কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব ঘিরে সরগরম মরুরাজ্য়। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য় কংগ্রেস বিধায়ককে মোটা টাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে শচীন পাইলটের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ 'ভিত্তিহীন' বলে দাবি করলেন রাজস্থানের প্রাক্তন উপমুখ্য়মন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে পাইলট বলেছেন, ''আমি মর্মাহত, তবে এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ যে করা হবে, সে ব্য়াপারে আশ্চর্য হইনি। আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এসব করা হচ্ছে''। উল্লেখ্য়, কংগ্রেস বিধায়ক গিরিরাজ সিং মালিঙ্গা দাবি করেছেন, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য় তাঁকে মোটা টাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন পাইলট। তিনি আরও দাবি করেছেন, গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই গেহলট সরকারকে ফেলার চেষ্টা করছেন পাইলট।
এদিকে, শচীন পাইলটকে ঠুকলেন মুখ্য়মন্ত্রী অশোক গেহলট। রাজস্থানের প্রাক্তন উপ-মুখ্য়মন্ত্রীকে আক্রমণ করে গেহলট বলেছেন, ''আমি জানতাম ও কোনও কাজের নয়, অকর্মণ্য়। শুধু সকলকে বিবাদে জড়াতে প্ররোচনা দিতেন। আমি এখানে সবজি বিক্রি করার জন্য় বসে নেই, আমি মুখ্য়মন্ত্রী''।
মরু রাজনীতিতে কংগ্রেসের অন্দরে গেহলট -পাইলট বিবাদ তুঙ্গে। 'বিদ্রোহী' নেতা সহ তাঁর অনুগামী ১৮ নেতাকে বিধায়ক পদ খারিজের নোটিসও ধরিয়েছেন স্পিকার। যার বিরোধিতা করে ইতিমধ্যেই হাইকোর্টে মামলার রুজু হয়েছে। এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলছে রাজস্থান হাইকোর্টে। স্পিকার সিপি যোশীর আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভির এদিন হাইকোর্টে বলেন, 'বিধায়ক পদ খারিজ সংক্রান্ত বিষয়ে স্পিকারের সিদ্ধান্তের উপর আদালত কোনওভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারে না।'
এদিকে চলতি সপ্তাহের বুধবারই বিধানসভায় সম্ভবত শক্তি পরীক্ষা দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। এতকিছুর পরও অবশ্য দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করেননি শচীন পাইলট। কংগ্রেসের দলীয় সূত্রে খবর, শচীন পাইলট এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। তবে, কংগ্রেসের অভ্যন্তরের বিবাবকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার গন্ধ পাওয়া বিজেপি সুযোগকে হাতছাড়া করতে নারাজ। রাজ্যপাট দখলে মুখে আগ্রাসী না হলেও আড়ালে সব ধরনের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে গেরুয়া শিবির।
সপ্তাহান্তে পাইলট প্রিয়াঙ্কাকে ফোন করেছিলেন বলে হাত শিবিরের অন্দরের খবর। তবে, আলোচনার নির্যাস সম্পর্কে জানা যায়নি। রাজস্থানে যাই হোকনা কেন, করুণ নেতা পাইলটকে দলে রাখার ক্ষেত্রে আগ্রহী হাইকম্যান্ড। তাই প্রথম থেকেই বারংবার এই নেতাকে 'ঘর ওয়াপসি'র বার্তা দিয়েছেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা-চিদাম্বরমরা। তীব্র বিবাদ সত্ত্বেও প্রিঙ্কায়া ও দলের শীর্ষ নেতৃত্ব শচীন পাইলটের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি।
আদালতের রায়ের উপর নির্ভর করছে রাজস্থান রাজনীতির গতিপ্রকৃতি। তবুও হাইকম্যান্ডের এই মনোভাবই ভাবাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে। 'বিদ্রোহী' শিবিরের নেতাদের ধরাশায়ী করতে 'প্ল্যান-বি' প্রস্তুত করেছেন নাছোড় গেহলট শিবির। বিধানসভায় শক্তি পরীক্ষাকেই আপাতত মাস্টার্স স্ট্রোক করতে চাইছে তাঁরা। আস্থা ভোট হলে একদিকে শচীন পাইলটের অবস্থান পরিস্কার হয়ে যাবে, অন্যদিকে শক্তি পরীক্ষায় আপাতত উত্তীর্ণ হতে পারলেই পরের ছয় মাস রাজ্যের গদি কার্যত নিশ্চিত গেহলটের।
ক্ষমতা দখলে মরিয়া বিজেপি। তবে, আগাবাড়িয়ে আপাতত কিছু করতে রাজি নয় পদ্ম বাহিনী। ইতিমধ্যেই শচীন জানিয়েছেন যে তিনি বিজেপিতে যোগ দেবেন না। তাই তাঁকে প্রকাশ্যে প্রস্তাব দিতেও রাজি নয় গেরুয়া দলটি। তবে, সূত্রের খবর তলে তলে দান প্রস্তুত রাখছে কেন্দ্রীয় শাসক দল।
বিজেপির হিসাবে পাইলট শিবিরে ২ নির্দল সহ মোট ২১ জন বিধায়ক রয়েছেন। এনডিএ শিবিরের বিধায়ক সংখ্যা ৭২। এছাড়াও রয়েছে আরএলপি-র ৩ বিধায়ক। ২০০ আসনের বিধানসভায় আপাতত মোট ৯৬ বিধায়কের সমর্থন মিলবে এই অঙ্ক কষেই গেহলটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে কোমড় বাঁধছে গেরুয়া বাহিনী।
'এই সুযোগ বাড়ে বাড়ে আসবে না। তাই এই পরিস্থিতিতে কাজে লাগাতে হবে।' এমনটাই মত বিজেপির এক শীর্ষ নেতার। অশোক গেহলট শিবিরের বিধায়কদের মগজ ধোলাই করে তাই নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। ইতিমধ্যেই নীরবে বেশ কয়েকদন দলীয় নেতাকে মাঠে নামানো হয়েছে।
গেরুয়া কৌশল অবশ্য আগেবাগেই আঁচ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই হোটেলবন্দি তাঁর শিবিরের কংগ্রেস বিধায়করা। গেহলট ভাল করেই জানেন টোপ এলে তাঁকে সমর্থনকারী দলীয় বেশ কয়েকজন বিধায়ক শিবির বদলাতে পারেন। আপাতত তাই অঙ্কের হিসাব কষাকষিতেই এগোচ্ছে রাজস্থান রাজনীতির ভবিষ্যৎ।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন