বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো দেশের সমস্যাগুলিকে তুলে ধরতে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে শুরু হল 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'। আজ মণিপুরের থৈবাল জেলা থেকে শুরু হয় রাহুলের দ্বিতীয় জনসংযোগ যাত্রা। যাত্রা শুরুর আগে রাহুল গান্ধী মনিপুরের থাউবায় খংজোম ওয়ার মেমোরিয়াল পরিদর্শন করেন।
মণিপুরের থৌবাল থেকে শুরু হল কংগ্রেসের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা। উপস্থিত রয়েছেন কংগ্রেসের জাতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, দলের সাংসদ রাহুল গান্ধী সহ অন্যান্য নেতারা। রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা প্রসঙ্গে অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, যে 'যাত্রা সফল না অসফল সেটা আলাদা বিষয়, এটি একটি আদর্শিক লড়াই। ন্যায়ের জন্য এই পদযাত্রা মণিপুর থেকে শুরু হচ্ছে। শুধুমাত্র কংগ্রেসের আদর্শই দেশকে বাঁচাতে পারে। এই পদযাত্রার সঙ্গে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।"
এদিনের সমাবেশ থেকে বিজেপিকে খাড়গের পরামর্শ, 'মূল্যবোধের জন্য লড়াই করুন, কিন্তু ভোটের জন্য ধর্মকে কাজে লাগাবেন না'। খাড়গে এদিন বিজেপিকে নিশানা করে বলেন "মূল্যবোধ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ভ্রাতৃত্বের জন্য কঠোর লড়াই চালিয়ে যান। কিন্তু ভোটের জন্য ধর্মের নামে লোকেদের উত্তেজিত করবেন না। ভোটের জন্য কোন প্রদর্শনী করবেন না," ।
কংগ্রেস রবিবার (১৪ জানুয়ারি) মণিপুর থেকে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' শুরু করেছেন। তার আগে এক সমাবেশের আয়োজন করেছে কংগ্রেস। যাত্রার মাধ্যমে বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি এবং সামাজিক ন্যায়বিচার সম্পর্কিত বিষয়গুলিকে লোকসভা নির্বাচনের আগে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আনার চেষ্টা করবে দল। মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলের কাছে থৈবাল থেকে শুরু হয়ে যাত্রা মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে মুম্বইয়ে শেষ হবে। মল্লিকার্জুন খড়গে ভারত জোড়া ন্যায় যাত্রার আগে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি ঘরে পৌঁছে যাব, যতক্ষণ না আমরা ন্যায়বিচার পাব!
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে বলেছেন, "ন্যায়বিচারের অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা প্রতিটি ঘরে পৌঁছে যাব! আজ ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা শুরু হবে মণিপুরের থৌবাল থেকে। প্রিয় রাহুল গান্ধী জি, আমরা ১৫ টি রাজ্যের মধ্য দিয়ে ৬৭০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেব। আমরা এই জাতীয় গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেব।"
তিনি আরও বলেন, “যাত্রা সমাজের প্রতিটি অংশের মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করবে। কৃষক, শ্রমিক, দলিত, আদিবাসী, অনগ্রসর শ্রেণী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দোকানদার, মহিলা, প্রাক্তন সেনা, ক্রীড়াবিদ, শিক্ষক, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি গোষ্ঠী, এনজিও, স্বনির্ভর গোষ্ঠী সকলের সমস্যার কথা শোনার পাশাপাশি ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে জারি থাকবে দলের লড়াই। কংগ্রেস দেশের আসল সমস্যার ওপর আলোপাত করার লক্ষ্যেই এই যাত্রা বের করেছে। বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, জাতীয় নিরাপত্তা, মহিলাদের অধিকার, অনগ্রসর শ্রেণি শোষণ, জার শুমারি, অর্থনৈতিক বৈষম্যকে তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা জনগণের কথা শুনব। এজন্য ন্যায়বিচারের লড়াই প্রয়োজন।"
বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) সাসপেন্ড করা লোকসভা সাংসদ দানিশ আলি কংগ্রেসের ভারত জোড়া ন্যায় যাত্রায় অংশ নিতে মণিপুরে পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, "আমি কংগ্রেসের এই যাত্রায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি কারণ আমি মনে করি যে আমি ঐক্য, ন্যায়বিচারের সবচেয়ে বড় প্রচারে যোগ না দিলে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হব।"
রাহুল গান্ধী, খাড়গে ছাড়াও হেভিওয়েট কংগ্রেসের নেতারা আজকের এই যাত্রায় অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট, রাজীব শুক্লা, সালমান খুরশিদ, ভাপেন্দ্র সিং হুডা এবং অভিষেক মনু সিংভি। 'ভারত জোড় ন্যায় যাত্রা' প্রসঙ্গে, কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, "রাহুল গান্ধী পূর্ব থেকে পশ্চিমে আরেকটি যাত্রা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কারণ উত্তর থেকে দক্ষিণে, তিনি ইতিমধ্যেই তিনি তা সম্পন্ন করেছেন।"
আজ মণিপুর থেকে শুরু হয়েছে রাহুলের ভারত ন্যয় যাত্রা। পৌঁছবেন ১৫ রাজ্যের ১০০ জেলায়। রাহুল-খড়গে সহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। মণিপুর থেকে শুরু হয় এই জনসংযোগ যাত্রা। এরপর তা পৌঁছবে নাগাল্যান্ডে। সেখান থেকে এক এক করে অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয় হয়ে রাহুল গান্ধী পদযাত্রা করতে আসবেন পশ্চিমবঙ্গে। এরপর বিহারে পৌঁছবেন। সেখান থেকে ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, গুজরাট হয়ে মহারাষ্ট্রে পৌঁছবে ন্যয় যাত্রা। সেখানেই শেষ হবে এই যাত্রা। লোকসভা নির্বাচনের আগে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলির উপর আলোকপাত করার জন্য কংগ্রেসের এই যাত্রা। রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা স্রেফ নির্বাচনী চমক নয়। কংগ্রেস শনিবার বলেছে যে এই যাত্রার মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ১০ বছরের “অন্যায় কাল” এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা হবে।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেছেন যে দেশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল এটি এমন একটি আদর্শের মুখোমুখি হচ্ছে যা মেরুকরণ, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং রাজনৈতিক কর্তৃত্ববাদে বিশ্বাস করে। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ‘অমৃত কাল’-এর সোনালি স্বপ্ন দেখান। কিন্তু গত ১০ বছরের বাস্তবতা কী? – ‘অন্যয় কাল’। ‘অমৃত কাল’ নিয়ে বড় বড় গর্ব করার সময় ‘অন্যয় কাল’-এর কোনও উল্লেখ করা হয়নি”। পাশাপাশি রমেশ বলেন, গত ১০ বছরে সংঘটিত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবিচারের কথা মাথায় রেখে এই যাত্রার আয়োজন করা হচ্ছে,”।
কংগ্রেস বলেছে যে সরকার সংসদে জনগণের সমস্যাগুলি উত্থাপন করার সুযোগ দেয়নি বলে তারা এই যাত্রা বের করছে এবং এই উদ্যোগটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্বের নীতিগুলি পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। যদিও কংগ্রেস বারবার জোর দিয়েছে যে এটি একটি নির্বাচনী যাত্রা নয়, তাও কংগ্রেস আসন্ন ২২ জানুয়ারি রাম মন্দির অভিষেক অনুষ্ঠানের বিপরীতে বিজেপি সরকারের ব্যর্থতার উপর আলোকপাত করতে চায়। রাহুল গান্ধী শুক্রবার বলেছিলেন যে আবেগগত বিষয়গুলিকে রাজনৈতিকভাবে “অপব্যবহার” করা হচ্ছে এবং দেশের জনগণের সঙ্গে “বিশ্বাসঘাতকতা” করছে মোদী সরকার। দেশের আসল বিষয়গুলি থেকে মনোযোগ সরানো হচ্ছে। এক্স-এর একটি পোস্টে তিনি বলেছেন, “তরুণদের ভাবতে হবে আমাদের স্বপ্নের ভারতের পরিচয় কী হবে? জীবনযাত্রার মান নাকি শুধু আবেগ? মণিপুর ছাড়াও, যাত্রা চারটি উত্তর-পূর্ব রাজ্য – নাগাল্যান্ড , অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয় এবং অসমকে কভার করবে। এরপর যাত্রা পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ছত্তিশগড়, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে যাবে।
মণিপুরের থৈবাল জেলা থেকে শুরু হওয়া ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা ১৫ টি রাজ্যের ১০০টি লোকসভা আসনের মধ্য দিয়ে যাবে।লোকসভা নির্বাচনের আগে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলি তুলে ধরা হবে কংগ্রেসের এই ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার মাধ্যমে।
কার জন্য 'ন্যায়বিচার' দাবি করছেন রাহুল? প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। বিজেপি সাংসদ কে লক্ষ্মণ বলেছেন, "প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে দেশের দ্রুত উন্নয়ন ঘটছে। কংগ্রেস এটা মেনে নিতে পারছে না। দেশের ১৪০ কোটি জনসংখ্যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আছে। তারা কংগ্রেসকে গণতান্ত্রিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই যাত্রা লোকসভা নির্বাচনের আগে স্রেফ কংগ্রেসের চমক ছাড়া আর কিছুই নয়"।
বিজেপি মনে করে মণিপুর ভারতের অংশ নয়- রাহুল গান্ধীর অভিযোগ
বিজেপিকে কটাক্ষ করে রাহুল গান্ধী বলেন, "আমি ২৯ শে জুন মণিপুরে এসেছিলাম এবং সেই সফরে যা দেখেছি এবং শুনেছি তা আগে কখনও দেখিনি। মণিপুরে এত মানুষ নিহত হয়েছেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদী একবারের জন্যও মণিপুর সফর করেন নি। সম্ভবত বিজেপি এবং আরএসএসের জন্য মণিপুর ভারতের অংশ নয়।"