কোনও নির্দিষ্ট মুখ নয়, নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখেই পাঁচ রাজ্যে ভোটে লড়েছিল বিজেপি। তেলঙ্গানা, মিজোরাম বাদে বাকি তিনটিতেই জিতেছে পদ্ম শিবির। এবার সরকার গঠনের পালা। কে হবেন মুখ্যমন্ত্রী? তা নিয়েই বেজায় বিড়ম্বনায় গেরুয়া বাহিনী। সূত্রের খবর, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থানে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য একাধিক নাম উঠে আসছে। ফলে, 'শ্যাম রাখি, না কুল রাখি' অবস্থা বিজেপির। অস্বস্তি কাটাতে এবার নয়া পদক্ষেপ করল জেপি নাড্ডা, মোদী, অমিত শাহ'রা।
এই তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী খুঁজতে এবার পর্যবেক্ষক নিয়োগ করল বিজেপি। এই পর্যবেক্ষকরা তিন রাজ্যে সদ্য নির্বাচিত বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলবেন। মুখ্যমন্ত্রীর পদে তাঁরা কাকে চাইছেন, তা জানার চেষ্টা করবেন। সেই মতো রিপোর্ট দেবেন শীর্ষ নেতৃত্বকে। মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে কোনও তাড়াহুড়ো করতে নারাজ বিজেপি। উল্টে, গোষ্ঠী রাজনীতিকে সরিয়ে সর্বসম্মতির ভিত্তিতে সরকারের প্রধানকে বেছে নিতে তৎপর পদ্ম বাহিনীর নেতারা।
বিজেপির অন্দরের খবর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং দলের সাধারণ সম্পাদক সরোজ পাণ্ডে, বিনোদ তাওড়ে-কে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী খোঁজার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার, ওবিসি মোর্চা প্রধান কে লক্ষ্মণ এবং জাতীয় সেক্রেটারি আশা লাকরাকে মধ্যপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের তদারকি করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে। ছত্তিশগড়ের জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন মুণ্ডা, সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং সাধারণ সম্পাদক দুশ্যন্ত কুমার গৌতমকে নিয়োগ করা হয়েছে।
মধ্যপ্রদেশে ২৩০ আসনের মধ্যে ১৬৩-তে জিতেছে বিজেপি। এ রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদের অন্যতম দাবিদার শিবরাজ সিংহ চৌহান। রাজ্যের মোট আসনে দুই-তৃতীয়াংশতে জয়ের নেপথ্যে তাঁর বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। অন্য দিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ পটেল, জ্যোতিরাদিত্য শিণ্ডে, নরেন্দ্র সিং তোমরের নামও উঠে আসছে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সির জন্য। সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং নাকি কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হতে চলেছেন গোবলয়ের এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তা অনেকটাই নির্ভর করবে পর্যবেক্ষকের উপর।
ছত্তিসগড়ে ৯০টি আসনের মধ্য ৫৪টিতে জিতেছে বিজেপি। রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদের অন্যতম দাবিদার হলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিং, রাজ্য বিজেপি সভাপতি অরুণকুমার সাও, বিরোধী নেতা ধর্মলাল কৌশিক, প্রাক্তন আইএএস অফিসার ওপি চৌধরি। রমন সিং বাদে বাকি তিন জনই অনগ্রসর শ্রেণির।
২০০ আসনে রাজস্থানে ১১৫টিতে জিতেছে বিজেপি। সে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য ঘোরাফেরা করছে বেশ কয়েক জনের নাম। তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে শিণ্ডে। ইতিমধ্যেই তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন ২৫ জন সদ্য নির্বাচিত বিধায়ক। মনে করা হচ্ছে, এ ভাবে আসলে বসুন্ধরা নিজের শক্তি প্রদর্শন করলেন। দলের অন্য একটি অংশ মনে করছে, নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের সুনজরে না থাকায় তাঁর পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া কঠিন। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য ভেসে উঠেছে সাংসদ দিয়া কুমারী, সাংসদ মহন্ত বালকনাথ, রাজ্যবর্ধন রাঠৌর নামও। এ ছাড়া বিজেপির প্রাক্তন দুই রাজ্য সভাপতি, ওপি মাথুর ও সতীশ পুনিয়ার নাম রয়েছে জল্পনার তালিকায়। তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী— গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত, অশ্বিনী বৈষ্ণব, অর্জুনরাম মেঘওয়ালে নাম ঘিরেও চলছে জল্পনা। এখন দেখার পর্যবেক্ষকদের রিপোর্টের ভিত্তিতে এই তিন রাজ্যে কাকে নির্বাচিত করে বিজেপি।