী নির্বাচন করা অত্যন্ত সমস্যাজনক।
নির্বাচনী বিপর্যয়ের পরই রাহুল জানিয়েছিলেন, তিনি তার দায় মাথায় নিয়ে দায়িত্ব ছাড়তে চান। এরপরই বিভিন্ন প্রদেশের কংগ্রেস সভাপতিরা কেউ পদত্যাগ করেছিলেন, কেউ দায়িত্ব ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, রাহুল তাঁর মতো করে গোটা দলকে ঢেলে সাজান। কংগ্রেস সূত্রের খবর, এই পদত্যাগ বা পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশের মাধ্যমে ওই নেতারা রাহুলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।
ইতিমধ্যেই ঝাড়খন্ডের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অজয় কুমার পদত্যাগ করেছেন। পাঞ্জাবের সুনীল জাখার, অসমের রিপুন ভোরা, মহারাষ্ট্রের অশোক চহ্বান পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির কোষাধ্যক্ষ আহমেদ প্যাটেল এবং পার্টির সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল সোমবার রাহুলের সঙ্গে দেখা করেন। সূত্রের খবর, কংগ্রেস সভাপতি তাঁদের জানিয়েছেন, তিনি কোনোভাবেই আর দলের শীর্ষ পদে থাকতে চান না। তাঁর উত্তরসূরী খোঁজা হোক। সূত্রের খবর, রাহুল সংসদে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি দেশজুড়ে কংগ্রেসকে নতুন করে গড়ে তুলতে চান।
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি রাহুলের পদত্যাগের ইচ্ছা খারিজ করে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাঁর উত্তরসূরী খোঁজার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। রাহুলের পদত্যাগ করা উচিত কিনা, তা নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব কার্যত দু-ভাগ হয়ে গিয়েছেন। একপক্ষের মতে, দলের এই দুঃসময়ে রাহুল সরে দাঁড়ালে ভুল বার্তা যাবে। অন্যপক্ষের বক্তব্য, কংগ্রেস সভাপতি নিজে অনিচ্ছুক থাকলে তাঁকে জোর করে ধরে রাখার চেষ্টা অর্থহীন।
দলের একটি অংশের মত, যদি রাহুল কংগ্রেসের খোলনলচে বদলে ফেলার আশ্বাস পান, তাহলে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতেও পারেন। গত শনিবারই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি রাহুলকে জানিয়েছিল, তিনি প্রয়োজন মনে করলে দলের সার্বিক কাঠামোগত পরিবর্তন করতে পারেন।
ইতিমধ্যেই রাজস্থানে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীন সংকট মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। অশোক গেহলটের বিরুদ্ধে রাহুলের অভিযোগ, তিনি দলের স্বার্থের চেয়ে নিজের সন্তানদের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। কর্ণাটকেও কংগ্রেস-জেডিএস সরকারের অন্দরে নানা ধরনের টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজওয়ালা রুদ্ধদ্বার বৈঠকের গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য সংবাদমাধ্যমের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। গেহলট প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, "কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি যৌথভাবে যাবতীয় সংকটের মোকাবিলা করবে। কোনও বিশেষ ব্যক্তি সম্পর্কে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে সার্বিকভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।" তাঁর কথায়, "ওয়ার্কিং কমিটিতে প্রত্যেকেই স্বাধীনভাবে নিজেদের মতপ্রকাশ করতে পারেন। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে অনুরোধ করেছে ওয়ার্কিং কমিটি।"