চৌধুরী চরণ সিং ভারতরত্ন পাওয়ার পর, লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় লোকদলের মধ্যে 'ঘনিষ্ঠতা' আরও বেড়েছে। লোকসভা নির্বাচনে দু'দলের জোটের সম্ভাবনাও প্রায় নিশ্চিত। বিজেপি এবং আরএলডি জোট কংগ্রেস এবং এসপির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এমনই ধারণা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, 'জয়ন্ত চৌধুরির দল পরিবর্তন এসপি এবং কংগ্রেসের জন্য বড় সমস্যার কারণ হতে পারে। কারণ তাদের জাট অধ্যুষিত আসনে একলা লড়াই করতে হবে। ২০২২ সালে, উভয় দলই জাট ভোট থেকে বেশ ফায়দা পেয়েছিল'।
জাট-মুসলিম জোট ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মিরাট, মোরাদাবাদ এবং সাহারানপুর বিভাগে বেশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছিল। ২০১৭ সালে, বিজেপি এখানে ৫০ টিরও বেশি আসন জিতেছিল। ২০২২ সালের পরিসংখ্যানের দিকে নজর দিলে দেখা যায় যে বিজেপি মাত্র ৪০ টি আসনে সাফল্য পেয়েছে, যেখানে বিরোধীদের আসন ২০ থেকে বেড়ে ৩১ হয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে, মোদী ঝড় সত্ত্বেও এসপি, বিএসপি এবং আরএলডির জোট ছয়টি আসন দখল করেছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন যে লোকসভা নির্বাচনে জাট ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেকথা মাথায় রেখেই বিজেপি আরএলডির সঙ্গে জোট গড়তে বিশেষ আগ্রহী। ইউপিতে এমন ১৮ টি আসন রয়েছে, যেখানে জাট ভোটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
জয়ন্ত চৌধুরির সঙ্গে হাত মেলালে কী লাভ বিজেপি?
বিজেপিতে জাট ভোটের বিভাজন বন্ধ হয়ে যাবে। জয়ন্ত চৌধুরি বিজেপির সঙ্গে হাত মেলালে পশ্চিম ইউপি সহ হরিয়ানা ও রাজস্থানের রাজনীতি আরও সরল হয়ে যাবে। জয়ন্তের বিজেপিতে যোগদানের অনেক সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, তাদের আসন বাড়বে। সরকার গঠিত হলে তারও মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে জাটরাও তাদের পূর্ণ ক্ষমতায় রাজনীতি করতে পারবে। পাশপাশি বিজেপির কাছে জাট নেতার অভাব রয়েছে সেই অভাব জয়ন্তর মাধ্যমে দিয়ে পূরণ করে নেওয়া যেতে পারে।
আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, জয়ন্ত যদি অখিলেশ ও কংগ্রেসের সঙ্গে থাকতেন, তাহলে কংগ্রেসকে পাঁচ থেকে আটটি আসন নিয়ে ভাবতে হতো না। যেখানে আরএলডির আধিপত্য রয়েছে। এখন এই আসনগুলিই কংগ্রেস এবং এসপির জন্য একটি একটি বড় ধাক্কা।
আরএলডি প্রধান সাংসদ জয়ন্ত চৌধুরী রাজ্যসভায় মোদী সরকারের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছিলেন, 'আমি ১০ বছর ধরে বিরোধী দলে রয়েছি। গত দশ বছরে আমি দেখেছি বর্তমান সরকারের কাজের ধরনও চৌধুরী চরণ সিংয়ের চিন্তার প্রতিফলন' । এদিকে কংগ্রেস মুখপাত্র আংশু অবস্থি বলেছেন পশ্চিম ইউপিতে জাট ও কৃষকদের ইস্যুতে কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে। জয়ন্ত এখনও আমাদের জোটের অংশ। বিজেপি জানে যে কেবল কংগ্রেসই তাকে হারাতে পারে, তাই তারা এই বিষয়ে চিন্তিত।
বিজেপির মুখপাত্র আনন্দ দুবে বলেছেন, 'বিজেপির ভয়েই ইন্ডিয়া জোট তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ একে অপরকে এক সময় গালিগালাজ করত। কংগ্রেস চায় না যে পরাজয়ের দায় শুধু রাহুল গান্ধীর উপর পড়ুক, তাই তারা এই জোট তৈরি করেছে। মোদীজি আবারও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হতে চলেছেন। ঠিক এই কারণেই ইন্ডিয়া জোট এখন চিন্তিত' ।
বিজেপি নেতাদের মতে, "প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এনডিএ-র জন্য ৪০০ প্লাস আসনে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, আমরা দেশের বিভিন্ন অংশে ছোট দলগুলির সঙ্গে হাত মেলাব,"। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, "বিজেপির দরজা তার সমস্ত প্রাক্তন অংশীদারদের জন্য খোলা,"।আরএলডির সঙ্গে জোট পশ্চিম ইউপিতে আসন সম্ভাবনা উজ্জ্বল করতে পারে বলেই বিজেপি নেতাদের ধারণা। শনিবার সংসদে চরণ সিংকে ভারতরত্ন দেওয়ার জন্য মোদী সরকারের প্রশংসা করেন আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধুরি।