দেড় বছর আগে তাঁর ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে অভিযোগ পেয়েছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এবার সে নিয়ে রাহুল গান্ধীকে জবাবদিহি করতে বলা হল। এর জন্য কংগ্রেস সভাপতিকে সময় দেওয়া হয়েছে ১৪ দিন।
বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ সুব্রহ্মণিয়ম স্বামী ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। এতদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি।
সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে দ্বিতীয়বার তাঁর অভিযোগ নিয়ে চিঠি দেওয়ার পর সোমবার রাহুল গান্ধীর কাছে নোটিস পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার কংগ্রেস এ সম্পর্কিত অরিজিনাল সার্টিফিকেট প্রকাশ করেছে এবং দাবি করেছে যে এ থেকে স্পষ্ট রাহুল গান্ধী একজন ভারতীয়।
এর আগে রাহুল গান্ধী সংসদের এথিক্স কমিটির কাছে জানিয়েছেন, যে তিনি কখনওই ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পাননি বা সে ব্যাপারে চেষ্টাও করেননি। তিনি জানিয়েছিলেন যে তাঁর পরিচয় তিনি একজন ভারতীয়।
মঙ্গলবার আমেথিতে রাহুলের হয়ে প্রচার করতে গিয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেছেন, "আমি এধরনের উদ্ভট কথা কখনও শুনিনি। সবাই জানে রাহুল গান্ধী এখানে জন্মেছে, এখানে বড় হয়েছে। সারা হিন্দুস্থান জানে রাহুল গান্ধী একজন হিন্দুস্থানী... ও ওদের আগে এখানে জন্মেছে... ওদের আগে এখানে বড় হয়েছে... এটা কী ধরনের উদ্ভট ব্যাপার?"
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট এবং নির্বাচন কমিশন রাহুল গান্ধীর নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।
এর আগে প্রাক্তন সিবিআই আধিকারিক তথা আইনজীবী এমএল শর্মা এ ব্যাপারে সিবিআই তদন্তের দাবি করে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। ২০১৫ সালে তা খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তু এবং বিচারপতি অমিতাভ রায়কে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ জনস্বার্থ মামলার সঙ্গে যেসব নথি দেওয়া হয়েছিল তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং সেগুলি কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে সে নিয়েও আপত্তি তোলে।
অতি সম্প্রতি, গত ২০ এপ্রিল আমেথির এক নির্দল প্রার্থী রিটার্নিং অফিসারের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ জানান। ২২ এপ্রিল তাঁর অভিযোগ খারিজ হয়ে যায়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নোটিসের বিষয়টি লঘু করে দেখাতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, "কোনও সাংসদ যদি কোনও মন্ত্রকে অভিযোগ জানান, তাহলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হয়। এটা বড় কিছু নয়, সাধারণ ব্যাপার।"
ঠিক এ সময়কেই কেন বেছে নেওয়া হল সে প্রশ্নের জবাবে রাজনাথ সিং বলেন, "সংসদেও এ ব্যাপারে প্রশ্ন উঠেছে। সুব্রহ্মণিয়ন স্বামী মন্ত্রকেও বেশ কয়েকবার এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছেন, তার জেরেই এই পদক্ষেপ।"
স্বামীর চিঠি উদ্ধৃত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বলেছে, "২০০৩ সালে ব্রিটেনে নথিকৃত একটি সংস্থার ডিরেক্টরদের নামের মধ্যে রাহুল গান্ধীর নামও রয়েছে।" মন্ত্রকের নোটিস অনুসারে স্বামীর অভিযোগ বলা হয়েছে, "ওই কোম্পানির ২০০৫ সালের ১০ অক্টোবর এবং ২০০৬ সালের ৩১ অক্টোবর যে বার্ষিক রিটার্ন জমা দিয়েছে সেখানে রাহুল গান্ধীর নাম ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, এবং তাঁর জন্ম তারিখ দেওয়া হয়েছে, ১৯ জুন, ১৯৭০।"
নোটিসে বলা হয়েছে "২০০৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারির আবেদনে যে সংস্থার নামোল্লেখ করা হয়েছে, তাতে আপনাকে ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ চিঠি পাওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে মন্ত্রকের কাছে এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য দিতে অনুরোধ করা হচ্ছে।"
সুব্রহ্মণ্যন স্বামী এর আগে দাবি করেছিলেন রাহুল গান্ধী ইতালির নাগরিক, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী ব্রিটিশ নাগরিক। তিনি রাহুলের সংসদের সদস্যপদ কেড়ে নেওয়ার দাবিও তুলেছিলেন।
Read the Full Story in English