একুশের বিধানসভা নির্বাচনে (West Bengal Assembly Election 2021) দলবদলে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়ে গিরিগিটি, দলবদলুর মতো একাধিক তকমা পেয়েছেন। উপরন্তু খাস মমতা-গড় ভবানীপুর কেন্দ্রে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হওয়ার পর সমালোচনাও কম হয়নি রুদ্রনীল ঘোষকে নিয়ে। তৃণমূল ফের ক্ষমতা আসার পর নীরবেই ছিলেন মাস দুয়েক। ফিরেছেন পুরনো নেশা-পেশার কাছে। তবে এবার দীর্ঘদিন বাদে ফেসবুকে লম্বা-চাওড়া পোস্ট করলেন। নিশানায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বিজেপির পরাজিত প্রার্থী রুদ্রনীল ঘোষের (Rudranil Ghosh) মন্তব্য, "জনসাধারণের রক্তজল করা ট্যাক্সের টাকা ক্লাবকে দেবেন না।"
আসলে সদ্য নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী ২৫ হাজার ক্লাবকে ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তাতেই আপত্তি তুলেছেন রুদ্রনীল। হিসেব কষে দেখিয়ে দিয়েছেন, ২৫,০০০ ক্লাবকে ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার মানে হিসেব দাঁড়ায়- ২৫০০০×৫,০০০০০= ১২৫ কোটি টাকা। এরপরই মমতাকে উদ্দেশ্য করে সাধারণ নাগরিক হিসেবে অভিনেতার প্রশ্ন, "কার টাকা? আপনার? আপনার দলের? না, আমাদের টাকা। বাংলার সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকা! যাদের বাড়ি বানাবার বা উন্নয়নের বা ত্রাণের টাকা এলেও চুরি হয়ে যায় দিনের পর দিন প্রকাশ্যে। আপনার পুলিশ নির্দেশ পায় না সেই চোরদের জেলে ভরার! শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে বাংলার জনগন। প্রতিবাদ করতে গেলেই মিথ্যে কেসে ফেঁসে যাওয়ার ভয় যে সবার বুকে! তাই চুপ সবাই।"
এখানেই থামেননি রুদ্রনীল। রাজ্যে বেকারত্ব প্রসঙ্গ তুলে লিখেছেন, "দুটো করোনার ধাক্কায়, ঝড়ের দাপটে কাজ হারিয়েছে যে অগণিত মানুষ, ৫-৬ বছর ধরে চাকরির জন্য অন্দোলন বিক্ষোভে রাস্তায় বসে আছে যে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার যুবক, "…শ্রী" অনুদানে বাঁচার অভ্যাস থেকে স্বসম্মানে স্বনির্ভর হতে চাইছে যে মেয়েগুলো- এই টাকাটা তাদের টাকা। তার ও তার পরিবারের রক্ত জল করা ট্যাক্সের টাকা। এ রাজ্যে ডোমের চাকরির জন্য ৮০০০ আবেদন পত্র পড়েছিল মাত্র কয়েকদিনে। মাইনে ১৫ হাজার, তাও পার্মানেন্ট নয় এই চাকরি। এইট ক্লাস পাশ করা চাকরি পেতে পচা গলা মৃতদেহের সাথে সময় কাটাতে রাজি ছিল মাষ্টার ডিগ্রি বা ইঞ্জিনিয়ার পাশ করা বেকার যুবকরা। এমন কি ৭৪ জন মহিলাও আবেদন করেছিলেন ডোম হতে! খুব সহজ কি এই ঘটনাটা? মানি, কোনও কাজ ছোট নয়। কিন্তু কোন আর্থিক অবস্থায় পড়লে চুরি জোচ্চুরিতে না ঢুকে এই কষ্টদায়ক চাকরির জন্যেও হুড়োহুড়ি পড়ে ম্যাডাম? এই টাকাটা এদের সবার টাকা।"
<আরও পড়ুন: ‘ইন্ডাস্ট্রির ভালো করতে চেয়েছিলাম, সুযোগ দিল না’, আক্ষেপে BJP ছাড়ছেন অনিন্দ্য>
উল্লেখ্য, ক্লাবগুলিকে মুখ্যমন্ত্রীর দান-খয়রাতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিনেতার মন্তব্য, "মেনে নিলাম সামনে কর্পোরেশন বা উপনির্বাচন হতে পারে, তাই বলে প্রতি এলাকায় ক্লাবের ছেলের হাতে রাখতে অন্যায়ভাবে জনগনের কষ্টের টাকা তুলে দেবেন? এটা খেলা করার সময়? যার পেটে ভাত নেই সে খেলতে যায় কোন মুখে?"
এরপরই রুদ্রনীল ঘোষ লিখেছেন, "টাকা বিলিয়ে ক্যাডার কিনতে হলে দলের টাকা খরচ করুন, কেউ কিচ্ছু বলতে পারবে না। আর সততার সাথে বাংলার বিন্দুমাত্র উন্নয়ন করতে চাইলে এই টাকায় চাকরি দিন বেকার ছেলেমেয়েদের। এই ২৫ হাজার ক্লাবের ১টা করে শিক্ষিত ছেলেকেও চাকরি দিন অন্তত।"
"মানুষ আবার ক্ষমতায় এনেছেন বলে মানুষের টাকা দিয়ে যা খুশি করবেন না দয়া করে। শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়েদের চোখের জল আছে এই টাকায়। ক্লাবের ফূর্তি বা আনন্দের বিনিময়ে তাদের হাতে রাখতে আর ভোট কব্জা করতে এই টাকার ব্যবহার বন্ধ করুন। বাংলা যে আসলে বিপদে আছে তা সব থেকে বেশি আপনি জানেন", মত অভিনেতার। পোস্টের শেষে নিজেকে "নাগরিক রুদ্রনীল ঘোষ" বলে উল্লেখ করতেও ভোলেননি গেরুয়া শিবিরের তারকা সদস্য।
এপ্রসঙ্গে উল্লেখ্য, রুদ্রনীলের বিজেপি যোগে হাজারও সমালোচনা হলেও নেটিজেনদের একাংশ কিন্তু এক্ষেত্রে অভিনেতাকে সমর্থনই জানিয়েছেন। পোস্টের কমেন্ট বক্সে চোখ রাখলেই তা আরও স্পষ্ট হয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন