রাজস্থানে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের নতুন মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন? এ প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। এই প্রথম যখন রাজস্থানে 'মুখ্যমন্ত্রীর মুখ' নিয়ে ফাঁপরে বিজেপি। এর আগে প্রতিবারই দলের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ঘোষণা করেই নির্বাচন হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর মুখ নিয়ে দলের অভ্যন্তরে কোনো সমস্যা হয়নি।
রবিবার ফলাফল ঘোষণার পর এক সপ্তাহ কেটে গেলেও রাজস্থানের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হচ্ছেন তা জানা যায়নি। বেশ কয়েকটি নাম রাজনৈতিক মহলে আলোচিত হলেও এখনও পর্যন্ত বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনও চূড়ান্ত ঘোষণা করা হয়নি। যদিও ইতিমধেই নবনির্বাচিত বিজেপি বিধায়কদের বিভিন্ন শিবিরে বিভক্ত হবার বেশ কিছু খবর পাওয়া গেছে। দুষ্মন্ত সিং-এর মদতে বিধায়কদের বলপূর্বক আটকে রাখা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, দুষ্মন্ত সিং রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার ছেলে।
বসুন্ধরা রাজের আগে ভৈরোঁ সিং শেখাওয়াত ছিলেন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর মুখ। যেখানে, গত চারটি বিধানসভা নির্বাচনে ২০১৮, ২০১৩, ২০০৮ এবং ২০০৩-এ বসুন্ধরা রাজে ছিলেন দলের মুখ্যমন্ত্রী মুখ। কিন্তু, ২০২৩ সালের নির্বাচনে সম্পুর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখের ওপর ভরসা করেই হয়েছে নির্বাচনী লড়াই। দলের সাত হেভিওয়েট সাংসদও মাঠে নেমেছিলেন, যার মধ্যে চারজন জিতেছেন এবং বিধায়ক হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী। এই কারণেই ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন তা এখনও ঠিক করতে পারেনি বিজেপি।
প্রথমেই জেনে নিন মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রতিদ্বন্দ্বী কারা?
দু'বার রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী থাকা বসুন্ধরা রাজে এবারও মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রতিদ্বন্দ্বী। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই বিধায়কদের সঙ্গে দেখা করছেন রাজে। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও দেখা করেছেন তিনি। রাজপরিবার থেকে আসা দিয়া কুমারীও মুখ্যমন্ত্রী পদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী। এই তালিকায় বাবা বালকনাথের নামও রয়েছে, তবে শনিবার তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তা অস্বীকার করেছেন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, অর্জুন মেঘওয়াল, অশ্বিনী বৈষ্ণবও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। রাজস্থানের বিরোধীদলীয় নেতা রাজেন্দ্র সিং রাঠোরের নামও মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে অন্তর্ভুক্ত ছিল, কিন্তু তিনি নির্বাচনে হেরে যান।
মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত কী হয়েছে?
৩ রা ডিসেম্বর নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর রাজস্থানে সক্রিয় হয়ে ওঠেন বসুন্ধরা রাজে। তিনি বিধায়কদের নৈশভোজের জন্য তাঁর বাসভবনে ডাকেন। অনেক বিধায়ক রাজেকে মুখ্যমন্ত্রী করার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। বসুন্ধরার ছেলে ও বিজেপি সাংসদ দুষ্যন্তের বিরুদ্ধে বিধায়কদের আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। রাজে এবং দুষ্যন্ত দিল্লিতে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গে দেখা করেন। অমিত শাহের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন রাজে। অন্যদিকে বাবা বালকনাথও অমিত শাহ ও নাড্ডার সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেছেন। গত শুক্রবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি সিপি জোশীও নাড্ডার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। শনিবার, নাড্ডা একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন এবং বিধায়কদের সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনা করেছেন।
এরপর কি ঘটতে যাচ্ছে?
নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে, বিজেপি হাইকমান্ড রাজস্থানের জন্য তিন পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে। রাজনাথ সিং, বিনোদ তাওড়ে এবং সরোজ পান্ডে। রবিবার জয়পুর পৌঁছবেন তাওড়ে এবং সরোজ পান্ডে। এই সময়, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ নিয়ে বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সূত্রের খবর পর্যবেক্ষকরাও বিধায়কদের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান আলোচনা করতে পারেন। রবিবার দলীয় কার্যালয়ে দিনভর চলবে দফায় দফায় বৈঠক।সূত্রের খবর ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজস্থানের নতুন সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা শপথ নিতে পারবেন।
রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনে ১৯৯ টি আসনের নির্বাচনে ১১৫ টি আসনে জয়ী হয়ে স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও, এক সপ্তাহ পরেও মুখ্যমন্ত্রীর মুখে সাসপেন্স বজায় রেখেছে দল। এর পিছনে অনেক বড় কারণ রয়েছে। রাজনৈতিক মহলে খবর রয়েছে যে রাজস্থানের নেতৃত্ব বসুন্ধরা রাজে ছাড়া অন্য কোনও নেতৃত্বের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে এবং তাই মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন বিলম্বিত হচ্ছে।
সূত্রের খবর, বসুন্ধরা, যিনি ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দলের পরাজয়ের পরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী মনোভাব নিয়েছিলেন। তবে এবার নির্বাচনী জয়ের পর তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি ছাড়তে চান না। রাজে শুধুমাত্র দলের সভাপতি জেপি নাড্ডার সাথে দেখাই করছেন না, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহকেও তার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এমন পরিস্থিতিতে দলের প্রথম লক্ষ্য হল ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দলের বিপুল জয়ের পর ২৪-এ প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা। এমন পরিস্থিতিতে বসুন্ধরাকে খুব একটা পাত্তা দেবে না কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। তাই মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে এমন মুখকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে, যিনি নিজের প্রভাব কাজে লাগিয়ে দলের ওপর 'চাপের রাজনীতি' করতে পারবে না।রাজস্থানে রাজনাথ সিংকে পর্যবেক্ষক করেছে বিজেপি। তাঁর পাশাপাশি সরোজ পান্ডে এবং বিনোদ তাওড়েকেও পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সোমবারের মধ্যে বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তারা।