রত্না চট্টোপাধ্যায়ের কথাই মিলে গেল। ‘মমতার কাছেই ফিরতে হবে শোভনকে’, কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের বিজেপিতে যোগদানের দিন এমন ভবিষ্যদ্বাণীই করেছিলেন তাঁর দীর্ঘকালের জীবনসঙ্গী রত্না চট্টোপাধ্যায়। তখন সে কথায় আমল না দিলেও, কয়েক মাস কাটতে না কাটতেই সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতেই গেলেন শোভন-বৈশাখী। রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা, এবার শোভনের তৃণমূলে ফেরা শুধুই সময়ের অপেক্ষা। তবে এবার এ জল্পনায় মুখ খুললেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। রত্না বলেন, ‘‘শোভনের শুভবুদ্ধির উদয় ঘটেছে’’। এমনকী, মমতার কাছে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ‘ফিরে যাওয়া’তে রত্না খুশি বলেও জানিয়েছেন।
ঠিক কী বলেছেন রত্না চট্টোপাধ্যায়?
ভাইফোঁটায় মমতার বাড়িতে শোভনের যাওয়ার প্রসঙ্গে এদিন রত্না চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাইফোঁটায় মমতাদির বাড়িতে গিয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। সবথেকে ভাল খবর এটা। গত বছর ফোঁটা নিতে পারেননি। শুভবুদ্ধির উদয় ঘটেছে। এই শুভবুদ্ধি যেন উনি ধরে রাখতে পারেন। মমতাদির হাত ধরেই তো ওঁর (শোভন) সব উন্নতি হয়েছে। শোভনকে ছোট ভাই হিসেবেই দেখেন মমতাদি। দিদি মায়ের মতো হয়। ছোট ভাইরা দিদির কাছে মায়ের স্নেহ পান’’। উল্লেখ্য, রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে পারিবারিক বিবাদের সময় থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে শোভনের। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শোভনের 'বন্ধুত্ব' একেবারেই ভাল চোখে দেখেননি রত্না। এ নিয়ে শোভন-বৈশাখী-রত্নার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। এরপর শোভনের বিজেপিতে যোগদানের দিন হেসে ফেলেছিলেন রত্না। সে সময় তিনি বলেছিলেন, “শেষ পর্যন্ত দেখবেন, শোভনবাবুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই ফিরতে হবে। যাঁর হাত ধরে রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল, সেখানেই ফিরে আসতে হবে”।
আরও পড়ুন: শোভন কি ফের তৃণমূলে? গুরুত্ব দিচ্ছে না বঙ্গ বিজেপি
অন্যদিকে, মমতার হাতে শোভনের ভাইফোঁটা প্রসঙ্গে তৃণমূল মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে আমরা চিরকালই ভাইফোঁটা নিই, না পেলে মনোবেদনা হয়। ওঁর মনোবেদনা হয়েছিল নিশ্চয়ই। যদি কারও অসন্তোষ থেকে থাকে, মমতাই একমাত্র সেই অসন্তোষ দূর করতে পারেন’’।
আরও পড়ুন: বৈশাখীই ব্ল্যাকমেল করছেন, শোভনের কোনও হাত নেই: রত্না
প্রসঙ্গত, বিজেপিতে যোগ দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। শোভনের পারিবারিক সমস্যা নিয়ে মমতার সঙ্গে শোভনের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। মমতার উপর চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে ১৪ অগাস্ট বিজেপিতে যোগ দেন শোভন। কিন্তু যোগদানের পরপরই বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের উপর অসন্তোষ প্রকাশ করেন শোভন-বৈশাখী। বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথাও জানান এই যুগল। এরপর থেকেই বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে। গুঞ্জন ছড়ায়, তাহলে কি ফের তৃণমূলে ফেরার কথাই ভাবছেন শোভন? এই জল্পনা বাড়ে, যখন গত শনিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়ে সেখানে দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর ভাইফোঁটার দিন মমতার বাড়িতে শোভন-বৈশাখীর উপস্থিতি এই জল্পনাকে দ্বিগুণ করে।