৩ দিন কেটে গেলেও এখনও খোঁজ মেলেনি নলকোরা ভাঙ্গিপাড়ার দেবদাস মন্ডলের। কোথায় দেবদাস? কী অবস্থায় আছেন? কিছুই জানে না তাঁর পরিবার। এদিকে দেবদাসের ভাই নিমাই মণ্ডলের দাবি, শুধু তিনি ও তাঁর দাদা তৃণমূলের সমর্থক তাই না, যেদিন গ্রামের স্কুলে তৃণমূলের বৈঠক চলছিল সেই সভায় বক্তব্য শুনতেও গিয়েছিলেন নিমাই। আর সেই সভা থেকে বাড়িতে ফিরেই তিনি দেখেন, তাঁর ভাইকে তাড়া করে ভেড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা।
নিমাই জানাচ্ছেন, "আামি ও দেবদাস গান-বাজনার সঙ্গে যুক্ত। আমি তরজা সঙ্গীত করি, আর দাদা বাউল গান করে। তৃণমূল কংগ্রেসের বহু অনুষ্ঠানে অংশও নিয়েছি। আর সেই দল এমন কাণ্ড করল, ভাবতেই পারছি না! জানেন, আমি দিদিকে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে নিজে গানও লিখেছি। সেই গান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেয়েছি। আর এসবের পরিণামে দাদা নিঁখোজ হয়ে গেল (গলায় চরম আক্ষেপের সুর)। খুন করে দেহ লোপাট করে দিল"। কিন্তু, সেদিন ঠিক কী হয়েছিল? নিমাই জানান, জামাই ষষ্ঠীর দিন তিনি স্কুল মাঠে গিয়েছিলেন দলের নেতাদের বক্তব্য শোনার জন্য। মন দিয়ে তিনি বক্তব্য শুনেছেন। মিটিং শেষ হলে বাড়ি ফেরার পথেই গুলি ও বোমার শব্দ শুনতে পায় নিমাই। নিমাই দেখেন, তাঁর দাদাকে একদল লোক তাড়া করে নিয়ে যাচ্ছে। দাদা ও অন্যরা গ্রামের কলা বাগানে লুকিয়ে ছিল। তাঁর অভিযোগ, কর্তব্যরত পুলিশ কর্মী এবং গ্রামের কিছু তৃণমূল সমর্থক তাঁর দাদাকে দেখিয়ে দেয়। তারপর সেখান থেকে তাঁকে ভেড়ির দিকে নিয়ে যায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। সেই থেকেই নিখোঁজ দেবদাস মণ্ডল। নিমাই মণ্ডলের আশঙ্কা, তাঁর দাদাকে খুন করে টুকরো করে ফেলে দেওয়া হয়েছে ওই ভেড়িতেই।
আরও পড়ুন- পথেঘাটে রক্তের দাগ, আতঙ্কে সিঁটিয়ে সন্দেশখালি
তবে নিমাই এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি নিজে তৃণমূলের কট্টর সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও এই ঘটনা কেন ঘটলো তৃণমূলীরা। ছলছলে চোখে নিমাই জানালেন মমতাকে নিয়ে তাঁর লেখা গানের কথা, 'ধন্য আমার বঙ্গমাতা, প্রণাম করি পায়ে'। তিনি বলেন, "আমি নিজে এ ধরনের বেশ কয়েকটা গান লিখেছি। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা জানিয়ে সেই গান আমরা বিভিন্ন সভামঞ্চে উপস্থাপন করেছি। হাততালিও পেয়েছি। বসিরহাট, বারাসত বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল কংগ্রেসের অনুষ্ঠানগুলোতে আমরা আমন্ত্রণ পাই সেই গান গাওয়ার জন্য। দাদা বাউল গান ভালই করতো। তৃণমূলের এমন কোনও ব্রিগেড নেই যেখানে আমরা উপস্থিত হয়নি। ১৯ জানুয়ারির ব্রিগেডেও হাজির হয়েছিলাম। ইচ্ছা ছিল ব্রিগেডের মঞ্চ গান করার"।
আরও পড়ুন- ‘অভিশপ্ত’ জামাইষষ্ঠী, সন্দেশখালি জুড়ে হাহাকার
কিন্তু, তাহলে কেন এমন হল?
এই ঘটনার কোনও ব্যাখা এমনিতে জানা নেই নিমাই মণ্ডলের। তবে এলাকায় কান পাতলে উঠে আসছে একটাই 'কারণ'। শোনা যাচ্ছে, নিমাই-দেবদাসদের ৫৬ নম্বর বুথে প্রায় প্রায় দেড়শো ভোটের লিড পেয়েছিল বিজেপি। আর এতেই তৃণমূলের একাংশ মনে করতে শুরু করে, দেবদাস বিজেপির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে। এই সন্দেহ থেকেই নিমাইয়ের দাদাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে তৃণমূলের গুন্ডারা।