রাজস্থান বিধানসভায় এবার নয়া সমীকরণ। ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টি (বিটিপি)-এর পক্ষ থেকে রবিবার বলা হয়েছে অশোক গেহলট সরকার থাকবে কি না সে বিষয়ে বিটিপি এখন কিংমেকার পদে রয়েছে।
রবিবার দলের সভাপতি মহেশভাই সি ভাসভা সংবাদসবংস্থা পিটিআইকে বলেন, "২০০ জনের বিধানসভায় আমাদের দুটি বিধায়ক আছে ঠিকই। কিন্তু আমরাই কিংমেকার।" তিনি বলেন, আদিবাসী অঞ্চলের উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত যে দাবিগুলি মেটানো হবে সেখানে দলটি এখন গেহলট সরকারকে সমর্থন করছে।
Rajasthan: Chief Minister Ashok Gehlot leaves from Hotel Fairmont in Jaipur.
Congress MLAs supporting CM Gehlot are staying at the hotel. pic.twitter.com/VVbkcboAw1— ANI (@ANI) July 19, 2020
এদিকে, মরু রাজ্যে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের ঝড় ক্রমশ চড়া হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে সংখ্যাতত্ত্বের হিসেব-নিকেষ। এই পরিস্থিতে শনিবারই রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়কের সমর্থনের কথা জানিয়ে এসেছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। জানা যাচ্ছে, শক্তি প্রমাণে আগামী বুধবারই বিধানসভার অধিবেশন ডাকতে পারেন গেহলট।
বিজেপি অবশ্য জানিয়েছে তাদের তরফে আস্থা ভোটের দাবি জানানো হয়নি। বিরোধী দলনেতা জিসি কাটারিয়া বলেছেন, 'বিজেপি কখনও আস্থা ভোটের দাবি করেনি। আমরা কংগ্রেসের কোন্দল উপভোগ করছি। যখ মনে হবে সঠিক সময়ে ঠিক সেই সময়ই আমরা পদক্ষেপ করব। অযথা এই সময়ে এই বিষয়ে মাথা গলানোর কোনও কারণ নেই।'
১০৯ বিধায়কের সমর্থন মুখ্যমন্ত্রী অশোক হেগলটের সঙ্গে রয়েছে। কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রথম থেকেই এই দাবি জানিয়ে এসেছে। যদিও 'বিদ্রোহী' শচীন পাইলট হুঙ্কারেরই সুরেই বলেছিলেন সংখ্যালঘিষ্ট হয়ে পড়েছে কংগ্রেস সরকার। নবীন-প্রবীণ নেতৃত্বের এই টানাপোড়েনের মাধেই দলীয় আইন শৃঙ্খলা ভাঙায় পাইলটকে গত সপ্তাহেই উপমুখ্যমন্ত্রী ও প্রদেশ সভাপতির পদ থেকে ছেঁটে দিয়েছে হাত শিবির। মন্ত্রীত্ব গিয়েছে তাঁর অনুগামী বলে পরিচিত বিধায়কদেরও। এমনকী বিধায়ক পদ খারিজের নোটিস দেওয়া হয়েছে দলের তরুণ নেতা সহ ১৯ জনকে। এতেই বিবাদ গড়িয়েছে আদালতে। স্পিকারের নোটিসকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজস্থান হাইকোর্টে আবেদন করেন 'বিদ্রোহী' শিবিরের নেতা। আদালতের নির্দেশে আগামী মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পাইলট সহ ১৯ বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবেন না স্পিকার।
কিন্তু, হাইকোর্টের রায় যাই হোকনা কেন, এখানে মামলা শেষের পরেও শীর্ষ আদালতে বিবাদ পৌঁছতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এইসবের মাঝেই শুক্রবার ভাইরাল দুটি অডিও টেপকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় রাজস্থানের রাজনীতিতে। অশোক গেহলট সরকারকে ফেলে দেওয়ার যড়যন্ত্র করছে বিজেপি। দু’টি ভাইরাল অডিও টেপ তুলে ধরে শুক্রবার বিজেপির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছে কংগ্রেস। 'ষড়যন্ত্রে'র জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতের বিরুদ্ধে এফআইআর জারি করা হয়।
পাল্টা বিজেপিও হাত শিবিরের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ তোলে। গোটা ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানায় গেরুয়া শিবির। ফোনে আড়ি পাতাকাণ্ড নিয়ে এবার রাজস্থান সরকারের থেকে বিস্তারিত জানতে চাইল স্বারাষ্ট্রমন্ত্রক। মুখ্যসচিবকে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
ফোনে আড়ি পাতাকাণ্ডে এদিন কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা অভিষেক মণু সিংভি বিজেপিকে কটাক্ষ করে টুইটে লেখেন, 'বিধায়ক কেনাবেচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ, এতে জড়িত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। পুলিশি তদন্ত, এফআইআর ও সিআরএল প্রক্রিয়া অব্যাহত। সিআরএল প্রক্রিয়া শেষের পর বিজেপি সিবিআই তদন্তের দাবি জানাতে পারে। কিন্তু স্বারাষ্ট্রমন্ত্রক ইতিমধ্যেই নাক গলিয়েছে। এখন সিবিআইয়ের হাতে মামলা গেলেই অনেকে ক্লিনচিট পেয়ে যাবে, সত্য ব্যাহত হবে।' কংগ্রেসের প্রশ্ন, 'কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যখন দাবি করছেন যে অডিওতে শুনতে পাওয়া কণ্ঠস্বর তাঁর নয়, তাহলে নমুনা পরীক্ষায় তাঁর এত ভায় কেন?'
আরও পড়ুন- ২১শের আগে ২১ জুলাই হাতছাড়া, আশঙ্কার প্রহর গুনছে তৃণমূল
এতকিছুর মধ্যেও শাসক-বিদ্রোহী-বিরোধী শিবিরের নেতাদের মাথায় ঘুরছে সংখ্যার খেলা। ২০০ আসনের রাজস্থান বিধানসভায় সরকার ধরে রাখতে প্রয়োজন ১১ বিধায়কের সমর্থন। কংগ্রেসের মোট আসন ১০৭ হলেও গেহলট শিবিরের হাতে রয়েছে ৮৮ বিধায়ক। শচীন পাইলট শিবিরে রয়েছেন ১৯ জন। বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ৭২। ১৯ কংগ্রেস বিধায়ক বরখাস্ত হলে বিধানসভার আসন সংখ্যা হবে ১৮১। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন হবে ৯১। এক্ষেত্রে নির্দল ৩ বিধায়কের সমর্থন যেহেতু গেহলটের কাছে রয়েছে তাই সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রমাণে কোনও অসুবিধা হবে না। কিন্তু, শচীন সহ ১৯ বিধায়ক বরখাস্ত না হলে পরিস্থিতি জটীল হবে। তুঙ্গে উঠবে রাজনীতি। আপাতত সেদিকেই চোখ পদ্ম বাহিনীর। এই অবস্থায় নির্ণায়ক ভূমিকায় দেখা যেতে পারে নির্দল ও ছোট দলের বিধায়কদের।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন