তিনি যে যাবেন সে কথা জানাই ছিল। কিন্তু, গিয়েই যে এমন বেনজির অভ্যর্থনা পাবেন তা তিনিও কল্পনা করে উঠতে পারেননি। তাঁর 'গুরু' তথা বঙ্গ রাজনীতির অধুনা 'চাণক্য'ও যা পাননি, মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেই তিনি তা পেয়ে গিয়েছেন। যোগদান লগ্নে 'অমিত স্পর্শ' পেয়ে তিনি রীতিমতো আপ্লুত। তবে নতুন পতাকা হাতে তুলে নিলেও সদ্য প্রাক্তন নেত্রীর প্রতি আজও তিনি 'শ্রদ্ধাশীল'। সব মিলিয়ে বহু প্রতিক্ষিত, বহু নাটকীয় যোগদান পর্ব সেরে ফেলার পর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে মন খুলে কথা বললেন তিনি, যাঁর দু'হাত সমান চলে, যিনি বেশ কিছুদিন দু'হাতে দুটি দল করেছেন এবং শেষ মুহূর্তে একটা পতাকা ফেলে আরেকটিকেই আঁকড়ে ধরেছেন, সেই সব্যসাচী দত্ত।
আরও পড়ুন: পুজোয় ১৫০টা শাড়ি পেয়েছি, শোভনদা একটা দিয়েছে: বৈশাখী
প্রসঙ্গঃ অমিত স্পর্শ
আমি রীতিমতো শিহরিত-আপ্লুত-অভিভূত। অমিত শাহ গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দিয়েছেন, জড়িয়ে ধরেছেন! আমার রীতিমতো শিহরণ হয়েছে। এটা তো নিঃসন্দেহে একটা অন্যরকম অনুভূতি। যোগদানের পর অনেকক্ষণ কথা হয়েছে তাঁর সঙ্গে। তাঁর সামনে আমাকে যোগদান করিয়ে ওই মঞ্চে আমায় যে ভাষণ দিতে বলা হবে, তা ভাবতে পারিনি, আমি আপ্লুত।
উল্লেখ্য, তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগদানের ক্ষেত্রে বঙ্গের কোনও নেতাই অমিত শাহের স্পর্শ পাননি। অথচ, বিজেপি সভাপতির উপস্থিতিতেই মঙ্গলবার পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র। স্বয়ং শাহই তাঁকে অঙ্গবস্ত্র পরিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন ভরা সভায়। এরপর বক্তৃতাও দেন সব্যসাচী, আর তখনই শাহের কাছে আর্জির সুরে তিনি বলেন, ‘‘কাশ্মীরকে যেভাবে ঠান্ডা করেছেন, বাংলাকেও ঠান্ডা করুন’’।
EXCLUSIVE: ‘মমতার সঙ্গে কেন কথা বলব? বিজেপিতে যোগ দিতে যাইনি’
আরও পড়ুন: বৈশাখীকে ‘চরম হেনস্থা-গালিগালাজ’, কলেজে ধুন্ধুমার
'মমতা দি'র সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে কিন্তু তৃণমূলকে মিস করব না'
তাঁর (মমতা) সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিশ্চয়ই থাকবে। তাঁকে শ্রদ্ধা করতাম, সেই শ্রদ্ধার সম্পর্ক নিশ্চয়ই থাকবে আগামী দিনেও। তৃণমূলের অনেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তবে তৃণমূলকে মিস করার সেরকম কোনও ব্যাপার নেই।
বিজেপি দলটা কেমন বুঝছেন?
এই দলে অনেক নিয়মানুবর্তিতা রয়েছে, সুশৃঙ্খল দল।
তৃণমূলে কি নিয়মানুবর্তিতার অভাব ছিল?
থাক, এখন আর এসব না আলোচনা করাই ভাল। এ নিয়ে এখন কথা বলা ঠিক হবে না।
আরও পড়ুন: বাংলায় হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের বেছে বেছে তাড়াব: শাহ
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের মুখে সল্টলেকে সব্যসাচীর বাড়িতে মুকুল রায়ের লুচি-আলুর দম খাওয়া নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয় বঙ্গ রাজনীতিতে। মুকুল-সব্যসাচীর ঘনিষ্ঠতা একেবারেই ভাল চোখে দেখেননি তৃণমূল নেতৃত্বে। তখন থেকেই তৃণমূল-সব্যসাচীর সম্পর্কে ফাটলের সূত্রপাত। এরপর থেকে নানা সময় দলের সঙ্গে সব্যসাচীর দূরত্বের রাস্তা যেমন প্রশস্ত হয়েছে, তেমনই গেরুয়াশিবিরের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বেডড়েছে। যার জ্বলন্ত উদাহরণ ছিল সব্যসাচীর গণেশ পুজো বা মোদীর জন্মদিনে সব্যসাচীর যজ্ঞানুষ্ঠান। সব্যসাচীর এসব কীর্তিকলাপে তাঁর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা ব্যাপক জল-হাওয়া পেয়েছিল। আর সেই জল্পনাই পুজোর মুখে সত্যি হল। নতুন রাজনৈতিক দৌড় শুরু করার পর সব্যসাচীর মন্তব্য, ‘‘দল (বিজেপি) যা দায়িত্ব দেবে করব’’।