বিরাট ধাক্কা খেল উদ্ধব ঠাকরে শিবির। শুক্রবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ঘোষণায় এবার শিবসেনা নাম এবং নির্বাচনী প্রতীক দুই-ই হারাল উদ্ধব শিবির। এবার থেকে একনাথ শিণ্ডের শিবিরই হল ‘প্রকৃত শিবসেনা’। বালাসাহেব ঠাকরের জমানার তির-ধনুক প্রতীকও এবার পেল ‘একনাথ শিবির’। এরপর থেকেই শিণ্ডে শিবিরের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন উদ্ধব গোষ্ঠী। এর মাঝেই সামনে এসেছে শিবসেনা সেনা সঞ্জয় রাউতের মন্তব্য। শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত অভিযোগ করেছে শিবসেনার নির্বাচনী প্রতীকের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার চুক্তি হয়েছে, দলীয় প্রতীক ছিনিয়ে নেওয়ার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ ঘিরে উত্তাল রাজনীতি। শিন্ডে শিবিরকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে শিবসেনার এই নেতা।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, শিবসেনা নাম এবং প্রতীক কোনওটাই ব্যবহার করতে পারবেন না বালাসাহেব পুত্র উদ্ধবের শিবির। এই মুহূর্তে বিদ্রোহী শিবিরের নেতৃত্বে থাকা একনাথ শিণ্ডে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে রয়েছেন। সিংহভাগ বিধায়ক-সাংসদ তাঁর শিবিরে। একপ্রকার পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন এবং বিধানসভা নির্বাচনে একনাথদের আর চিন্তা থাকল না। বর্তমানে বিজেপির সঙ্গে জোটে রয়েছেন তাঁরা।
যুদ্ধে নামার আগেই নির্বাচন কমিশন কাজটা সহজ করে দিয়েছে। বালাসাহেব ঠাকরের ছেলে ও নাতি উদ্ধব আর আদিত্যদের কাছে আর শিবসেনার প্রতীক তির-ধনুক থাকছে না। খোলাখুলি জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর, এতেই অর্ধেক যুদ্ধ যেন জিতে গিয়েছে শিণ্ডের সেনা ও বিজেপি। এমনটাই মনে করছেন মহারাষ্ট্র বিজেপির নেতৃত্ব।
এতদিন শিবসেনার প্রতীক দেখে যাঁরা সেনাকে ভোট দিতেন, তাঁরাই এবার নির্দ্ধিধায় ভোট দেবেন শিণ্ডেদের। কারণ, শিণ্ডে বাহিনীকেই শিবসেনার নাম আর প্রতীক দিয়েছে কমিশন। এতে উদ্ধবদের শক্তি এমনিতেই অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। মহারাষ্ট্রবাসীকে তাদের ‘জ্বলন্ত মশাল’ প্রতীক চেনাতে আপাতত নাকানিচোবানি খেতে হবে উদ্ধব-আদিত্যদের। এমনটাই ধারণা বিজেপি নেতাদের।
অন্যদিকে, মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা পড়ল উদ্ধবদের উপর। একেই সরকার থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। এবার দলের নাম ও প্রতীক দুই-ই গেল। একসময় বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙে কংগ্রেস-এনসিপিকে নিয়ে মহাবিকাশ আঘাড়ি বানিয়ে মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় এসেছিলেন উদ্ধব। এবার দলের নাম এবং প্রতীক হারালেন দলেরই বিদ্রোহী বিধায়ক একনাথ শিণ্ডের কাছে। যিনি আবার বিজেপির সঙ্গে জোট করে কুর্সিতে বসেছেন। সুতরাং চার বছর পর আবার জুড়ে গেল শিবসেনা-বিজেপি।
শিবসেনা মুখপাত্র এবং সাংসদ সঞ্জয় রাউত অবশ্য বলেছেন, “আমাদের কোনও চিন্তা নেই। জনতা আমাদের সঙ্গে আছেন। আমরা নয়া প্রতীক নিয়ে নতুন করে শুরু করব। জনতার আদালতে এর বিচার হবে।” সেই সঙ্গে তিনি বলেন, শিবসেনার প্রতীকের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার ডিল হয়েছে। দলীয় প্রতীক ছিনিয়ে নেওয়ার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এনেছেন সঞ্জয় রাউত।
উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠীর নেতা সঞ্জয় রাউত রবিবার মুম্বইয়ে বলেন, ‘শিবসেনার নির্বাচনী প্রতীক (ধনুক এবং তির) কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং এর জন্য এখনও পর্যন্ত দুহাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।
আরও পড়ুন: < নিশীথের বাড়ি ঘেরাওয়ের প্রতিবাদে হুংকার BJP রাজ্য-জেলা সভাপতির, পাল্টা হুঁশিয়ারি তৃণমূলের >
সাংসদ সঞ্জয় রাউত আরও বলেন, “মহারাষ্ট্রের মানুষ অমিত শাহ যা বলছেন তাতে কান দেয় না। শিবসেনা কার ছিল আর কার হবে তা ঠিক করবে মহারাষ্ট্রের মানুষ।" সঞ্জয় রাউত টুইট করেছেন, “আমি নিশ্চিত যে নির্বাচনী প্রতীক এবং নাম পেতে এ পর্যন্ত ২০০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এটি একটি প্রাথমিক পরিসংখ্যান এবং একশো শতাংশ সত্য। শিগগিরই অনেক কিছুই প্রকাশ পাবে। দেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি।"
এর আগে শনিবার, ঠাকরে গোষ্ঠীর নেতা রাউত বলেছিলেন, "আমাদের 'ধনুক এবং তির' চুরি হয়ে গেছে। এর সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত। আমরা কিংপিনকে খুঁজে বের করব এবং তাকে জনগণের সামনে আনব। এই চোরদের সাধারণের সামনে আনব।" তিনি বলেন, “বিজেপি ভোটের জন্য 'ধনুক এবং তির' চুরি করেছে। শিবসেনা কোনও সাধারণ দল নয়, মানুষ যথা সময়ে এর যোগ্য জবাব দেবে। ভবিষ্যতে আবার আমরা ক্ষমতায় আসব।"