কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের তিন দিন পরেও মুখ্যমন্ত্রীর নাম নিয়ে দ্বিধায় কংগ্রেস নেতৃত্ব। মঙ্গলবারও (১৬ মে) দিনভর মুখ্যমন্ত্রী (সিএম) পদে কাকে বসানো হবে তা নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা চললেই কোন সমাধান সূত্র মেলেনি। মুখ্যমন্ত্রী পদের দুই দাবিদার সিদ্দারামাইয়া এবং ডি কে শিবকুমার দুজনেই বর্তমানে দিল্লিতে রয়েছেন।
এদিকে এর মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং দলের রাজ্য সভাপতি ডি কে শিবকুমার এবং কংগ্রেস নেতৃত্বের মধ্যে দ্বিতীয় দফার বৈঠক আজ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। জানা গিয়েছে, নবনির্বাচিত বিধায়কদের বেশিরভাগই সিদ্ধারামাইয়াকে সমর্থন করেছেন।
অন্যান্য সিনিয়র নেতারা মনে করছেন কর্ণাটক জয়ের কাণ্ডারি শিবকুমার, কঠোর পরিশ্রমের জন্য তাঁকেই পুরস্কৃত করা উচিত। মঙ্গলবার, দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং রাহুল গান্ধীর মধ্যে হয় এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক, যদিও বৈঠক শেষে দলের হাইকমান্ড মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নিয়ে কোন স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারেন নি।
গতকাল দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রথমে প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বিস্তারিত আলোচনা করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা দুজনের মধ্যে মধ্যে এই বৈঠক চলে। মল্লিকার্জুন খাড়গের বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক কেসি ভেনুগোপাল এবং কর্ণাটকের ইনচার্জ রণদীপ সুরজেওয়ালাও উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার তিন পর্যবেক্ষক ও দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন খড়গে। পর্যবেক্ষকরাও তাদের মতামতের ভিত্তিতে নবনির্বাচিত বিধায়কদের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এর পরে, সন্ধ্যায়, খড়গে প্রথমে ডি কে শিবকুমার এবং সিদ্দারামাইয়ার সঙ্গে আলাদাভাবে দেখা করেন। প্রথমে শিবকুমার খাড়গের বাসভবনে পৌঁছান এবং সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে বৈঠক। শিবকুমার চলে যাওয়ার পর কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে দেখা করেন সিদ্দারামাইয়া। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে খাড়গের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন সিদ্দারামাইয়া। যদিও বৈঠকের পর দুই নেতার কেউ’ই সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেন নি।
এই বৈঠকের আগে, শিবকুমার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, দল আমার কাছে মন্দির, কংগ্রেস পার্টি আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি, তাই চিন্তা্র কোন কারণ নেই। রাজ্য কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ সংক্রান্ত একটি খবর প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেছিলেন যে কংগ্রেস তাঁর কাছে মায়ের মতো এবং পদত্যাগ করার প্রশ্নই আসে না। অন্যদিকে, কংগ্রেসের মিডিয়া বিভাগের প্রধান পবন খেরা জানিয়েছেন, আগামী দু-একদিনের মধ্যে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এই রাজনৈতিক উত্থান-পতনের মধ্যেই সূত্রের খবর, খড়গের সঙ্গে বৈঠকে ডি কে শিবকুমার মুখ্যমন্ত্রী পদে অনড় ছিলেন। তিনি এটাও বলেছেন যে ‘আমরা ২০১৯ সালে সিদ্দারামাইয়ার কারণে হেরেছিলাম এবং ২০২০ সালে আমাদের সরকারও পতনের মুখে পড়ে। তাহলে কেন সিদ্দারামাইয়াকে মুখ্যমন্ত্রী করা হচ্ছে’। এদিকে, কর্ণাটক প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রাক্তন সভাপতি জি পরমেশ্বরা তার দাবি উপস্থাপন করার সময় বলেছিলেন যে দলীয় হাইকমান্ড যদি তাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদের দায়িত্ব দেয় তবে তিনি সেই দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত।
যদিও সূত্রের খবর, মল্লিকার্জুন খাড়গে সকল নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য রাহুল গান্ধী এবং সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে পরামর্শ করবেন। এরমধ্যেই জল্পনা বুধবারই কর্ণাটকের নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা হতে পারে। এই ঘোষণা দিল্লিতে নয়, বেঙ্গালুরুতে করা হবে। শনিবার প্রকাশিত কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে কংগ্রেস ১৩৫ টি আসন জেতে। নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নাম নিয়ে আলোচনার জন্য রবিবার সন্ধ্যায় বেঙ্গালুরুতে কংগ্রেসের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে এখন পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর নাম নিয়ে সাসপেন্স অটুট রয়েছে।