ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অফ বোড়োল্যান্ড (এনডিএফবি)-র প্রতিষ্ঠাতা রঞ্জন দইমারি এবং আরও ৯জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এঁরা সকলে ২০০৮-এর আসাম ধারাবাহিক বিস্ফোরণে যুক্ত। গৌহাটির বিশেষ সিবিআই আদালত বুধবার এই রায় দিয়েছে। দুদিন আগে এই মামলায় ১৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। বাকি চারজন ইতিমধ্যেই তাঁদের সাজা খেটে ফেলেছেন এবং জরিমানা দিয়েছেন।
এই ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। অন্য যাঁদের সাজা দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন জর্জ বোড়ো, বি থারাই, রাজু সরকার, আঞ্চাই বোড়ো, ইন্দ্র ব্রহ্ম, লোকো বসুমাতারি, খরগেশ্বর বসুমাতারি, অজয় বসুমাতারি এবং রঞ্জন গোয়ারি।
আরও পড়ুন, আসাম ধারাবাহিক বিস্ফোরণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজা দইমারি-সহ ১০ জনের
বোড়োল্যান্ড- পৃথক রাজ্যের দাবি
বোড়োরা আসামের সর্ববৃহৎ আদিবাসী সম্প্রদায় এবং গোটা রাজ্যের জনসংখ্যার ৫ থেকে ৬ শতাংশ। পৃথক বোড়োল্যান্ডের দাবিতে রাজনৈতিক দল প্লেইনস ট্রাইব্যাল কাউন্সিল অফ আসাম (পিটিসিএ)-র নেতৃত্বে আন্দোলন চলছে ১৯৬৭-৬৮ সাল থেকে।
১৯৮৭ সালে অল বোড়ো স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আবসু)-র নেতৃত্বে এই দাবির পুনরুজ্জীবন ঘটে। তখন আবসুর নেতা ছিলেন উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্ম, যাঁর দাবি ছিল আসামকে ৫০-৫০ ভাগ করা হোক।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে এ দাবি ছিল ৬ বছর ধরে চলা আসাম আন্দোলনের ফলাফল। আসাম চুক্তিতে যখন অসমিয়া জনগণের সুরক্ষার কথা বলা হচ্ছিল, সেসময়ে নিজেদের পরিচয় রক্ষার লড়াইয়ে ব্যাপৃত ছিলেন বোড়োরা।
রঞ্জন দইমারি এবং এনডিএফবি
বোড়ো রাজ্যের দাবিতে রাজনৈতিক আন্দোলন তো ছিলই, এরই সমান্তরালে বোড়ো সিকিউরিটি ফোর্স নামে একটি সশস্ত্র দল গঠিত হয় ১৯৮৬-র অক্টোবরে। এর নেতৃত্বে ছিলেন রঞ্জন দইমারি। এই সংগঠনই অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এনডিএফবি নাম নেয়। বিভিন্ন ধরনের হামলা, হত্যা কাণ্ড এবং তোলা আদায়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল এরা।
২০১৬ সালে ফাউন্টেন ইংক পত্রিকাকে দইমারি বলেছিলেন, আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন যখন ব্যর্থ হল এবং ভারত সরকার আমাদের কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হিসেবেও মান্যতা দিল না, তখন আমরা ভাবলাম সার্বভৌম রাজ্যের জন্য লড়াই করাই ভাল।
১৯৯০ এ ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী এনডিএফবি-র বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করায় এই গোষ্ঠী সীমানা পেরিয়ে ভূটানে আশ্রয় নেয়। কিন্তু ২০০০-এর শুরু দিকে ভারতীয় সেনা এবং ভূটান সেনা তাদের বিরুদ্ধে অপারেশন শুরু করে।
বেশ কয়েকবছর ধরে এনডিএফবি-র সঙ্গে ভারত সরকার এবং আসাম সরকারের আলোচনা ব্যর্থ হয়।
২০০৮, আসামে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ
সোমবার বিশেষ সিবিআই আদালত দোষী সাব্যস্ত করার সময়ে যা জানিয়েছে তা হল ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে এই গোষ্ঠী যে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটায় তাতে প্রায় ৯০ জনের মৃত্যু হয়।
এই বিস্ফোরণের পরেই এনডিএফবি-তে ভাঙন ধরে। এনডিএফবি (রঞ্জন দইমারি) গোষ্ঠী এবং এনডিএফবি (প্রোগ্রেসিভ) গোষ্ঠী। ২০০৯ সাল থেকে প্রোগ্রেসিভ গোষ্ঠী ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। ২০১০ সালে দইমারিকে গ্রেফতার করে ভারতের হাতে তুলে দেয় বাংলাদেশ সরকার। ২০১৩ সালে জামিন পান তিনি। বর্তমানে ভারত সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালাচ্ছেন দইমারি।
২০১২ সালে এনডিএফবি (আরডি) গোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজস্ব নতুন গোষ্ঠী বানান ইংতি কাথার সংবিজিৎ। ২০১৪ সালে আসামে ৬৬ জন আদিবাসী হত্যার পিছনে সংবিজিৎ গোষ্ঠীর হাত রয়েছে বলে সন্দেহ।
২০১৫ সালে সংবিজিৎকে গোষ্ঠী প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে দায়িত্ব নেয় সাওরাইগওয়ারা। এই গোষ্ঠীটি এখনও সক্রিয় আছে। তবে এই সংবিজিৎ নিজে কিন্তু বোড়ো নন, কার্বি। শোনা যাচ্ছে আপাতত কার্বিদের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী তৈরি করেছেন তিনি।
Read the Full Story in English