Advertisment

বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে কোন কোন জায়গার নাম বদলাবে? দেখুন, তালিকা

পশ্চিমবঙ্গের একাধিক অতি পরিচিত এলাকার নাম বদলে দিতে চায় গেরুয়া শিবির। নাম বদলের এই তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। এবার জেনে নিন, কোন কোন জায়গা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
West Bengal news today live updates, bjp, বিজেপি, পশ্চিমবঙ্গের খবর লাইভ

পশ্চিমবঙ্গের একাধিক এলাকার নাম বদলের পরিকল্পনা গেরুয়া শিবিরের।

রাস্তার নাম পাল্টায় একদিন...। রাস্তায় রাজনীতি করে কুর্সি দখলের পর সেই রাস্তার নামই বদলে দেওয়ার নজির এই দেশে একেবারেই বিরল নয়। শুধু কি রাস্তা, রাজনীতির ছোঁয়ায় সহসা বদলে যায় শতাব্দী প্রাচীন জনপদ বা শহরের নামও। দিন কয়েক আগেই ইলাহাবাদ নাম বদলে হয়ে গেল প্রয়াগরাজ। এবার পালা পশ্চিমবঙ্গের নানা শহর ও জনপদের। তবে 'পশ্চিমবঙ্গ' নামটি বদলাতে না চাইলেও, এ রাজ্য়ের একাধিক স্থানের নাম বদলের দাবি জানাচ্ছে গেরুয়া ব্রিগেড। রাজ্যের শাসন ক্ষমতা দখলের পরই নাম বদলের পরিকল্পনা সফল হবে, এ কথা জানলেও ইতিমধ্যেই সাংগঠনিক স্তরে বেশ কিছু জায়গার নাম 'বদলে ফেলেছে' গেরুয়া বাহিনী। তবে বিজেপি-সংঘ পরিবার-বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো সংগঠনগুলির এই 'পরিকল্পনার' মধ্যে 'মৌলবাদী চিন্তাভাবনার প্রতিফলন' দেখছে এ রাজ্যের একাংশ।

Advertisment

এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অতীতে বামেরা পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলাতে চাইলেও এ বিষয়ে তীব্র বিরোধিতা রয়েছে গেরুয়া শিবিরের। তবে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো এ রাজ্যের বেশ কিছু এলাকার নাম পরিবর্তন করতে চাইছে। এ বিষয়ে ভিএইচপি-র মতো সংগঠনগুলি এতটাই অতিসক্রিয় যে প্রশাসনিক স্তরে পত্র বিনিময়ের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই নাম বদল করে ফেলেছে তারা। যেমন, পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুককে 'তাম্রলিপ্ত', উত্তরদিনাজপুরের ইসলামপুরকে 'ঈশ্বরপুর', মুর্শিদাবাদের বহরমপুরকে 'ব্রহ্মপুর' নামেই সাংগঠনিক কাজে মান্যতা দিচ্ছে তারা। তালিকা এখানেই শেষ নয়, রাজ্যের আরও বেশ কিছু এলাকার নাম পরিবর্তনের দাবি রয়েছে এই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির।

আরও পড়ুন- ‘স্বামীর কথায় নুসরত কি বিজেপিতে যাচ্ছেন?’

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পূর্বাঞ্চলীয় সম্পাদক (সংগঠন) শচীন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, "ব্রিটিশ ও মুঘলরা যারা একদিন এখানে রাজত্ব করেছে, তারা চলে গিয়েছে। তাই তাদের দেওয়া নাম অবশ্যই পরিবর্তন হওয়া উচিত। সরকারি মান্যতা না থাকলেও তাম্রলিপ্তকে আমরা সাংগঠনিক জেলা হিসাবে ব্যবহার করে থাকি। লেটার হেডে তাম্রলিপ্ত লিখেই থানা বা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে পত্র আদান-প্রদান করি। তাতে কোনও অসুবিধা হয় না। আমাদের কার্যকর্তারা সহজেই বহরমপুর নয়, ব্রহ্মপুর বলেন। ইসলামপুরও আমাদের কাছে ঈশ্বরপুর। মহাদেববাজার বলছি মহম্মদবাজারকে"। শচীন্দ্রনাথবাবুর কথায়, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে দিতে চাইছেন। কিন্তু 'বাংলা' আমরা মানি না। অন্যদিকে ব্রিটিশরাও অনেক ক্ষেত্রে নাম পাল্টে দিয়েছিল। কিন্তু, ব্রিটিশরা চলে গিয়েছে, ফলে তাদের দেওয়া নাম থাকার কী দরকার। পরাধীনতার গ্লানি মুছে ফেলতে হবে"।

publive-image

রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি বিশ্বপ্রিয় রায়চোধুরিও রাজ্যে নানা স্থানের এই নাম পরিবর্তনের দাবির সঙ্গে সহমত। তিনি সাফ বলেন, "অনেক শহরের নাম বদলের চিন্তা ভাবনা আছে। রাজ্যে আমাদের সরকার ক্ষমতায় এলে অবশ্যই মতামতের ভিত্তিতে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামী ও দেশের জন্য যাঁরা কাজ করেছেন, সেইসব কবি-সাহিত্যিক-ঋষিদের নামে নামকরণ করার কথা ভাবা হবে। রাস্তাঘাট-সহ বিভিন্ন জায়গার নামকরণ করার চেষ্টা করব"। এদিকে 'পশ্চিমবঙ্গের জন্য' সংগঠনের আহ্বায়ক মোহিত রায় বক্তব্য, "যেসব স্থানের নাম পাল্টে দেওয়া হয়েছিল, তা ফিরিয়ে আনতে হবে। রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হলে আমরা ওই সব স্থানের নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করব"।

আরও পড়ুন- ‘এটা বাংলার বিধানসভা নয়’, কাটমানি তরজায় উত্তাল লোকসভাকে স্মরণ করালেন স্পিকার

অধ্যাপক তথা পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি এই ধরনের নাম পরিবর্তনের পরিকল্পনাকে মৌলবাদী চিন্তাভাবনা বলেই মনে করছেন। তিনি বলেন, "ওঁরা (গেরুয়াশিবির) ইতিহাস বোঝেন না। ইতিহাসের ভাবনা কিছু নেই। মুসলিমরা ছিল শাসকদল। এখানে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা বহুকাল ছিলেন। তাঁদের কৃষ্টি তো আর উঠে যায়নি। কৃত্তিবাস সৃষ্টি হয়েছিল ইলিয়াস শাহের সময়। সিরাজ-উদ-দৌলাকে ভুলে যাব! এটা একটা মৌলবাদী ভাবনা ছাড়া কিছু না। মুসলিম মৌলবাদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় আর এক মৌলবাদী চিন্তাভাবনা"। তাঁর কথায়, "ওরা বাংলা নামটাই দিলেন না। আমরা বাাংলা নামের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ওরা কি না তাম্রলিপ্তের চেষ্টা করছে!"

ক্ষমতার হাত বদলের সঙ্গে সঙ্গে নাম বদলের রাজনীতি এ দেশের পাশাপাশি দেখেছে পশ্চিমবঙ্গও। যে রং যখন ক্ষমতায় এসেছে, নামকরণে লেগেছে তারই ছোঁয়া। অনেক ক্ষেত্রে আবার 'জনজাতির ভাবাবেগে'র কথা স্মরণে রেখেও পাল্টেছে নাম। তবে সাম্প্রতিককালে দেশ জুড়ে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেখানে নামকরণ বা নাম পরিবর্তন এক ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে কংগ্রেস ও বাম শাসন পেরিয়ে তৃণমূলের আমলেও এমন বহু বদল দেখেছে এ রাজ্য। এবার আরেক দফার পরিকল্পনা। সেক্সপিয়ার যতই লিখে থাকুন, নামে কিবা আসে যায়, তাতে আস্থা নেই রাজনীতির রঙ্গমঞ্চের কুশীলবদের। তাঁরা জানেন, ক্ষমতার রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ঠিক কতটা। তবেই না দখলদারির রাজনীতি।

Advertisment