যত সময় এগোচ্ছে, রাজস্থানে রাজনীতি নাটকীয় মোড় নিচ্ছে। গুরগাঁওয়ের হোটেলে ঢুকতেই পারল না রাজস্থান পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ। তার আগেই রাজস্থান পুলিশকে আটকে দিল হরিয়ানা পুলিশ। গুরগাঁওয়ের এক হোটেলে কয়েকজন বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস বিধায়ককে গুরগাঁওয়ের এক হোটেলে রাখা হয়েছে বলে খবর। মানেসরের হোটেলে বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের কন্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়েছিল পুলিশ। প্রসঙ্গত, রাজস্থানে কংগ্রেস সরকারকে ফেলতে কয়েকজন পরিকল্পনা করছেন, এমন ২টি অডিও ক্লিপ প্রকাশ্য়ে আসতেই হইচই পড়ে যায়। এ ঘটনায় ২টি এফআইআর দায়ের করা হয়।
এদিকে, হাইকোর্টে স্বস্তি পেল টিম পাইলট। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের বিরুদ্ধে কোনও ব্য়বস্থা নিতে পারবেন না স্পিকার, এমন নির্দেশই দিয়েছে রাজস্থান হাইকোর্ট। আগামী সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এ মামলার শুনানি মুলতুবি করা হয়েছে। উল্লেখ্য়, স্পিকারের দেওয়া বরখাস্তের নোটিসকে চ্য়ালেঞ্জ জানিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতের দ্বারস্থ হয় টিম পাইলট।
মরু রাজ্যে কংগ্রেস-পাইলট বিবাদ পৌঁছে গিয়েছে আদালতে। তার মধ্যেই দলকে শৃঙ্খলায় মুড়ে ফেলতে চাইছে হাত শিবির। অশোক গেহলট সরকার ফেলতে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আজ সকালেই দলের দুই বিধায়ক বিশ্বভেন্দ্র সিং ও ভানওয়াড়ালাল শর্মার প্রথামিক সদস্য পদ খারিজ করে দিয়েছে কংগ্রেস। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতের বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়েরের করা হয়েছে। অভিযোগ, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি টেপে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শেখাওয়াতকে কংগ্রেসের বিধায়কদের ঘুষ দেওয়া এবং রাজস্থান সরকার ফেলার কথা বলতে শোনা গিয়েছে।
এদিন সাংবাদিককে মুখোমুখি হয়ে কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেছেন, 'বিজেপির ক্ষমতা দখলের খিদে মধ্যপ্রদেশ, গোয়া, অরুণাচলপ্রদেশ ও কর্নাটকে দেখা গিয়েছে। এবার রাজস্থানেও তা লক্ষ করা যাচ্ছে।' এরপরই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর-এর দাবি তোলেন তিনি। অভিযোগ করেন, 'গতকাল (বৃহস্পতিবার) একটি টেপ সংবাদমাধ্যম দেখা গিয়েছে। তাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত, বিজেপি নেতা সঞ্জয় জৈন এবং কংগ্রেস বিধায়ক ভানওয়ার লাল শর্মাকে বিধায়কদের ঘুষ দেওয়া এবং রাজস্থান সরকার ফেলার কথা বলছেন।'
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, 'টেপে যে স্বর শোনা যাচ্ছে তা আমার নয়। ওরা যে সঞ্জয় জৈনের কথা বলছে তাকে আমি জানি না। যদিও ওই নামে আমি বহু লোককে চিনি। আর আমি যদি কথা বলে থাকি তবে নম্বর থাকবে। তদন্ত হোক। তদন্তের মুখোমুখি হতে আমি প্রস্তুত।'
একইসঙ্গে শচীন পাইলটকেও জনসমক্ষে এসে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছেন সুরজেওয়ালা। তিনি বলেন, ‘সচিন পাইলটের প্রকাশ্যে আসা উচিত এবং বিজেপিকে বিধায়কদের তালিকা দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জনসমক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করুন।’
এর মধ্যেই কংগ্রেসের চিফ হুইপ মহেশ যোশী সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, 'বিধায়ক কেনাবেচার সঙ্গে যেসব জনপ্রতিনিধি জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য স্পশাল অপারেশন গ্রুপকে তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির দাবি করেছি।'
দল ও মন্ত্রিসভা থেকে শচীন পাইলটকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে আগেই। এমনকী বিধায়ক পাইল সহ ১৯ বিধায়কের বিরুদ্ধে পদ খারিজেরও নোটিস দিয়েছেন স্পিকার। সেই পদক্ষের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ কংগ্রেসের 'বিদ্রোহী' শিবির। তা সত্ত্বেও, রাহুল গান্ধী তরুণ নেতাকে দলে ফেরাতে চেয়েছে। সেই সূত্রেই বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা পি চিদাম্বরমের সঙ্গে শচীন পাইলটের ফোনে কথা হয়। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে চিদাম্বরম জানিয়েছেন, 'প্রকাশ্যেই দলীয় নেতৃত্ব তাঁকে (শচীন পাইলট) দলে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন তারপরই অসন্তোষ নিয়ে আলোচনা হবে। আমি শুধু তাঁকে পরামর্শ দিয়েছি যে, এি সুযোগকে কাজে লাগানো উচিত।'
রাজস্থানের রাজনীতিতে টানটান নাটক। কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব এবার গড়িয়েছে রাজস্থান হাইকোর্টে। শচীন পাইলট-সহ ১৯ বিধায়ককে দেওয়া স্পিকারের বরখাস্তের নোটিসকে চ্যালেঞ্জ করে রাজস্থান হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন পাইলট অনুগামী বিধায়ক পৃথ্বীরাজ মিনা। টিম পাইলটের সংশোধিত আবেদনের ভিত্তিতে মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, 'বিদ্রোহী' শিবিরের হয়ে মামলা লড়ছেন বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আইনজীবী হরিশ সালভে।
আইনি লড়াইয়ের দিকে নজর যুযুধান কংগ্রেস ও বিজেপির। তবে, শচীন মুখ না খোলায় মরু রাজ্যের রাজনীতিতে আপাতত নানা জল্পনা অব্যাহত।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন