'ম্যান মেড বন্যা'। প্রায় ২১-২২ বছর আগে রাজ্যজুড়ে ভয়ঙ্কর বন্যা হয়েছিল। সেজন্য বাম সরকারকে দায়ী করেছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ করে বলেছিলেন সেবারের বন্যা 'ম্যান মেড'। অর্থাৎ সরকার কাজ না কারার জেরেই ২০০০ সালে পশ্চিমবঙ্গে বন্যা হয়েছিল।
তারপর থেকে বিরোধী নেত্রী হিসাবে একাধিকবার 'ম্যান মেড বন্যা'র তত্ত্বে কখনও জ্যোতি বসু আবার কখনও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকারকে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
শুধু বিরোধী হিসাবেই নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতাও এই নিয়ে রাজ্যে দু'বার ম্যান মেড বন্যার অভিযোগ করেছেন। তবে, এক্ষেত্রে তাঁর নিশানায় বদল হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের তীর এবার কেন্দ্রের মোদী সরকার। ২০১৭ সালের জুলাইতেে জলে ভেসেছিল হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর। তখন পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই দাঁড়িয়েই রাজ্যের সেই সময়ের বন্যা পরিস্থিতিকে ‘ম্যান মেড’ বলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেদিন তিনি বলেছিলেন, 'বৃষ্টি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু, প্রকৃতির রোষে বন্যা হয়নি। আচমকা ডিভিসি জল ছেড়েছে, তাই বন্যা হয়েছে। মানুষ প্রস্তুত ছিলেন না। তাই গুছোতে পারেননি। এটা ম্যান মেড বন্যা নয়তো কী?'
আরও পড়ুন- রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মোদী-মমতা কথা! ‘ম্যান মেড বন্যা’, ফোনেই সরব মুখ্যমন্ত্রী
প্রায় বছর চারেক পর, এদিনও রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির জন্য মমতার কাঠগড়ায় সেই ডিভিসি। বুধবার সড়ক পথে রাজ্যের বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার পথেই মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যে অতিরিক্ত বৃষ্টি হচ্ছে কিনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যের কাছে তা জানতে চান তিনি। জবাবে অতিরিক্ত বৃষ্টি হচ্ছে না বলেই জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই রাজ্য়ে প্লাবন পরিস্থির জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করেন তিনি। মোদীকে সরাসরি বলে দেন, বাংলার এই পরিণতি 'ম্যান মেড'।
অভিযোগের নেপথ্যে মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, 'জলাধারের পলি তোলার কাজ পর্যাপ্তভাবে হয় না। ফলে মাইথন, পাঞ্চেত সহ ডিভিসির তিনটি জলাধারের নাব্যতা কমেছে। জলধারণ ক্ষমতাও কমে গিয়েছে। এটা না হলে ২ লক্ষ কিউসেক জল ধরতো সেগুলোতে। কিন্তু এসব না হওয়ায় রাজ্যের সঙ্গে পরামর্শ না করে ডিভিসি নিজেদের ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত জল ছাড়ছে। প্রতিবার সুরাহার জন্য কেন্দ্রকে চিঠি দিলেও কাজ হয় না। ফলে বর্ষাকালে প্রতি বছর হাজারে হাজারে মানুষ অসুবিধার মধ্যে পড়ছেন।'
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে টুইটারে পিএমও-র তরফে জানানো হয়েছে, "বাঁধ থেকে ছাড়া জলে বাংলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বন্যা কবলিত এলাকায় সকলে যাদে সুস্থ ও নিরাপদ থাকেন, তার জন্য প্রার্থনা করছেন প্রধানমন্ত্রী।"
গত সপ্তাহ থেকে রাজ্যজুড়ে বৃষ্টিপাত চলছে। হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর সহ দক্ষিণ বঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। জলমগ্ন হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল ও হুগলির খানাকুল। বন্যায় উদয়নারায়ণপুরে এক কিশোরীর প্রাণহানীও হয়েছে। বহু বাড়িঘর জলের তলার। হাজারে হাজারে মানুষ স্কুলবাড়ি, ত্রাণ শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন। চরম অসুবিধার মধ্যে দিন কাটছে তাঁদের। মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী মোদীকে জানিয়েছেন, কোটি কোটি টাকার ফসল ও শস্যহানি হয়েছে। বেহাল রাস্তাঘাট বিদ্যুৎ পরিষেবা। এসবের রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে তিনি দেবেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন