জয়প্রকাশ দাস
এবছরের পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে যে ব্যাপক হিংসার সাক্ষী থাকল রাজ্য, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে দলে শুদ্ধিকরণ শুরু করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের “বেনোজল” দূর করতে সক্রিয় তৃণমূলর শীর্ষ নেতৃত্ব। ইতিমধ্য়েই জেলাওয়ারি রিপোর্ট সংগ্রহ করার কাজ চলছে। জেলা ও ব্লক স্তরের নেতৃত্বের সঙ্গে শীর্ষ নেতারা বৈঠক করছেন। একেবারে বুথ ধরে ধরে পর্যালোচনা হচ্ছে।
রাজ্য়ে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নের দিন থেকে শুরু হওয়া হিংসার তাণ্ডব চলেছে একেবারে গণনার দিন পর্যন্ত। একাধিকবার হাইকোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। তবু অশান্তির হাত থেকে রেহাই পাননি গ্রামবাংলার মানুষ, উল্টে মনোনয়ন থেকে দিন যত গড়িয়েছে সংঘর্ষ তত বেড়েছে। তৃণমূল-বিরোধী সংঘর্ষ যেমন হয়েছে তেমনই অন্তর্দ্বন্দ্বে খুন হয়েছেন তৃণমূল কর্মী। পাশাপাশি, তৃণমূলের মধ্যে এই অন্তঃকলহের জেরে বহু সংখ্য়ক নির্দল প্রার্থী জয়ী হয়েছেন পঞ্চায়েতে।
এবার তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে সমস্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে শীঘ্রই শুদ্ধিকরণের কাজ শুরু করা হবে। তৃণমূলের এক রাজ্য় নেতার মন্তব্য়, “শুদ্ধিকরণ না হলে দলের হাল খারাপ হতে বাধ্য়। অবিলম্বে বেনোজল দূর করতেই হবে। এরইমধ্য়ে দলের পুরনো কর্মী ও সমর্থকরা মুখ ফেরাতে শুরু করেছেন। এখনই কড়া ব্য়বস্থা না নিলে সামনের লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে পঞ্চায়েতের ঘটনার প্রভাব পড়েত বাধ্য়।”
তৃণমূল সূত্রে খবর, শুদ্ধিকরণ করতে গিয়ে বেশ কিছু নেতার ওপর খাঁড়া নামতে চলেছে। যেভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে খুনখারাপি, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে, তাতে দল স্পষ্টতই বিব্রত। দলীয় ভাবে কোনও নির্দেশ ছিল না, বরং শীর্ষ নেতৃত্ব নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন কোনরকম ঝামেলা না হয় বলেই দলীয় সূত্রে খবর, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল স্থানীয় ক্ষমতা দখল, এবং পঞ্চায়েতে উন্নয়নের জন্য় বরাদ্দ কোটি কোটি টাকার লোভ দলীয় নির্দেশের বাধা মানেনি।
মনোনয়ন বা ভোটের দিন শুধু নয়, ভোট গণনার দিন নদিয়ার ছাপ্পা ভোটের কাণ্ড টিভি ও সোশ্য়াল মিডিয়ার সৌজন্য়ে সারা দেশ দেখেছে। যে ঘটনা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। যে কারণে ভোটের সময় তৃণমূল ভবনে দলের দুই শীর্ষ নেতা দরজা বন্ধ করে রেখেছিলেন, উপস্থিত সাংবাদিকদের উপেক্ষা করে।
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, শুদ্ধিকরণ না হলে দলের ভাবমূর্তি ফেরানো খুব মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। আগামী দিনে লোকসভা ও বিধানসভায় কড়া নিরাপত্তায় ভোট হবে। সেক্ষেত্রে কিন্তু দলের ভোট ব্য়াঙ্কে প্রভাব পড়তে বাধ্য়। আগামী ছমাসের মধ্য়েই দলের শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়ায় ডানা ছাঁটা শুরু হয়ে যাবে।
ইতিমধ্য়েই তৃণমূল নেতৃত্ব এটা বুঝছেন, যাঁরা পতাকাকে ভালবাসে, দলকে ভালবাসে, তাঁরা দল থেকে অনেকটা দূরে সরে গিয়েছেন। এবছর অনেক ক্ষেত্রে দলের পুরনো প্রার্থীদের সরিয়ে দিয়ে নতুন প্রার্থী করা হয়। সেক্ষেত্রে তৃণমূল সুপ্রিমোর নির্দেশ ছিল যেন পুরনোদের যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক জায়গায় পুরনোরাই নির্দল হিসাবে দাঁড়িয়েছেন, এবং তাঁদের দলে ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। শুদ্ধিকরণ না হলে শুধু ভোট ব্য়াংক হারানো নয়, একক ভাবে ক্ষমতা দখল করাও যে অসম্ভব হতে পারে সেকথাও বলছেন দলের অনেকেই।