একদা 'দুর্জয় ঘাঁটি' বাংলায় এখন ক্রমশ বাড়ছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) দাপট। দীর্ঘকাল বাম শাসনাধীন বাংলায় সম্প্রতি আরএসএস-এর কার্যকলাপ বেড়েছে বেশ কয়েকগুন। সংঘের দাবি, শুধু দক্ষিণবঙ্গেই এক বছরের ব্যবধানে আরএসএসের সদস্য সংখ্যা বেড়েছে ৪৭ শতাংশ। চলতি বছরে শাখা বেড়েছে ৩৯০টি। সংঘের ব্যাখ্যা, "আগে এ রাজ্যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সংগঠনের কাজ সম্পর্কে ভুল বুঝিয়ে সাধারণ মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখত। এখন তা সম্ভব না হওয়ায় দ্রুত বাড়ছে তাঁদের কার্যকলাপ।"
তাহলে কি বামেদের দুর্লঙ্ঘ্য সংগঠনের চাপেই তেমন জল-হাওয়া জোটাতে পারেনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ? আর তৃণমূল শাসিত এই রাজ্যে সুযোগ পেয়েই স্বমূর্তি ধারণ করেছে সংঘ, উঠছে প্রশ্ন। এক্ষেত্রে সিপিএমের দাবি, তাঁরা আদর্শগতভাবে ক্রমাগত বিরোধিতা করে লাগাতার প্রচার চালিয়ে গিয়েছে। তাই এই ধরনের সংগঠন মাথাচারা দিতে পারেনি। অন্যদিকে, তৃণমূলের বক্তব্য, আরএসএস তো ধর্মীয় বা সামাজিক সংগঠন। রাজনীতি নিয়ে ওদের মাথা ব্যাথা কেন?
উল্লেখ্য, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে বিজেপি ১৮টি আসনে জয় পেয়েছে। আর সেই বছরই আরএসএস-এর সংগঠনের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। কিন্তু সংঘ মনে করছে, তাদের সংগঠন মজবুত হওয়ার জন্যই পদ্ম শিবিরের প্রভাব বেড়েছে এ রাজ্যে। দক্ষিণবঙ্গের প্রচার প্রমুখ বিপ্লব রায় বলেন, "রাজনৈতিক প্রভাবে সংঘ প্রভাবিত নয়। বরং সংঘের প্রভাবে রাজনীতি প্রভাবিত। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনেও সেই প্রভাব পড়বে।"
আরও পড়ুন: ভোটের বাদ্যি, উপনির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা তৃণমূলের
দীর্ঘ দিন ধরে এ রাজ্যে সংঘের কাজকর্ম জারি আছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে সংঘের কাজকর্ম বিশেষভাবে নজরে পড়ছে। কিন্তু, কেন বেড়েছে সংঘের কার্যকলাপ? বিপ্লববাবুর কথায়, "বাংলায় সংঘকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। রাজনীতিবিদরা সংঘ সম্পর্কে বিরূপ ধারণা দিয়েছেন। এর ফলে এখানে সংঘের কাজ তত বাড়েনি। সেই পর্দা এখন সরে গিয়েছে। আরএসএস সম্পর্কে যুবকদের আগ্রহ বাড়ছে। এখানকার যুবকরা হতাশাগ্রস্ত, তাঁদের কাছে কোনও রাস্তা নেই। সমস্ত রাজনৈতিক দল দেখে নিয়ে সমাজের পরিবর্তন আনতে এখন তাঁরা আরএসএস-এর কাছে আসছেন।"
সংগঠনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন দক্ষিণবঙ্গে ১২৩৫টি শাখা রয়েছে। মিলন রয়েছে ১৪০২টি। সপ্তাহন্তে কাজ করে মিলন। শাখাগুলো প্রতিদিন কাজ করে। ২০১৮ সালে এই শাখা ছিল ১১০০-র মধ্য়ে। মিলন ছিল ১৩০০। দক্ষিণবঙ্গে সব মিলিয়ে ৪৭ শতাংশ সদস্য় বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাম আমলে কেন এই বৃদ্ধি হয়নি? সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, "যেহেতু বিভাজন, ধর্মীয় আবেগ, ঘৃনা ও হিংসা নিয়ে ওরা অরাজনৈতিক খোলসের মধ্য়ে থেকে রাজনীতি করে। আদর্শগত ভাবে এদের বিরুদ্ধে আমরা লাগাতার প্রচার করে গিয়েছি। ঐক্য়ের শক্তি মজবুত ছিল তখন বিভাজনের রাজনীতি ঘাঁটি গাড়তে পারেনি। তৃণমূলের রাজত্বে বিভাজনের রাজনীতির ভিত্তি করে দেওয়ায় আরএসএস পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পেয়েছে।" আরএসএসের সংগঠন বৃদ্ধিকে কোনও আমল দিতে চান না রাজ্য়ের মন্ত্রী তথা প্রবীণ তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়। তিনি বলেন, "ওরা তো ধর্মীয় বা সামাজিক সংগঠন। ওরা কেন রাজনীতির কথা বলছে?আমাদের লড়াই তো আরএসএসের সঙ্গে নয়, বিজেপির সঙ্গে।"