মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয়টি ফের একবার সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছতে চলেছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা বুধবার (১০জানুয়ারি) বলেছে যে বিধায়কদের 'অযোগ্য ঘোষণার' বিষয়ে স্পিকার রাহুল নরওয়েকারের সিদ্ধান্তের বিরোধীতায় তারা সুপ্রিম কোর্টে যাবে। স্পিকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘গণতন্ত্রের হত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছে উদ্ধব ঠাকরে শিবির। আর স্পিকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন উদ্ধব। উদ্ধব এবং শিন্দে শিবিরের দায়ের করা আবেদনের রায় দেওয়ার সময় রাহুল নরওয়েকার বলেছিলেন যে একনাথ শিন্দে শিবিরই 'আসল শিবসেনা'।
উদ্ধব ঠাকরে একনাথ শিন্ডে সহ ১৬ জন বিধায়ককে 'অযোগ্য ঘোষণা' করার আবেদন করেছিলেন। এদিকে মামলার বিলম্ব নিয়ে উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১০ জানুয়ারি শেষ তারিখ ধার্য করে সুপ্রিম কোর্ট। একনাথ শিন্ডে উদ্ধব গোষ্ঠীর ১৪ জন বিধায়ককে 'অযোগ্য ঘোষণা' করার আবেদন করেছিলেন। উভয় পক্ষের আবেদন নাকচ করে দেন স্পিকার। এই সিদ্ধান্তকে বিশেষ করে উদ্ধব শিবিরের জন্য একটি 'ধাক্কা' বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
স্পিকারের সিদ্ধান্তের পরে, উদ্ধব ঠাকরে বলেছিলেন এই সিদ্ধান্ত 'গণতন্ত্রের হত্যা' এবং 'সুপ্রিম কোর্টের অবমাননা'। উদ্ধব ঠাকরের ছেলে ও বিধায়ক আদিত্য ঠাকরে বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাব। সঞ্জয় রাউতও বলেছেন, "মহারাষ্ট্রের প্রতিটি শিরায় শিবসেনা রয়েছে, আমরা অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টে যাব।" আজকের সিদ্ধান্ত বিজেপির একটি 'ষড়যন্ত্র'। শিবসেনাকে 'ধ্বংস ' করার জন্য বিজেপির ষড়যন্ত্র চলছে কিন্তু তা কখনই সফল হতে দেব না।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে বলেছেন, গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠতা গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের তা আছে। মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বলেছেন যে আমাদের সরকার তার মেয়াদ পূর্ণ করবে। জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) প্রধান শরদ পাওয়ার বলেছেন যে আশা করা যায় যে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ন্যায়বিচার দেওয়া হবে। কংগ্রেস বলেছে, রাহুল নরওয়েকারের সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক।
কী বললেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ?
মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী এবং প্রবীণ বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বলেছেন যে আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি যে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বে রাজ্যে সরকার গঠনের সময় সাংবিধানিক ও আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে অনুসরণ করেছিল। আজকের এই রায় তারই প্রমাণ। সুপ্রিম কোর্টও তার আদেশে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে এই সরকারকে 'বরখাস্ত' করার জন্য কোনো আদেশ জারি করার প্রয়োজন নেই। “তবুও কিছু লোক ইচ্ছাকৃতভাবে এবং বারবার সরকার সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার করে রাজ্যের পরিবেশ 'অস্থিতিশীল' করার চেষ্টা করছে।”
কী বললেন শরদ পাওয়ার?
এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার বলেছেন, উদ্ধব ঠাকরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন। তিনি বলেন, "তিনি (ঠাকরে) আশাবাদী যে তিনি আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবেন।"
কী বলল কংগ্রেস?
মহারাষ্ট্র কংগ্রেস সভাপতি নানা পাটোলে বলেছেন, স্পিকারের এই সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক। সুপ্রিম কোর্টে আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
কী বললেন রাহুল নরওয়েকার
বিধায়কদের অযোগ্য ঘোষণার বিষয়ে, মহারাষ্ট্র বিধানসভার স্পিকার রাহুল নরওয়েকার বলেছেন যে একনাথ শিন্দে শিবিরের শিবসেনাই 'আসল শিবসেনা'। এমন পরিস্থিতিতে বিধায়কদের 'সদস্যপদ' অক্ষুণ্ণ থাকবে। একনাথ শিন্ডেকে দল থেকে বহিষ্কার করার ক্ষমতা উদ্ধব ঠাকরের নেই।
কী বললেন একনাথ শিণ্ডে
মুখ্যমন্ত্রী শিন্দে বলেন, প্রথমত, আমি রাজ্যের সকল শিব সেনা কর্মী সমর্থককে আমার আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই। আজ আবারও গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। রাজ্যের লক্ষাধিক ভোটার যারা ২০১৯ সালে শিবসেনা-বিজেপি জোটের প্রার্থীদের ভোট দিয়েছিলেন তারা আজ জয়ী হয়েছেন" ।
মহারাষ্ট্রে মোট ২৮৮ টি বিধানসভা আসন রয়েছে। রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে এবং সরকার গঠন করতে, একটি দল বা জোটের ১৪৫ আসন প্রয়োজন। বর্তমানে, মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের ২০৩টি আসন রয়েছে, যার মধ্যে বিজেপির ১০৪টি আসন রয়েছে। শিবসেনার শিণ্ডে শিবিরের হাতে রয়েছে ৪০টি আসন এবং অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপি গোষ্ঠীর হাতে রয়েছে ৪১টি আসন। জোটের আরও ১৮ জনের সমর্থন রয়েছে।
স্পিকার যদি শিণ্ডে সহ ১৬ জন বিধায়ককে 'অযোগ্য' বলে ঘোষণা করেন, তাহলে বিজেপি-এনসিপি (অজিত পাওয়ার) এর বর্তমান জোটের ১৮৭ জন বিধায়ক থাকবেন। তাদের এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে, তবে নতুন মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে নতুন সরকার গঠন করা হবে।
উদ্ধবের কাছে কী বিকল্প রয়েছে?
উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠীর কাছে শেষ যে বিকল্প রয়েছে তা হল সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া। আসলে, সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে শুনানি করেছে এবং স্পিকার আদালতের নির্দেশেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জের পর স্পিকারের সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত অনুমোদনের ওপর।