রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় বুধবার বিরোধীদের জানিয়েছে যে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সংসদের উচ্চকক্ষে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিতে পারেন না। আর, দেবেনও না। কারণ, রাজ্যসভায় আসা অন্য কোনও সাংসদের মত প্রধানমন্ত্রীরও বিশেষাধিকার। মণিপুরের হিংসা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে ভাষণ দিতে হবে। এমনই দাবি তুলেছেন বিরোধীরা। এই প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেছেন, তিনি মণিপুরের হিংসা এবং অশান্তি নিয়ে বিধি ২৬৭-এর অধীনে ৫৮টি নোটিশ পেয়েছেন। একইসঙ্গে ধনখড় জানিয়েছেন যে নোটিশগুলো গ্রহণ করা হয়নি। কারণ, তিনি ইতিমধ্যেই ২০ জুলাই বিধি ১৬৭-এর অধীনে এই বিষয়ে একটি স্বল্প সময়ের আলোচনার প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।
বিধি ২৬৭, একজন সদস্য দ্বারা প্রস্তাবিত একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য দিনের মত সভায় তালিকাভুক্ত সমস্ত কাজ স্থগিতের অনুমতি দেয়। কিন্তু, বিধি ১৬৭ অল্প সময়ের আলোচনার কথা বলে। সদস্যদের সেই আশঙ্কা দূর করে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন যে বিধি ১৬৭-এর অধীনে মণিপুর নিয়ে আলোচনাটি আড়াই ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, এই ধারণা ভুল। এই আলোচনার কোনও সীমাবদ্ধতা থাকবে না।
বিরোধীরা ক্রমাগত স্লোগান তুলে এবং প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতির দাবি জানিয়েছেন। এপ্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন, 'আমি স্পষ্টভাবে একটি সঠিক সাংবিধানিক ভিত্তির ওপর অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে ইঙ্গিত দিয়েছি। এই চেয়ারে থেকে আমি আমার শপথ লঙ্ঘন করব যদি আমি প্রধানমন্ত্রীকে সভায় আসার নির্দেশ দিই। আমি আইন ও সংবিধানের বাইরে যেতে পারি না। অন্য সবার মতো প্রধানমন্ত্রী আসতে চাইলে, সেটা তাঁর এক্তিয়ার। এই চেয়ার থেকে, এইজাতীয় কোনও নির্দেশ যা কখনও জারি করা হয়নি, জারি করা হবে না।'
বিরোধীরা সভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য পেশের দাবিতে অনড় থাকলে ধনখড় বিরোধী দলের নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গেকে বলেন, 'আপনার পাশে আইনে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা আছেন। তাঁদের কাছ থেকে জেনে নিন। তাঁরা আপনাকে সাহায্য করবে, জানিয়ে দেবে যে সংবিধান এবং তার অধীনে আমি নির্দেশ দিতে পারি না, আমি দেব না।' চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যের পরই সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন বিরোধীরা।
দুপুর ২টোয় ফের রাজ্যসভায় অধিবেশন শুরু হলে কেন্দ্রীয় কয়লা ও খনিমন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী খনি এবং খনিজ (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) সংশোধনী বিল, ২০২৩ বিবেচনা ও পাসের জন্য উত্থাপন করেন। তারই মধ্যে বিরোধী সদস্যরা মণিপুর ইস্যু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য নিয়ে আলোচনার দাবি আরও তীব্র করেন। রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ বিরোধী দলের নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গেকে বলতে দেন। খাড়গে জানান যে এই মুহূর্তে দেশে প্রচুর অশান্তি চলছে।
আরও পড়ুন- নুহ-র পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত, কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী
এই সব শুনে হরিবংশ খাড়গেকে বিলের ব্যাপারে কথা বলতে বলেন। আর, অশান্তির বিষয়টি উত্থাপন করতে নিষেধ করেন। তার পরে ফের বিরোধী সদস্যরা রাজ্যসভা থেকে ওয়াক আউট করেন। এর জেরে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক জয়রাম রমেশ ওয়াকআউটের পরে টুইটারে বলেন, 'শুধু বিজেপি, নো এলওপি (বিরোধী দলের নেতা)। এটা রাজ্যসভায় মোদী সরকারের কৌশল। আজ বিকেলেও খাড়গেজিকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। তাঁকে বলার অনুমতি দেওয়া হয়নি মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংসদে বিবৃতি দেওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ। কেন আলোচনা প্রয়োজন। এর জেরে ভারত (জোট) দলগুলো সভা থেকে প্রতিবাদে ওয়াকআউট করেছে।'