Advertisment

শবরীমালা বিক্ষোভের জেরে উত্তাল কেরালা

জনজীবন স্তব্ধ করে দেওয়ার ডাক দিয়েছিল সংঘ-সমর্থিত 'শবরীমালা অ্যাকশন কাউন্সিল'। তার জেরে দিনভর ব্যাপক হিংসার সাক্ষী থাকল কেরালা। ভাঙচুর হল ৭৯ টি সরকারি বাস, গ্রেফতার হলেন ৭৪৫ জন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

শবরীমালা ইস্যুতে অগ্নিগর্ভ কেরালা। দুই মধ্যচল্লিশের মহিলার শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশের প্রতিবাদে 'সকাল থেকে সন্ধে' রাজ্যজুড়ে 'শাটডাউন', অর্থাৎ জনজীবন স্তব্ধ করে দেওয়ার ডাক দিয়েছিল সংঘ-সমর্থিত 'শবরীমালা অ্যাকশন কাউন্সিল'। তার জেরে দিনভর ব্যাপক হিংসার সাক্ষী থাকল কেরালা। ভাঙচুর হল ৭৯ টি সরকারি বাস, গ্রেফতার হলেন ৭৪৫ জন।

Advertisment

বিজেপি এবং কংগ্রেস, উভয় দলেরই সমর্থিত এই হরতাল নতুন নয়। সুপ্রিম কোর্ট সব বয়সের মহিলাদের শবরীমালায় প্রবেশের ছাড়পত্র দেওয়ার পর এই ইস্যুতে এটি চতুর্থ হরতাল।

publive-image কোচি শহরে প্রতিবাদ মিছিল। ফাইল ফটো

আজ হিংসা ব্যাপক আকার নেয় চন্দ্রন উন্নিথান নামের এক বিজেপি সমর্থকের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসার পর। চন্দ্রন পাথানমথিতা জেলার পাণ্ডালমে হরতাল ঘিরে হিংসায় আহত হয়েছিলেন। দ্রুত হিংসা ছড়ায় পালাক্কাড, ত্রিচুর, কোজিকোড, তিরুবনন্তপুরম, কান্নুর, কাসাড়গোড এবং মালাপ্পুরম জেলায়।এই ইস্যুতে দুই বিবাদী পক্ষের সংঘর্ষের জেরে ৫৫৯ টি মামলা রুজু করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন ৬২৯ জন।

আক্রান্ত হয়েছেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা, রেহাই পাননি মহিলারাও। জখম হয়েছেন ৩১ জন পুলিশকর্মী। নেদুমানগাডুতে আক্রান্ত হয়েছে সিপিএম-এর একাধিক পার্টি অফিস। পালাক্কাডে সিপিএম-এর জেলা দফতরও ছাড় পায়নি। সিপিএম নেতাদের বাড়িতে বোম পড়েছে। সিপিএম এবং বিজেপি সমর্থকদের সংঘর্ষের খবর এসেছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়েছে পুলিশ।

বিন্দু এবং কনকদুর্গা নামের দুই সদ্য চল্লিশের কোঠায় পা দেওয়া মহিলা বুধবার পুলিশি প্রহরায় শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করেন। সেই খবর জানাজানি হতেই তেতে ওঠে কেরালার আবহাওয়া।মন্দির কর্তৃপক্ষ এক ঘন্টার জন্য মন্দির বন্ধ করে দেন 'শুদ্ধিকরণের' উদ্দেশ্যে।

বিষয়টি গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। 'ইন্ডিয়ান ইয়ং লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের' পক্ষে আইনজীবী পিভি দীনেশ মন্দিরের পুরোহিতের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং বিচারপতি এস কে কল-এর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, জরুরি ভিত্তিতে নয়, মামলাটির শুনানি হবে ২২ জানুয়ারি।

ক্রমবর্ধমান হিংসাকে থামাতে কেরালা পুলিশ 'অপারেশন ব্রোকেন উইন্ডো' নাম দিয়ে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। হিংসায় জড়িতদের চিহ্নিত করে তালিকা পাঠানো হচ্ছে জেলায় জেলায় পুলিশ প্রশাসনের কাছে। যাঁরা হিংসা এবং সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়াচ্ছেন, ডিজিটাল টিম তৈরী করে তাঁদের ফটো অ্যলবাম বানানো হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা এবং পর্যটন সংস্থাগুলি যদিও এই হরতালের বিরোধিতা করেছিল, অধিকাংশ জায়গায় দোকানপাট আজ বন্ধই ছিল রাজ্যে। কোজিকোডে কিছু দোকান খোলার পর জোর করে তা বন্ধ করে দেয় হিন্দুত্ববাদীরা। রাজ্যে আজ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ছিল। কিন্তু কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজ খোলেনি।

ঘটনার তীব্র নিন্দা করে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন দায়ী করেছেন বিজেপি এবং আরএসএস-কে, বলেছেন, "রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চক্রান্ত করা হচ্ছে। সংঘ পরিবারের সমর্থকরা পুলিশকে আক্রমণ করেছে। গাড়ি ভেঙেছে। কড়া হাতে এই হিংসা দমন করা হবে। সরকার এসব মেনে নেবে না।"

অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতা রমেশ চেন্নিথালা গোটা ঘটনার জন্য বাম সরকারকে দায়ী করে বলেছেন, "এটা হওয়ারই ছিল, ক্ষমতায় বোধবুদ্ধিহীন লোকজন থাকলে এমনই হয়। বিজয়নকেই দায় নিতে হবে, কারণ, তাঁর ভুল নীতির জন্যই রাজ্যে সংঘ পরিবার তাণ্ডব চালানোর জমি তৈরি করতে পেরেছে।”

supreme court kerala Pinarayi Vijayan Sabarimala
Advertisment