তিনি কি তৃণমূল ছাড়ছেন? বিজেপিতে যোগ দেবেন? গত কয়েকদিনে তাঁর দলবদলের জল্পনা ঘিরে জোর চর্চা বাংলার রাজনীতির অলিন্দে। সেই বহুলচর্চিত সব্যসাচী দত্ত এবার সব জল্পনা উড়িয়ে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করলেন। বুধবার দমদম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের সভায় যোগ দিয়ে জল্পনা উড়িয়ে তৃণমূলের সব্যসাচী বললেন, "জাহাজ ছেড়ে পালানোর মানসিকতা আমার নেই।" একইসঙ্গে তাঁর বিস্ফোরক অভিযোগ, "তৃণমূলে ভাল জায়গা করার সুযোগের চেষ্টা করেছেন যাঁরা, পেরে উঠছেন না, তাঁরা দুঃখে এসব করিয়েছেন।"
ঠিক কী বলেছেন সব্যসাচী? বুধবার সৌগত রায়ের জনসভায় এসে বিধাননগরের মেয়র বলেন, "যতদিন দল করব, বীরের সঙ্গে সামনে থেকে করব। কোনও ঢাকঢাক গুড়গুড় করে নয়। কোনও অন্ধকারে গিয়ে নয়। আমি যা করি সামনে থেকে করি। জাহাজ ছেড়ে পালানোর মানসিকতা নেই।" এরপরই ক্ষোভের সুরে সব্যসাচী বলেন, "বিগত দিনে যাঁরা, আমার জন্য হয়তো, তৃণমূলে ভাল জায়গা করার সুযোগের চেষ্টা করছেন, পেরে উঠছেন না, তাঁরা দুঃখে এগুলো করিয়েছেন।"
আরও পড়ুন: পাগড়ি মাথায় ‘ভারতমাতা কি জয়’! গেরুয়া সরণিতে সব্যসাচী?
সব্যসাচীর এহেন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দমদমের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায় বলেন, "অপপ্রচার চলছিল যে সব্যসাচীর সঙ্গে আমাদের দলের মতভেদ রয়েছে। আজ সব্যসাচী সভায় এসে প্রমাণ করে দিলেন তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই রয়েছেন। কেউ চক্রান্ত করে তাঁকে তৃণমূল থেকে বাদ দিতে পারবেন না।"
প্রসঙ্গত, সব্যসাচীর সল্টলেকের বাড়িতে একদা তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা তথা বর্তমান বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের যাওয়া নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। সব্যসাচীর বাড়িতে মুকুলের ‘লুচি-আলুর দম’ খাওয়ার পরই বাংলার রাজনীতিতে সব্যসাচীর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা ছড়ায়। লোকসভা ভোটের মুখে সব্যসাচী-মুকুল ঘনিষ্ঠতা একেবারেই ভাল চোখে দেখেন নি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তড়িঘড়ি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বিধাননগরের কাউন্সিলরদের নিয়ে সব্যসাচীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন ফিরহাদ হাকিম, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকরা। বৈঠক শেষে সব্যসাচীকে পাশে দাঁড়িয়ে ফিরহাদ সাফ জানিয়ে দেন, সব্যসাচী তাঁদের সঙ্গেই রয়েছেন।
আরও পড়ুন: 'সব্যসাচী আমার সঙ্গেই আছে', বললেন মুকুল, দেখুন ভিডিও
কিন্তু কিছুদিন পরই সব্যসাচী ফের বলেন, তাঁর বাড়িতে কেউ এসে লুচি-আলুর দম খেতে চাইলে তিনি আতিথেয়তা পালন করবেন। বিধাননগরের মেয়রের এহেন মন্তব্যে ফের তাঁর বিজেপি-যোগের জল্পনা শুরু হয়। এরপর হোলির অনুষ্ঠানে সব্যসাচী প্রকারান্তরে বলেন, "মেয়র থাকি না থাকি, আপনাদের ঘরের ছেলে হয়ে থাকব।" একইসঙ্গে সেদিন সব্যসাচীর মুখে শোনা যায় 'ভারত মাতা কী জয়' স্লোগান। যার জেরে তাঁর তৃণমূল ত্যাগের জল্পনা দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
কয়েকদিন আগে বিধাননগরের ৩১নং ওয়ার্ডে নিজের এলাকাতেই সব্যসাচীকে ভোটের দায়িত্ব না দিয়ে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয় সুপ্রিয় মজুমদারকে। পাশাপাশি গত রবিবার সল্টলেকের বিএফ পার্কে হোলির অনুষ্ঠানে সব্যসাচীকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নি। তবে কি সব্যসাচীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছে তৃণমূল? এ জল্পনাই ছড়ায় বঙ্গ রাজনীতিতে। অন্যদিকে, সব্যসাচীর বিজেপিতে যোগের জল্পনা উস্কে দিয়েছিলেন স্বয়ং মুকুল রায়। জলপাইগুড়িতে মুকুল বলেছিলেন, "সব্যসাচী আমার সঙ্গেই রয়েছেন।"