রাজ্যে ১৮টি আসন পেয়েছে বিজেপি। এরপরই দলীয় সংগঠনে রদবদল ঘটিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে জেলা সভাপতিও বদল করা হয়েছে। আর এরপরই সামনে এসেছে রাজ্য মন্ত্রিসভার পরিবর্তন। মন্ত্রী গৌতম দেবকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ থেকে আগেই সরিয়ে দিয়েছিলেন মমতা। এবার উত্তরবঙ্গ ও পশ্চিমাঞ্চলের দুই মন্ত্রীকে দফতরহীন করে দিয়েছেন মুখ্য়মন্ত্রী। সরাসরি প্রকাশ্যে কিছু না বলা হলেও, লোকসভা নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের খারাপ ফলই যে এ ক্ষেত্রে একমাত্র কারণ তা স্পষ্ট বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কিন্তু, দফতর হারিয়ে কী বলছেন প্রাক্তন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন ও পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাত?
শান্তিরাম মাহাতো বলছেন, "সারা ভারতেই তো ফল খারাপ হয়েছে"। আর বিনয়কৃষ্ণের জবাব, "জণগনের রায়কে তো অস্বীকার করতে পারি না"। প্রসঙ্গত, কোচবিহারের মাথাভাঙার তৃণমূল বিধায়ক বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। তিনি এখন রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী। সদ্য লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহারে জয় পয়েছে বিজেপি। তবে শুধু কোচবিহার নয়, সমগ্র উত্তরবঙ্গে একটিও আসন পায়নি তৃণমূল কংগ্রেস। ফলে প্রথমে সাংগঠনিক বৈঠকে দলীয় সংগঠনে পরিবর্তন এনেছেন তৃণমূল নেত্রী। এরপর মন্ত্রীসভায় কাটছাঁট করতে গিয়ে দফতর হারিয়েছেন বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। এদিকে, উত্তরবঙ্গে খারপ ফলাফলের জন্যই যে তাঁকে বনদফতর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তা মেনে নিয়েছেন বিনয়বাবু।
বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, "আমাদের দলের হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা মাথা পেতে নেব। ক্ষোভের কোনও কারণ নেই। আমি গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। মন্ত্রী করে আমাকে সম্মান দিয়েছেন দলনেত্রী। জনগণ এই রায় দেওয়ায় তাঁর চিন্তা হতেই পারে যে কি করে ভাল করা যায়। জণগনের রায়কে তো অস্বীকার করতে পারব না"। তবে তিনি বেশ আশাবাদী এবং মনে করেন,"মন্ত্রীত্ব থেকে সরায়নি। দলের সিদ্ধান্ত তো মানতেই হবে"। উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলা সভাপতিদেরও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে এর ফলে কি কোনও লাভ হবে দলের? বিনয়কৃষ্ণের সাফ জবাব, "লাভ লোকসানের বিষয় সময়ই বলবে"।
উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি জঙ্গলমহলেও জয়ের মুখ দেখেনি ঘাসফুল। যে জঙ্গলমহল হাসছে বলে তৃণমূল নেত্রী বারবার দাবি করেছেন,সেই বাঁকুড়া-পুরুলিয়াতেও বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের ভোটের ব্যাপক ফারাক। এছাড়া, তৃণমূলকে হারতে হয়েছে ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর এবং বিষ্ণপুরেও। সেখানেও সংগঠনে পরিবর্তন এনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এর 'ফলস্বরূপ' দফতরহীন করে দেওয়া হয়েছে শান্তিরাম মাহাতোকে।
প্রসঙ্গত, পুরুলিয়ার বলরামপুরের বিধায়ক শান্তিরাম মাহাতো ছিলেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী। সেই দফতর থেকে তাঁকে সরিয়ে, দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। সুব্রতবাবু নিজে বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিরাট ভোটের ব্যবধানে বিজেপি প্রার্থী ডা. সুভাষ সরকারের কাছে পরাজিত হলেও দক্ষ 'প্রশাসক' হওয়ায় কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের ওপর ভরসা রেখেছেন মমতা। তবে, দফতরহীন করে দেওয়ায় শান্তিরাম মাহাতো বলেন, "দলনেত্রী কী জন্য করেছেন, তা তো আমি জানি না। কি করে জানব? তাঁর বিচক্ষণতা রয়েছে। কিন্তু শুধু পশ্চিমাঞ্চলই নয়, ফল তো সারা ভারতেই খারাপ হয়েছে"। এরপরই তাঁর উল্লেখযোগ্য সংযোজন, "উনি সরকার চালান। সংগঠন দেখেন। উনি যা ভাল বুঝেছেন করেছেন"।