পোক্ত ও সর্বক্ষণের নেতৃত্বের দাবিতে সোনিয়াকে ২৩ দলীয় নেতা চিঠি দিয়েছেন। তবে, চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা না হলেও তা কেন দেওয়া হল, চিঠির সময় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন তোলা হয়। যদিও কংগ্রেস সভানেত্রী হিসাবে আরও ৬ মাস সোনিয়াকেই কাজ চালাবার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, ওই চিঠিকে কেন্দ্র করে দলের অন্দরেই নানা টানাপোড়েন। এই পরিস্থিতিতে পত্র প্রেরকদের অধিকাংশই বলছেন যে, তাঁরা কেউই সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। তবে, চিঠির যে মূল উদ্দেশ্য তা বিবেচনা করা প্রয়োজন।
কেন ওয়ার্কিম কমিটির বৈঠকে চিঠি নিয়ে আলোচনা সম্ভব হল না? এআইসিসি-র কোষাধক্ষ আহমেদ প্যাটেল দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, 'নেতৃত্ব বদল ও সভাপতি নির্বাচনের বিষয়টি সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির আধিবেশনে ভোটের মাধ্যমে স্থির হয়। ওয়ার্কিং কমিটি আপাতত সোনিয়া গান্ধীকেই দলের প্রধান হিসাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।'
দলের মধ্যে নানা জল্পনা যখন তুঙ্গে তখন দলের আরেক প্রবীণ নেতা মণীশঙ্কর আইয়ার ওয়ার্কিং কমিটিকে জানিয়েছেন চিঠির 'গঠনমূলক পরামর্শ' যেন বিবেচনা করা হয়। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে আইয়ার বলেন, '২৩ নেতার চিঠির মধ্যে আমি সোনিয়া বিরোধিতা কিছু খুঁজে পাইনি। কিন্তু চিঠির উদ্দেশ্য সঠিক। আমাকে কেউ সাক্ষর করতে না বললেও স্বউদ্যোগেই হাইকম্যান্ডকে চিঠি দিয়ে ২৩ নেতার আর্জির মূল বিষয়বস্তু বিবেচনা করার আবেদন জানিয়েছি।'
সোনিয়াকে পত্র প্রেরকদের মধ্যে অন্যতম কংগ্রেস নেতা বীরাপ্পা মইলি দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলেছেন, 'আমাদের আস্থা সোনিয়াজির প্রতি এখনও অটুট। কিন্তু প্রশ্ন হল দল যখন রয়েছে তার নেতৃত্বও আছে। দল সর্বক্ষেত্রে শোচনীয় ফলাফল করছে, ব্যর্থ হচ্ছে। তাই নেতৃত্বেকেও আরও শক্তিশালী করতে হবে।'
কপিল সিবাল তো টুইটে স্পষ্ট করেন যে, 'এটা শুধু পদের বিষয় নয়, এটা দেশের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
পত্রে সাক্ষরকারী আরেক কংগ্রেস নেতা বিবেক তঙ্খার দাবি, 'ওই চিঠি নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করা নয়, উল্টে দলকে শক্তিশালী করা লক্ষ্যেই দেওয়া হয়েছে। দল হোক বা আদালত- সর্বজন বিধিত সত্যকে স্বীকার করা প্রয়োজন। ইতিহাস সাহসীদেরও মনে রাখে।' মুকুল ওয়াসনিকের কথায়, 'যাঁরা চিঠিকে ধ্বংসাত্মক বলে মনে করছেন ও সোচ্চার হয়েছেন তাঁরাই দ্রুত বুঝতে পারবেন যে চার আসল বিষয়বস্তু কী।'
চিঠির বিরোধিতা কেন হচ্ছে? এ সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন বীরাপ্পা মইলি। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য যে, 'চিঠি যখন দলকে পোক্ত করতে দেওয়া হল তখন কংগ্রেসকে খণ্ডিত করতেই তার প্রতিবাদ চলছে। চিঠির বক্তব্য ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।' এটা নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা নয়, দলকে পুনসংর্গঠিত করতেই দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে সেই প্রক্রিয়া শুরু করা না গেলে ২০২৪-এর পর কী শক্তিশালী কংগ্রেস গঠনের কাজ শুরু হবে?'
মইলির অতীত স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, 'যাঁরা ২৩ নেতার চিঠি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁদের অনেকেই দল ছেড়েছিলেন। আবার ফিরেছেন। আমরা কিন্তু দলের আপদে-বিপদে বা সুখের সময় একইভাবে থেকেছি।' নেতৃত্ব পোক্ত করার বিষয়টিকে 'সময়ের ডাক' বলে মনে করেন তিনি।
চন্ডিগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুডাও সোনিয়াকে দেওয়া চিঠিতে অন্যতম সাক্ষরকারী। তাঁর মতে, 'সোনিয়াজি দলের দায়িত্ব চালিয়ে যেতে রাজি হওয়ায় তাঁকে ধন্যবাদ। তিনি সর্বগ্রহণযোগ্য নেত্রী। তবে দলের কর্মীদের মনবল চাঙ্গা করতে একটা সিদ্ধান্তের প্রয়োজন রয়েছে।'
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন