বিজেপির রাজনীতি সব সময়েই অযোধ্যার রাম মন্দিরের সঙ্গে জড়িত কেন?
বিজেপির জন্ম জনতা পার্টি থেকে। ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থার পর। এদের পূর্বসূরি জনসংঘ মিশে যায় চরণ সিংয়ের ভারতীয় লোক দল, জনতা পার্টির ইন্দিরা বিরোধী অংশ এবং সমাজবাদীদের সঙ্গে।
সেবারের লোকসভায় জনতা পার্টি মোট ২৯৫ টি আসনে জিতেছিল। জনসংঘীরা জিতেছিল ৯০টি আসনে। ভারতীয় লোক দল পেয়েছিল ৬৮টি আসন। কংগ্রেস ও পেয়েছিল ৫৫টি আসন, সোশালিস্টরা পেয়েছিল ৫১টি, জগদীবন রাম নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস ফর ডেমোক্রেসি পেয়েছিল ২৫টি আসন। দেখাই যাচ্ছে এই ব্লকে সবচেয়ে বেশি আসন দখলে ছিল জনসংঘের।
ইন্দিরা গান্ধী ফের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় ফেরেন ১৯৮০ সালে। জনতা পায় মাত্র ৩১টি আসন। এর মধ্যে পূর্বতন জনসংঘের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন তাঁরা পান ১৬টি। ১৯৮০ সালের ৪ এপ্রিল, গুড ফ্রাইডের দিন অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং অন্যান্যরা জনসংঘ থেকে বহিষ্কৃত হন। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল আরএসএস এবং জনতা পার্টি দুই দলেরই সদস্যপদ গ্রহণ করে রেখেছিলেন তাঁরা। মাত্র দুদিন পরেই, ৬ এপ্রিল, ইস্টার সানডের দিন তাঁরা ভারতীয় জনতা পার্টি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি-র দর্শন ছিল কিছুটা গান্ধীবাদী সমাজতন্ত্রী। ১৯৮৪ সালের নির্বাচনে ভয়ানক খারাপ ফল করে তারা, জেতে মাত্র দুটি আসন। হেরে যায় স্বয়ং বাজপেয়ীও। এর পর নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হয় দলের মধ্যেই। এল কে আদবানী তখন দলে নতুন মোড় আনলেন। কংগ্রেসের তথাকথিত সিউডো সেকুলারিজমের বিরুদ্ধে নয়া ন্যারেটিভ আনা হল বিজেপিতে। শাহ বানো মামলায় সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, রাজীব গান্ধী তাকে অস্বীকার করে নয়া আইন আনার বিরুদ্ধে মুখ খুলল বিজেপি। ১৯৮৫ সালে শাহ বানো মামলায় শীর্ষ আদালত রায় দিয়েছিল মুসলিম মহিলাদের খোরপোশ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। গোঁড়া মুসলমানরা মনে করেছিলেন এ রায় মুসলিম ব্যক্তিগত আইনে হস্তক্ষেপ।
আরও পড়ুন, কেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর উপরে পূর্ব উত্তর প্রদেশের ভার?
ইতিমধ্যে, ১৯৮৪ সালে আরএসএসের একটি শাখা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ অযোধ্যায় ”রাম জন্মভূমি” ”মুক্ত” করার ডাক দেয়। শাহ বানো আইন কার্যকর করে ফেলা রাজীবের সরকার তখন কিছুটা ব্যালান্সের খেলা খেলল। গোঁড়া হিন্দুদের পক্ষে গিয়ে ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাবরি মসজিদের তালা খোলার পক্ষে দাঁড়াল তারা।
গোঁড়া হিন্দুদের কণ্ঠস্বর তখন জোর পাচ্ছে। সে সময়েই, ১৯৮৯ সালের জুন মাসে বিজেপির পালামপুর কনক্লেভে রাম মন্দির সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। হিন্দু ভোটের সন্ধানী রাজীব গান্ধী বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে ১৯৮৯ সালের নভেম্বর মাসে শিলান্যাসের অনুমতি দেন। তার অব্যবহিত পরেই লোকসভা ভোট।
রাম মন্দির আন্দোলনের সঙ্গে পরিচিতি কি বিজেপিকে রাজনৈতিক সুবিধা দিয়েছে?
সে নির্বাচনে দীর্ঘ ছায়া ফেলেছিল বোফর্স চুক্তি, যা নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন ভি পি সিং। রাম মন্দির সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে ৮৬টি লোকসভা আসন জিতে ফেলল বিজেপি। ১৯৯০-এর বিধানসভা ভোটে রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, হিমাচল প্রদেশে সরকার গড়ে ফেলল তারা।
বিজেপির ভবিষ্যৎ গড়তে বড় ভূমিকা নিল রাম মন্দির। ভিপি সিংয়ের সরকার গড়তে কমুনিস্টদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাইরে থেকে সমর্থন দিল তারা। সুর চড়াতে থাকল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বিজেপি সভাপতি ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সোমনাথ থেক অযোধ্যা পর্যন্ত রামরথ যাত্রা শুরু করলেন।
এরই মধ্যে জনতা দলের সঙ্গে মতপার্থক্য এবং বাইরে থেকে হিন্দুত্ব রাজনীতির চাপের সঙ্গে লড়াই করতে ১৯৯০ সালের অগাস্ট মাসে মণ্ডল কমিশনের রিপোর্ট কার্যকর করার কথা ঘোষণা করে দিলেন ভিপি সিং। টানা হয়ে গেল মণ্ডল-করমণ্ডলের যুদ্ধরেখা। মণ্ডল কমিশনের অন্যতম সমর্থক লালু প্রসাদ যাদব ১৯৯০ সালের ২৩ অক্টোবর বিহারে গ্রেফতার করলেন রথযাত্রারত আদবানীকে। মণ্ডলপন্থী আরেক মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদব সম্পূর্ণ প্রশাসনিক শক্তি কাজে লাগালেন বাবরি মসজিদের উপর বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আক্রমণকে রুখতে। অযোধ্যায় পুলিশের গুলিতে মারা গেল বেশ কয়েকজন করসেবক।
১৯৯১ সালে লোকসভা ভোটে ভিপি সিংয়ের সরকারকে সরিয়ে দিতে সমর্থ হল বিজেপি। তার পর উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনেও একই হাল হল মুলায়ম সরকারের। শক্তি বৃ্দ্ধি হল বিজেপির। লোকসভায় ১২০টি ভোট পেল তারা, উত্তর প্রদেশ বিধানসভায় ৪২৫ টি আসনের মধ্যে ২২১ টি আসনে জিতে পেল স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা। যিনি কঠোর ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে সমস্ত বাজি ধরেছিলেন, সেই মুলায়ম সিংয়ের দল পেল মাত্র ৩৪টি আসন।
তাহলে উত্তর প্রদেশে পরবর্তী বেশ কিছু ভোটে বিজেপির গারের কারণ কীভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব?
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর নরসীমা রাও সরকার উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ,, রাজস্থান ও হিমাচল প্রদেশে বিজেপির সরকার ফেলে দিল। ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বরের ধাক্কা একত্রিত করে ফেলে বিজেপি বিরোধী শক্তিকে। উত্তর প্রদেশে ৯৩ সালের বিধানসবা ভোটের আগে জোট গড়ে বহুজন (দলিত) ও মণ্ডলপন্থীরা। সপা-বসপা জোটের থেকে একটি আসন বেশি পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারল না, তার কারণ সমস্ত অ-বিজেপি শক্তি বাইরে থেকে সমর্থন করে মুলায়ম সিংকে। মধ্য় প্রদেশ ও হিমাচলেও পরাজিত হল বিজেপি। শুধু রাজস্থানে অন্য ছোট দলগুলির সাহায্যে ক্ষমতায় ফিরল তারা।
কংগ্রেস-বিজেপি দ্বিমুখী লড়াই এবং মণ্ডল শক্তির অনুপস্থিতির ফলে মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান এবং হিমাচলে বিজেপি ক্ষমতার খোঁজে থেকে গেল বিজেপি। একই পরিস্থিতি হলে ছত্তিসগড় ও উত্তরাখণ্ডে।
কিন্তু উত্তর প্রদেশে যেখানে সপা এবং বসপার শিকড় অনেক গভীরে, সেখানে থমকে দাঁড়াতে হল তাদের। বিজেপির আঘাত এল তাদের দলের লোধ রাজপুত নেতা এবং করমণ্ডল ও মণ্ডল, দুয়েরই মুখ কল্যাণ সিংয়ের কাছ থেকে। ৯-এর দশকের শেষের দিকে বিদ্রোহী হয়ে যান কল্যাণ। তা সত্ত্বেও বসপার মধ্য়েকার ফাটলকে কাজে লাগিয়ে এবং আদর্শগত আপস করে ২০০২ সাল পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় থেকে যেতে পারে। এর পর লোকসভা ও বিধানসভা, দু জায়গতেই পরাজত হয় তারা। যতদিন না, ২০১৪ সাল এল, এলেন নরেন্দ্র মোদী।
বিজেপির হিন্দুত্ব রাজনীতির আদর্শগত বিরুদ্ধবাদীরা এ সময়কালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কীভাবে এগিয়ে থাকল?
উত্তর প্রদেশ ও বিহারে কংগ্রেসের গ্রাফ ছিল পড়তির দিকেই। এরপর কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রীর চোখের সামনে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা দলকে ভয়াবহ আঘাতের সামনে ফেলে। মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজন মুলায়ম ও লালুর মণ্ডলপন্থী শক্তির দিকে ঝুঁকে পড়েন। এই দুই রাজ্যে, যেখানে মিলিতভাবে ১৩৯টি লোকসভা আসন, সেখানে প্রায় শেষ হয়ে যায় কংগ্রেস।
মুলায়ম এবং লালু তাঁদের মণ্ডল রাজনীতির সঙ্গে জুড়ে দেন কঠোর রাজনৈতির ধর্মনিরপেক্ষতা। লালু তাঁর লৌহ কঠিন দৃঢ়তায় ১৯৯০ থেক ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিহারকে ধরে রাখেন। মুলায়মকে উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়, যেখানে অনগ্রসর হিন্দু ভোট (ওবিসি এবং দলিত) ভাগাভাগি হয় সপা এবং বসপার মধ্যে।
মধ্য় প্রদেশ, রাজস্থান এবং হিমাচলে কংগ্রেস বিজেপির সঙ্গে তুল্যমূল্য লড়াইয়ে শামিল হয়। ১৯৯৫ সালে মহারাষ্ট্রে তাদের পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হয়। কিন্তু গুজরাটে ১৯৯৫ সালের পর আর কোনও দিন ক্ষমতায় ফিরতে পারেনি তারা।
বাজপেয়ী এবং মোদী, কোনও বিজেপি সরকারএ রাম মন্দির ইস্যুকে তাঁদের ভোটপ্রচার বা প্রশাসনিক অ্যাজেন্ডার শীর্ষে রাখল না কেন?
বাবরি ধ্বংস একটি ঘটনা মাত্র, যা ভারতের রাজনৈতিক চেহারা বদলে দিয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে তা নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে দিয়েছে অণুক্ষণের নজরদারিকেও। যে নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে অবিজেপি রাজনৈতিক দলগুলি তো বটেই, একই সঙ্গে সিভিল সোসাইটি এবং শীর্ষ বিচারবিভাগও। কোনও সরকারের পক্ষেই আইনি এবং প্রশাসনিক গণ্ডি পেরোনো এখন অনেক বেশি কঠিন।
৯০-এর শেষদিকে বিজেপি ক্ষমতার আস্বাদ পেয়েছিল যাদের হাত ধরে, উত্তর এবং দক্ষিণ ভারতের সেই শক্তিসমূহ রাম মন্দির বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড এবং ৩৭০ ধারার অবলুপ্তির মত মেরুকরণকারী ইস্যুগুলি নিয়ে উৎসাহী ছিল না। বাজপেয়ীর এনডিএ-কে এসব ইস্যুকে দূরে সরিয়ে রেখে ন্যূনতম সাধারণ অ্যজেন্ডায় নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে হয়েছিল। মাঝে মাঝে বিজেপি এবং আরএসএস এই ইস্যু নিয়ে দাপাদাপি করলেও, কেবলমাত্র হিন্দিভূমিতে শক্তিশালী বিজেপি এসব নিয়ে যে ঝুঁকি নেওয়ার পরিস্থিততে ছিল না, তা দেওয়ালের লিখনের মতই স্পষ্ট ছিল।
২০১৪ সালের দলের ইশতেহারে মন্দির প্রসঙ্গ থাকলেও, উন্নয়নের পাটাতনে ভর করে ক্ষমতায় আসা মোদী সরকার অন্য বিভিন্ন কাজকর্মের প্রদর্শনীতে মন দিল- জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পেশীশক্তি নীতি (৩৭০ ধারার অবলুপ্তি না ঘটাতে পারার খেসারত হিসেবে), এবং গোরক্ষা ও তিন তালাক বিলোপ (ইউনিফর্ম সিভিল কোডের ব্যাপারে অক্রিয় থাকার খেসারত হিসেবে)।
মেয়াদ শেষ হওয়ার মুখে মোদী সরকার রাম মন্দির ইস্যুকে সামনে আনার সিদ্ধান্ত নিল কেন?
গত বছর থেকে স্পষ্টতই চাপ বাড়িয়েছে আরএসএস এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। কোয়ালিশনের পুরনো বাধ্যবাধকতাও এখন আর নেই। দলের মধ্যে খবর, রাম মন্দির এখনও দলের ক্যাডারবাহিনীর মধ্যে অনুরণন তোলে, যারা বিশ্বাস করে সরকারের এ ব্যাপারে সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত।
১৯৯৩ সালে অযোধ্যায় অধিকৃত ৬৭ একর অবিতর্কিত অতিরিক্ত জমি ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে বিজেপি। আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে দলের শাখা এবং ক্যাডারবাহিনীকে সন্তুষ্ট করার জন্য বিজেপির পক্ষে অন্তত এইটুকু করা সম্ভব। সরকারের আশা মূল মামলার আবেদনের ব্যাপারে আদালত দ্রুত কাজ শুরু করবে।
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২৫ বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও রাম মন্দির নতুন প্রজন্মের ভোটের কাছে কতটা আকর্ষণীয়?
অযোধ্যা এবং দিল্লিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ধর্মসভায় লোকজন হয়েছিল বটে, কিন্তু রাম মন্দির আন্দোলনের সময়ে যে তুঙ্গ আবেগ ছিল, তা এখন নেহাতই অনুপস্থিত। এ অনুপস্থিতি একটি অভিজ্ঞান, যে আজকের তরুণ সমাজের কাছে এ ইস্যু আর জীবন্ত নেই। রাম মন্দির আন্দোলন যে সময়ে শুরু হয়েছিল, সে সময়েই ভারতীয় অর্থনীতিতে এসেছিল খোলা হাওয়া, যার ফলে এক নতুন আকাঙ্ক্ষার জন্ম হয়েছে, যে দৃষ্টি তৎকালীন রামমন্দির আন্দোলনে ইন্ধন জোগানো দৃষ্টিভঙ্গিকে অতিক্রম করে গেছে। উগ্র ধর্মপ্রবণতার কথঞ্চিৎ প্রমাণ এখনও দেখা গেলেও চাকরি এবং স্বচ্ছন্দ জীবযাপনের আকাঙ্ক্ষা স্পষ্টতই তুঙ্গে। সে আন্দোলনের নেতা যাঁরা ছিলেন, সেই আদবানী, মুরলী মনোহর জোশী, উমা ভারতী, বিনয় কাটিয়াররা আর রাজনীতির মধ্যমণি নন, আচার্য গিরিরাজ কিশোর, অশোক সিংঘল, মোহান্ত অবৈদ্যনাথরা ধারে কাছেও নেই। তা সত্ত্বেও বিজেপির আশা সেই আদি হিন্দুত্ব ভোটের আগে একবার বিস্ফোরণ ঘটাবেই।