Advertisment

পদোন্নতিতে সংরক্ষণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অস্বস্তিতে রাজনৈতিক দলগুলি

ইউজিসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান এস কে থোরাট বলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরির পদোন্নতিতে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী অংশের নীতি আমি সমর্থন করছি না।’’

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

এম নাগরাজ মামলায় সরকারকে চাকরির পদোন্নতিতে সংরক্ষণের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে হবে বলে যে রায় দেওয়া হয়েছিল, তা নাকচ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

তফশিলি জাতি উপজাতিদের চাকরির পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টে বহাল থাকলেও, সুবিধাভোগী অংশ নিয়ে আদালতের অবস্থান দেশের রাজনৈতিক অংশকে দ্বিধায় ফেলে দিয়েছে।

Advertisment

এতদিন অবধি ওবিসিদের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী অংশের নীতি বহাল ছিল। গত বছরের নির্দেশে ওবিসিদের সুবিধাভোগী অংশের সীমা বাড়িয়ে পরিবারের বার্ষিক আয় ৮ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তার বেশি রোজগার হলে, তাঁরা সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন না বলে স্থির হয়েছিল।

আরও পড়ুন, দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিলেন রঞ্জন গগৈ

তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী অংশ কীভাবে নির্ধারণ করা যাবে তা এখনও স্থির করা যায়নি। সরকারের বক্তব্য, তাঁরা এখনও রায় পরীক্ষ করছেন। তফশিলি জাতি উপজাতিদের সংগঠন এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি। মনে রাখতে হবে এ বছর বেশ কিছ জায়গায় বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে, এবং সংরক্ষণ ইস্যুতে দেশজোড়া আন্দোলনও হয়েছে।

লোক জনশক্তি পার্টির প্রেসিডেন্ট রাম বিলাস পাসোয়ান ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, ‘‘সুবিধাভোগী অংশ নিয়ে এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে আমি সহমত নই।’’ শাসকদল বিজেপির শরিক এই মন্ত্রী বলেছেন, এ ব্যাপারে সরকারি নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করবেন তিনি।

বিজেপি সাংসদ উদিত রাজ শীর্ষ আদালতের চাকরির পদোন্নতিতে সংরক্ষণ বহাল রাখার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁর সংগঠন অল ইন্ডিয়া কনফেডারেশন অফ এসসি এসটি অর্গানাইজেশনস সুবিধাভোগী অংশের বিষয় চালু করার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে।

তিনি বলেছেন, ‘‘এই রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে তফশিলি জাতি উপজাতিদের পশ্চাৎপদতা নিয়ে তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন নেই, তার মানে তফশিলি জাতি উপজাতিরা পিছিয়ে পড়া বলে মেনে নেওয়া হচ্ছে। তাহলে সংরক্ষণের উপাদান হিসেবে আর্থিক পশ্চাৎপদতাকে ভিত্তি করে সুবিধাভোগী অংশ স্থির করা হবে? যদি সুবিধাভোগী এংশের নীতি প্রোয়াগ করা হয়, তাহলে অল ইন্ডিয়া কনফেডারেশন অফ এসসি এসটি অর্গানাইজেশনস নিশ্চিত বাবেই প্রতিবাদ জানাবে।

ইউজিসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান এস কে থোরাট বলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরির পদোন্নতিতে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী অংশের নীতি আমি সমর্থন করছি না।’’

তিনি বলেছেন, ‘‘আর্থিক মানদণ্ড পৃথিবীর কোথাও সদর্থক কর্ম পরিকল্পনার ভিত্তি নয়। সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে। দারিদ্র্য় বিরোধী পলিসি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। যেমন বিদেশি স্কলারশিপের ক্ষেত্রে সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক আর্থিক মানদণ্ড লাগু করেছে। সেটা বোঝা যায়। তফশিলি জাতিদের মধ্যে যাঁদের আর্থিক অবস্থা ভালো তাঁরা স্কলারশিপ পাবেন না। কিন্তু তাঁদের সংরক্ষণ অস্বীকার করা যায় না। উত্তর আয়ার্ল্যান্ডে শিক্ষিত ধনী ক্যাথলিকদের জন্য সদর্থক কর্ম পরিকল্পনা লাগু রয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে মহিলাদের ক্ষেত্রেও, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সদর্থক কর্ম পরিকল্পনা লাগু রয়েছে। তাঁরা তাঁদের লিঙ্গের কারণে ভুক্তভোগী।

থোরাটের আশঙ্কা, সুবিধাভোগী অংশের নীতি লাগু করলে পদোন্নতিতে সংরক্ষণের মূল বিষয়টিই হারিয়ে যাবে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি বলেন, ’’আর্থিকভাবে এগিয়ে থাকা তফশিলি জাতি উপজাতিরা চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্যের মুখোমুখি হতেই থাকবেন। এসসি এসটি কমিশনে এখনও পর্যন্ত এ এবং বি ক্যাটিগরিতে চাকরির পদোন্নতি বৈষম্যের বিষয়ে  ১১ হাজার অভিযোগ জমা পড়ে রয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে আরও কম পদোন্নতি হবে এবং উচ্চপদে সংরক্ষিত ক্যাটিগরিতে আরও কম মানুষ জায়গা পাবেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে এস সি এস টি-তে নিয়োগের ক্ষেত্রেও সুবিধাভোগী অংশের নীতি লাগু করার দাবি বাড়বে।

অল ইন্ডিয়া দলিত রাইটস ফেডারেশনের জাতীয় সভাপতি কে আনন্দ রাওয়ের গলাতেও একই সুর শোনা গেল। তিনি বললেন সুবিধাভোগী অংশের নীতি তফশিলি জাতি উপজাতিদের পক্ষে ক্ষতিকর হবে। ‘‘সুবিধাভোগী অংশের নীতি চালু করা যেতে পারে যখন ১০০ শতাংশ সংরক্ষণ পদ্ধতি রয়েছে। কিন্তু এখন না রাজ্য সরকার, না কেন্দ্রীয় সরকার, কেউই চাকরি দিতে পারছে না। বহু ক্ষেত্রই এখন বেসরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে সংরক্ষণ প্রথা নেই।’’ সুবিধাভোগী অংশের নীতি চালু হলে নিশ্চিতভাবেই ‘‘পরবর্তী কালে তফশিলি জাতি উপজাতি অফিসার আর দেখতে পাওয়া যাবে না’’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

এই সমস্ত আশঙ্কাগুলি বিজেপি নেতৃত্বাধীন এন ডি এ সরকারের দিকে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধেয়ে আসতে পারে। ইতিমধ্যেই তফশিলি জাতি উপজাতি আইন সম্পর্কে শীর্ষ আদালতের রায় নিয়ে গড়িমসি করার কারণে তারা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

এম নাগরাজ মামলায় সরকারকে চাকরির পদোন্নতিতে সংরক্ষণের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে হবে বলে যে রায় দেওয়া হয়েছিল,  তা নাকচ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

তবে নাগরাজ মামলার রায়ের সুবিধাভোগী অংশের বিষয়ে দেওয়া রায় গতকালকের রায়ে বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত। রায়ে বলা হয়েছে, ‘‘নাগরাজ যেখানে তফশিলি জাতি ও তফশিলি উপজাতিদের সুবিধাভোগী অংশের পরীক্ষার কথা বলেছেন... তা কোনওভাবেই ৩৪১ ও ৩৪২ অনুচ্ছেদ অনুসারে সংসদের ক্ষমতাহানি করে না। ফলে আমরা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি যে রায়ের এই অংশ পুনর্পরীক্ষার প্রয়োজন নেই এবং একই সঙ্গে নাগরাজ মামলা সাত সদস্যের বেঞ্চের কাছে পাঠানোর দরকার নেই।’’

এদিনের রায়ে শীর্ষ আদলত বলেছে, সংরক্ষণের উদ্দেশ্য হল পিছিয়ে পড়া শ্রেণি যাতে দেশের অন্য নাগরিকদের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে ’হাতে হাত রেখে’ এগিয়ে যেতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বলেছে, ‘‘যদি ওই শ্রেণির মধ্যেকার সুবিধাভোগী অংশ সরকারি ক্ষেত্রের সমস্ত চাকরি আত্মস্থ করে এবং চিরস্থায়ী ভাবে এরকমটাই চলতে থাকে, তাহলে ওই শ্রেণির অন্যান্যরা সর্বদাই পিছিয়ে পড়ে থাকবেন।’’

Reservation
Advertisment