সম্প্রতি ঝাড়গ্রামের পূর্ণাপাণি গ্রামে পর পর ৭ জন শবর সম্প্রদায়ের আদিবাসী মানুষের মৃত্যুর ঘটনা রাজ্য সরকারকে বেশ কিছুটা বিপাকে ফেলেছে। পরিস্থিত সামাল দিতে রাজ্য় প্রশাসনের তরফ থেকে নড়েচড়া শুরু হয়েছে। বিরোধীরা এমন হাতে গরম ইস্যু কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে শুরু করেছে নিজেদের সাধ্যানুযায়ী। গ্রামে গিয়ে শবর সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলা শুরু হয়েছে বভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তাদের গণসংগঠনের তরফে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহলে খারাপ ফলের পর এই মৃত্য়ু নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এমনকী এই বিষয়ে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়েছে। এই অবস্থায় পরিস্থিতি হাত থেকে পুরোপুরি যাতে বেরিয়ে না যায়, সে জন্য সচেষ্ট তৃণমূল সরকার। আগামী সপ্তাহে সেই জঙ্গলমহল সফরে যাচ্ছেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়।
২৬ নভেম্বর ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্য়মন্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি উপভোক্তাদের সরকারি দ্রব্য় প্রদান অনুষ্ঠানেও হাজির থাকবেন। এরপর ২৭ নভেম্বর পুরুলিয়া ও ২৮ নভেম্বর বাঁকুড়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্য়মন্ত্রী। পুরুলিয়ায় হিন্দিভাষীদের একটি অনুষ্ঠানেও হাজির থাকার কথা রয়েছে তাঁর। জঙ্গলমহলের কাঁটা দূর করতে যে তাঁকেই উদ্য়োগ নিতে হবে তা ভাল করেই টের পাচ্ছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। তিন জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের কাজের খতিয়ান তৈরি করতে কালঘাম ছুটছে।
আরও পড়ুন, শবর-মৃত্যু নিয়ে বিধানসভায় হইচই, অধিবেশন বয়কট বাম-কংগ্রেসের
এবারের গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে তুলনামূলক ভাবে জঙ্গলমহলের জেলাগুলোতে ভাল ফল করেছে গেরুয়া শিবির। যার ফলে রীতিমত বিব্রত হতে হয়েছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসকে। জঙ্গলমহলের লোকসভার আসন নিয়ে চিন্তায় রয়েছে শাসক দল। যেখানে ৪২-এ ৪২ -এর ভাবনা রয়েছে সেখানে জঙ্গলকাঁটায় বিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতে মুখ্য়মন্ত্রীর এই সভাগুলো ভরসা বলে মনে করছে অভিজ্ঞমহল।
ঝাড়গ্রামের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা বলেন, ‘‘পূর্ণাপাণির শবরদের মৃত্য়ুর কারণ নিয়ে অহেতুক জলঘোলা করছে বিরোধীরা। মৃতেরা সকলেই কোনও না কোনও অসুখে ভুগছিলেন। সরকারি প্রকল্প না পাওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। আমি রোজই খোঁজখবর নিচ্ছি। শনিবার শবরদের গ্রামে গিয়ে খোঁজ নেব। মুখ্য়মন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠক ও সভার জন্য় জেলায় আসছেন।’’
পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর একাধিকবার ঝাড়গ্রাম ছুটে গিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। নানারকম দৌত্য়ের পরেও দলের চাপা ক্ষোভ মেটাতে পারেননি দলীয় নেতৃত্বের একাংশ। কোর কমিটি গঠন করে সংগঠন চালাতে হচ্ছে। এর মধ্যে শবরদের মৃত্য়ুর খবর প্রকাশ্য়ে এসে পড়ায় দলের বিড়ম্বনা বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই।
এমনকি পুরুলিয়া ও বাঁকুড়াতেও ক্ষোভের আগুন মেটাতে উদ্য়োগ নিতে হয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমোকে। ১৬ নভেম্বর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলীয় সভায় গরিব মানুষদের সঙ্গে খাটিয়ায় বসে গল্প করতে বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা দুটাকা কিলো চালসহ সরকারি প্রকল্প পাচ্ছেন কি না সে বিষয়ে খোঁজখবর নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে ঝাড়গ্রাম জেলায় তৃণমূল কংগ্রেস সাংগঠনিক ক্ষেত্রে ব্য়াপক রদবদল ঘটিয়েছে। নতুন মুখেদের নেতৃত্বে বসানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও জেলা জুড়ে বদলি করা হয়েছে। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে একাধিক আমলাকে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঠিক পর পরই এ ঘটনা ছিল বেশ চোখে পড়ার মত। এবারের সফরে প্রশাসনের নতুন টিম কেমন কাজ করছে তা খতিয়ে দেখবেন মুখ্য়মন্ত্রী। সরকারি প্রকল্পের প্রাপ্য যথাযথ জায়গায় না পৌঁছলে তা বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক মহলের মতে, জঙ্গলমহলে প্রশাসনিক প্রকল্পের বাস্তব রূপায়ণের দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছে শাসকদল।