২০১৪ সালে আদনি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদনি বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় ছিলেন ৬০৯ নম্বর স্থানে। তারপর কোন জাদুতে তিনি বিশ্বের ২ নম্বর স্থানে উঠে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিশানা করলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস নেতা মঙ্গলবার অভিযোগ করেছেন ‘২০১৯ সালে দেশের ছয় বিমানবন্দর নিলাম প্রক্রিয়ায় আপত্তি ছিল অর্থমন্ত্রক ও নীতি আয়োগের। তার পরেও কীভাবে আদানির হাতে এল এই ৬ বিমানবন্দর! তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার শুধুমাত্র একটি কর্পোরেট, আদানি গোষ্ঠীকে নানান সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছে। রাহুল গান্ধীর আরও অভিযোগ আগে মোদী আদানির বিমানে ভ্রমণ করতেন এবং এখন আদানি তাঁর বিমানে মোদীজির সঙ্গে একসঙ্গেই ভ্রমণ করেন। রাহুল গান্ধী এদিন বলেন,আগে বিষয়টি গুজরাটের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটা আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাহুল গান্ধীর সরাসরি প্রশ্ন আদানি গত ২০ বছরে বিজেপিকে কত টাকা দিয়েছেন? রাহুল আরও বলেন, ভারত জোড়ো যাত্রার সময়, মানুষজন তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে কীভাবে একজন ব্যক্তির আদানির সম্পদের পরিমাণ ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ৮বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে? প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আদানির সম্পর্ক কী?
তিনি বলেন, 'ভারত জোড় যাত্রা'র সময় আমরা মানুষের কণ্ঠস্বর শুনেছি এবং আমাদের বক্তব্যও মানুষের সামনে তুলে ধরেছি। আমরা যুবকদের তাদের চাকরি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, অনেকে বলেছে যে তারা বেকার বা কেউ উবার ড্রাইভারের কাজ করেন’। এই কথা বলার পরই রাহুল গান্ধী সাংসদের সামনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে গৌতম আদানির একটি ছবি তুলে ধরেন। এরপর রাহুল আরও অভিযোগের সুরে জানান, প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া আদানিকে ঋণ দিয়েছে। মোদীজি বিদেশের যেখানেই যান, সেখানেই আদানি লাভবান হয়। মোদীজি বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। কিছুদিন পর আদানির সঙ্গে বাংলাদেশ ২৫ বছরের চুক্তি করে।
আরও পড়ুন: < শ্রদ্ধাকে খুনের পর চিকেন রোল অর্ডার, জল-হারপিক দিয়ে রক্ত পরিষ্কার করে আফতাব, দাবি চার্জশিটে >
শ্রীলঙ্কা অভিযোগ করেছে, প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁদের প্রকল্প আদানিকে দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো আদানিকে কোটি কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। এলআইসির টাকাও চলে যাচ্ছে আদানির কাছে। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে জানিয়েছে, আদানির শেল কোম্পানিগুলো দেশের বাইরে আছে। এই সব শেল কোম্পানির সঙ্গে লেনদেনের কোটি কোটি টাকা কার? সংসদে প্রশ্ন তোলেন রাহুল। সেই সঙ্গে রাহুল গান্ধীর আরও অভিযোগ অর্থ মন্ত্রক ও নীতি আয়োগের আপত্তি সত্ত্বেও আদানি গোষ্ঠীর হাতে দেশের ছ’টি বিমানবন্দর তুলে দেওয়া হয়। কীভাবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বা এর পিছনে আসলে কী রহস্য তা সমাধান করার জন্য তদন্তের পক্ষেও সওয়াল করেন তিনি। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক এবং নীতি আয়োগ ২০১৯ সালে আদানি গোষ্ঠীর হাতে বিমানবন্দর তুলে দেওয়ার তীব্র আপত্তি জানায়।
২০১৯ সালে দেশের ছয় বিমানবন্দর নিলাম প্রক্রিয়ায় আপত্তি ছিল অর্থমন্ত্রক ও নীতি আয়োগের। কিন্তু তা অগ্রাহ্য করেই প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয় ৬ বিমানবন্দর। সর্বভারতীয় ইংরেজি সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। ২০২১ সালের অগাষ্টে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর, মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজা এয়ারপোর্টের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়ে ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি এয়ারপোর্ট অপারেটরের শিরোপা এখন আদানি গোষ্ঠীর মুকুটে। মাত্র ২০ মাসের মধ্যেই এই শিরোপা জুটিয়ে নিয়েছে গৌতম আদানির সংস্থা। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনকে টেনে নিয়ে মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।