মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে বৃহস্পতিবারই প্রথম মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর, তাঁর বক্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী মণিপুরে মহিলাদের নগ্ন করে হাঁটানো এবং তাঁদের শ্লীলতাহানির যে ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে, সেই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। কিন্তু, এই ব্যাপারে বলতে গিয়ে তিনি কংগ্রেসশাসিত দুই রাজ্য রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ের প্রসঙ্গও টেনেছেন। এই দুই কংগ্রেসশাসিত রাজ্য শীঘ্রই নির্বাচনের পথে হাঁটবে। স্বভাবতই তার আগে প্রধানমন্ত্রী এই দুই রাজ্যের নাম মণিপুরের নারকীয় ঘটনার সঙ্গে উচ্চারণ করায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ওই দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট টুইট করেছেন, 'আমাদের কাছে মহিলাদের নিরাপত্তা এবং মর্যাদার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই। যোধপুরে নৃশংস গণধর্ষণের পর মাত্র দুই ঘণ্টায় তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যেখানে বিজেপিশাসিত মণিপুরে এই লজ্জাজনক ঘটনায় মাত্র একজন অভিযুক্তকে ধরতেই ৭৭ দিন সময় নিয়েছে। আসলে, অপরাধের জবাব দেওয়ার জন্য কংগ্রেস নেয় দুই ঘণ্টা, বিজেপি নেয় ৭৭ দিন।'
গেহলট গত ১৬ জুলাই যোধপুরের জয় নারায়ণ ব্যাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এক নাবালিকা দলিত মেয়েকে তিন ছাত্রের গণধর্ষণের অভিযোগের কথা উল্লেখ করছিলেন। মেয়েটির যে পুরুষ বন্ধুকে, অপরাধ করার সময় একজন নাবালক, বন্দি করে রেখেছিল বলে অভিযোগ, ঘটনার পরপরই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। গেহলট অভিযোগে আরও জানিয়েছেন যে বিজেপির 'অবহেলার' কারণেই মণিপুরে হিংসায় ১৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি হিন্দিতে টুইট করেছেন, 'এটা খুবই দুঃখজনক যে মণিপুরে হিংসা থামছে না। গোটা দেশ এই নিয়ে উদ্বিগ্ন। মণিপুরকে দেখে রাজস্থানের মানুষ জিজ্ঞেস করছে যে বিজেপি সরকার কি জানে না কীভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হয়?'
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই বৃহস্পতিবার ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলও মণিপুর ইস্যুতে মোদী তাঁর রাজ্যের নাম উচ্চারণ করায় তীব্র সমালোচনা করেছেন। বিধানসভায় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল বলেন, 'গত তিন মাস ধরে মণিপুর জ্বলছে। কিন্তু, মোদীজি একবারের জন্যও কথা বলেননি। প্রথমবারের মতো ঘটনার কথা বললেন তিনি। কিন্তু, মণিপুরের কথা শুধু বলেননি। সঙ্গে, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানের কথাও বলেছেন। এমনকী তিনি বা অমিত শাহ যখন ছত্তিশগড়ে এসেছিলেন, তখনও তাঁরা এখানকার আইন-শৃঙ্খলাকে কোনও সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেননি। কিন্তু, এখন এই দুই রাজ্যে নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় তিনি মণিপুরকে রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ের সঙ্গে তুলনা করছেন। তিনি উত্তরপ্রদেশের আদালত এবং হাসপাতালের প্রাঙ্গণে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে বা মধ্যপ্রদেশের আদিবাসীদের চিকিত্সার বিষয়ে একটি শব্দও বলেননি।'
আরও পড়ুন- বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে আবেদন শুনবে সুপ্রিম কোর্ট, কারণটা কী?
হিংসা অব্যাহত থাকলেও মোদী কেন মণিপুর সফর করেননি, সেই প্রশ্নও তোলেন বাঘেল। মোদী সম্পর্কে এই ব্যাপারে ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'তিনি বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন এবং ছত্তিশগড় আর কর্ণাটকে (তাঁর দলের পক্ষে) প্রচার করেছিলেন, কিন্তু মণিপুরে যাননি। তিনি শুধু মণিপুর ইস্যু থেকে মানুষকে বিচ্যুত করতে চান। তিনি মণিপুরকে শান্তিপূর্ণ রাজ্যের সঙ্গে তুলনা করছেন। তাঁর উচিত মিথ্যা কথা বলা বন্ধ করা।' তাঁর প্রথাগত প্রাক-সংসদ অধিবেশনের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী মোদি বৃহস্পতিবার জানান যে তিনি মণিপুরের ঘটনায় ব্যথিত। সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন যে, 'রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মণিপুর বা দেশের যে কোনও অংশই হোক না-কেন, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং মহিলাদের সম্মান করা রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকা উচিত।'