যত দিন গড়াচ্ছে, সব্যসাচী দত্তের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের ঘনিষ্ঠতা ততই প্রকট হচ্ছে। দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়দের সঙ্গে নিজের গণেশ পুজোয় মেতে ওঠার পর সেদিনই রাতে তৃণমূলের একদা ‘বাহুবলী’ নেতা তথা বর্তমান বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংকে হাসপাতালে দেখতে গেলেন সব্যসাচী। যা ঘিরে আবারও সব্যসাচীর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা বাড়ল। উল্লেখ্য, শ্যামনগরে রবিবার পার্টি অফিস দখল ঘিরে গোলমাল বাঁধে। যে ঘটনায় মাথা ফাটে অর্জুনের। এরপরই ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সূত্রের খবর, সোমবার রাত পৌনে ১০টা নাগাদ কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে অর্জুনকে দেখতে যান রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল বিধায়ক। প্রায় আধ ঘণ্টা কথা হয় তাঁদের। তবে কী নিয়ে কথা হয়েছে, এ নিয়ে কেউই মুখ খোলেন নি। দিলীপ-মুকুল রায়দের সঙ্গে গণেশ পুজোর পর সোমবার রাতে অর্জুনের সঙ্গে সব্যসাচীর সাক্ষাৎ ঘিরে বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়রের বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা বলেই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
আরও পড়ুন: মুকুলের খেলা? দেবশ্রীকে কে নিয়ে গিয়েছিলেন বিজেপি দফতরে, রহস্যভেদ করলেন বৈশাখী!
উল্লেখ্য, সব্যসাচীর গণেশ পুজোর মণ্ডপেও চমক ছিল যথেষ্ট। পদ্মফুলের আদলে তৈরি করা হয়েছে প্যান্ডেল। পাশাপাশি সব্যসাচীর গণেশ পুজোয় দিলীপ-মুকুল-অরবিন্দ মেননের উপস্থিতি জল্পনা দ্বিগুণ করেছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এতদিন শুধুমাত্র মুকুল রায়ের সঙ্গেই বারবার দেখা গিয়েছে সব্যসাচীকে। কখনও মুকুলের সঙ্গে পাত পেড়ে লুচি-আলুর দম খেয়েছেন সব্যসাচী, তো কখনও পরোটা-ডাল খেয়েছেন। আবার কখনও সব্যসাচীকে ‘দাদা’র মতো আগলেছেন মুকুল। কিন্তু মুকুলের পাশাপাশি দিলীপ ঘোষ, অর্জুন সিং কিংবা অরবিন্দ মেননের মতো বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে যে ভঙ্গিতে সোমবার সব্যসাচীকে দেখল বঙ্গ রাজনীতি, তাতে তাঁর বিজেপি যোগের রাস্তা ক্রমশ তরান্বিত হচ্ছে বলেই ব্যাখ্যা রাজনৈতিক কারবারিদের একাংশের।
-->আরও পড়ুন: মান ভাঙালেন মুকুল, ‘বিজেপিতেই শোভন-বৈশাখী’
বিজেপির সঙ্গে তাঁর যেমন ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে, তেমনই নিজের দল তৃণমূলের সঙ্গে বাড়ছে দূরত্ব। মুকুলের সঙ্গে সব্যসাচীর ঘনিষ্ঠতা যেমন মেনে নেয়নি তৃণমূল, তেমন আবার বারবার নিজের দলের অবস্থানের বাইরে গিয়ে মুখ খুলেছেন সব্যসাচী। কয়েকদিন আগেই ৩৭০ ধারা ইস্যুতে কার্যত তৃণমূলের অবস্থানের বিরুদ্ধে গিয়ে সব্যসাচীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, "ভারতবাসী হিসেবে আমরা গর্বিত। নতুন করে আজ দেশ স্বাধীন হল। ১৯৪৭ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত কাশ্মীরে জাতীয় পতাকা দেখি নি। এবার প্রথমবার কাশ্মীরে তেরঙ্গা উড়েছে। ৭৩ বছর পর কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, ভারত অটুট এটাই প্রমাণিত হল। ব্যক্তি স্বার্থ নয়, দেশের স্বার্থ ভেবে দেখা উচিত।"
এর আগেও একাধিকবার বিভিন্ন ইস্যুতে দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন সব্যসাচী। ক’দিন আগে বিজেপি রাজ্য সহ-সভাপতি ভারতী ঘোষও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেছিলেন, "শোভন গেছে, সব্যসাচী যাব যাব করছে, তৃণমূল দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিকভাবে।" এই প্রেক্ষিতে সব্যসাচী-অর্জুন সাক্ষাৎ রাজনৈতিকভাবে অর্থবহ বলেই মনে করা হচ্ছে।