সারাদিনের টানাপোড়েন, কিন্তু সন্ধ্যার একটি বৈঠকেই জট কাটলো। শেষ পর্যন্ত তৃণমূলেই থাকছেন শতাব্দী রায়। আগামিকাল দিল্লিতেও যাচ্ছেন না তিনি।
বৃহস্পতিবারই দলের প্রতি বীরভূমের তৃণমূল সাংসদের ক্ষোভের কথা প্রকাশ্যে আসে। এর ২৪ ঘন্টা কাটতে কাটতেই সংবাদ মাধ্যমে ফের বোমা ফাটান শতাব্দী রায়। তাঁর সঙ্গে দিল্লিতে শাহী সাক্ষাতের সম্ভাবনা জোরাল হয়। আর তাতেই বাড়ে তাঁর বিজেপি যোগের জল্পনা। এরপরই মান ভঞ্জনে সাংসদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। বিকেলে তাঁর বাড়িতে চলে যান তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। এক ঘন্টারও বেশি তাঁদের কথা হয়। আর সন্ধ্যায় শতাব্দীকে নিয়ে ক্যামাক স্ট্রিটে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে যান কুণাল ঘোষ। প্রায় ঘন্টা দেড়েক বৈঠক চলে।
এরপরই সংবাদ মাধ্যমে শতাব্দী রায় বলেন, 'দলের সঙ্গে আছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই তৃণমূলে আছি। আমার যে অভিযোগ–অভিমান ছিল, যে সমস্যা হয়েছিল সেগুলো আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছি। তিনি সমস্যার সমাধান হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।' তবে, দলে কার বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ সে সম্পর্কে প্রকাশ্যে সাংসদ মুখ খুলতে চাননি।
এদিন শতাব্দী রায়ের গলায় শোনা যায় ভোটের আগে ঐক্যবদ্ধ তৃণমূলের কথা। তিনি বলেন, 'এই মূহূর্তে দলকে বিপদে ফেলার বদলে এক সঙ্গে লড়াই করা জরুরি। এ লড়াই সবার লড়াই।'
তিনি কি শনিবার দিল্লি যাচ্ছেন? জবাবে শতাব্দী বলেন, ‘না। আমি দিল্লি যাচ্ছি না।’
তবে, শতাব্দী একটি অসম্পূর্ণ মন্তব্যে কিছুটা হলেও খটকা রয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এই ক’মাস থেকে নিয়ে, শুনে নিয়ে, তার পর আমরা....।’ যদিও বাক্যটি শেষ করতে পারেননি শতাব্দী।
'বেসুরো'হয়ে কী বলেছিলেন শতাব্দী?
শুক্রবার একাধিক সংবাদ মাধ্যমে তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় বলেন, ‘সাংসদ হওয়ার পর আমি অধিকাংশ সময় এলাকার মানুষের সঙ্গে কাটিয়েছি। কিন্তু গত ২ বছর ধরে মানুষের কাছে পৌঁছতে চাইলেও পারছি না। আমি প্রায় এলাকায় যাইনি। আমি কার জন্য যেতে পারছি না? মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। তাই তাদের প্রশ্নের জবাব দেওয়া আমার দায়িত্ব। তারা আমাকে প্রশ্ন করছে, অপনি কি রাজনীতি ছেড়ে দিলেন?’
দলনেত্রীকে ক্ষোভের কথা জানানো নিয়ে কী জানিয়েছিলেন?
উত্তরে শতাব্দী রায়ের মন্তব্য, ‘দলনেত্রীকে ক্ষোভের কথা জানাইনি কারণ, অনেক সময় মনে হয় জানানো যায় না। অনেক সময় মনে হয় জানিয়ে লাভ নেই। অনেক সময় মনে হয় কাকে জানাবো।’ তারাপীঠ উন্নয়ন পর্যদ থেকেও তিনি দু’বার ইস্তফা দিলেও তা গ্রহন করা হয়নি বলে অভিযোগ সাংসদের।
দিল্লিতে গিয়ে শাহী সাক্ষাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে শতাব্দী...
জোর গুঞ্জন যে এবার দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে তৃণমূল সাংসদের সাক্ষাৎ হতে পারে। এ প্রসঙ্গে শতাব্দী বলেছেন, ‘পরিচিত মানুষদের সঙ্গে দেখা হতেই পারে। তবে সেটাকে বৈঠক বলাটা ভুল হবে। আমি বলছি না যে অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করবোই। তবে সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছি না। ওনার সঙ্গে মিটিং করতেই যাচ্ছি এমনটা নয়। দেখা হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।’
কাজের ক্ষেত্রে দলের মধ্যে থেকেই অসুবিধা হচ্ছে বলে মনে করছেন সাংসদ শতাব্দী রায়। যদিও তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, বিজেপিতে যোগদানের ব্যাপারে এখনই তিনি কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। যদিও বৃহস্পতিবার ফেসবুক পোস্ট ও এ দিন তাঁর দিল্লি যাওয়ার খবর, অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রসঙ্গে শতাব্দীর ইঙ্গিতবহ মন্তব্যে তাঁর দলবদল নিয়ে চর্চা তুঙ্গে উঠেছিল।
পরে শুক্রবার বিকেলে শতাব্দী রায়ের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। পরে তিনি সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘শতাব্দী আমার পুরনো বন্ধু। ওঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করেছি। আমার সামনেই শতাব্দীর কাছে মুকুল রায়ের ফোন এসেছিল। দল শতাব্দীর সঙ্গে কথা বলবে।’ অর্থাৎ, শতাব্দী বেসুর হতেই বিজেপি যে তৃণমূল সাংসদকে দলে পেতে মরিয়া সেই ইঙ্গিতও স্পষ্ট করে দেন শাসক দলের মুখপাত্র। প্রকট করার চেষ্টা করেন দল ভাঙানোর যে অভিযোগ তৃণমূল বিজেপির বিরুদ্ধে করছে তা কতটা সত্যি।
যদিও শেষ পর্যন্ত তৃণমূলেই থাকছেন বীরভূমের সাংসদ। স্বস্তি ফিরল জোড়া-ফুল শিবিরে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন