রাজ্য ভাগ নিয়ে দিলীপ ঘোষের ভোলবদলের তীব্র সমালোচনা করেছে তৃণমূল, কংগ্রেস ও সিপিএম। বিজেপি দিশাহীন, নীতিহীন রাজনীতি করছে বলে তাদের বক্তব্য। কলকাতায় এক কথা, উত্তরবঙ্গে পাল্টি, এই নিয়ে বিঁধেছেন বঙ্গ বিজেপি সভাপতিকে। দিলীপ ঘোষের মন্তব্য নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
বাংলা ভাগের দাবি নিয়ে বিতর্ক জিইয়ে রেখেছে বিজেপি। প্রথমে আলিপুরদুয়ারের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের মনের কথা বলে এই দাবি তুলে ধরেন। তারপর বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ জঙ্গলমহল-রাঢ়বঙ্গ নিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে সরব হন। বঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ তখন দুই সাংসদের পৃথক রাজ্যের দাবির বিরোধিতা করেন। মৌখিক বিরোধিতা করা হলেও ওই সাংসদদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়নি বিজেপি। এবার উত্তরবঙ্গ গিয়ে সুর বদলেছেন দিলীপ ঘোষ।
আরও পড়ুন- গ্রেফতার রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, ১০ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ
তৃণমূল কংগ্রেস প্রথম থেকেই রাজ্য ভাগ নিয়ে সুর চড়িয়েছে। কোনও মূল্যেই রাজ্য ভাগ মেনে নেওয়া হবে না বলে তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছে। প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, "একেবারে দিশাহীন রাজনীতি। দায়িত্বজ্ঞানহীন। বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গিয়ে ওদের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।"
বিজেপির এই রাজ্য ভাগের দাবিকে সংকীর্ণ আঞ্চলিকতাবাদের রাজনীতির প্রতিচ্ছবি বলে কটাক্ষ করেছেন প্রবীণ কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। রাজ্যসভার এই সাংসদ বলেন, "দার্জিলিং, ডুয়ার্সে শক্তি বাড়াতে চেষ্টা করছে বিজেপি। কলকাতায় এক কথা বলছে উত্তরবঙ্গে আর এক কথা বলছে। ওই দলের নিজস্ব কোনও এথিকস নেই, নেই দৃঢ় মনোভাব। বাংলার মানুষ ওদের এই দাবিকে মান্যতা দেবে না।"
এদিকে বাংলা ভাগ নিয়ে বিজেপির দাবি রাজ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে বলে মনে করে সিপিএম। প্রাক্তন বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীর কথায়, "চরম অসততা। কলকাতায় থাকলে বিরোধিতা করেন উত্তরবঙ্গে গিয়ে রাজ্য ভাগের পক্ষে দাঁড়ান। যখন যেমন তখন তেমন। কোনও রাজনৈতিক মনোভাব নেই। গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন দিয়ে টানা সাংসদ হয়েছে দার্জিলিং থেকে। 'ব্লাব' দেওয়াই ওদের কাজ। এত রাজ্য ভাঙলে তা গুরুত্বহীন হয়ে যায়।"
আরও পড়ুন- সাসপেন্ড অনিল-কন্যা, প্রচারে ফিরল সিপিএম
রাজনৈতিক মহলের মতে, নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকে এরাজ্যে নতুন করে ভাগাভাগির ইস্যু খাড়া করতে তৎপর বিজেপি। উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহল, দুইপ্রান্ত থেকেই দাবি তুলেছেন বিজেপি সাংসদদ্বয়। সম্প্রতি বাংলা ভাগ নিয়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দলীয় সাংসদ জন বার্লার পাশে দাঁড়ান। বলেন, "দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে উত্তরবঙ্গের কোনও উন্নতি হয়নি। চিকিৎসা, শিক্ষা, চাকরি, স্বাস্থ্যের জন্য অন্যত্র যেতে হয় উত্তরবঙ্গবাসীকে। কেন হাসপাতাল, ভাল স্কুল নেই সেখানে? জঙ্গলমহলের অবস্থাও এক। শালপাতা, কেন্দুপাতা নিয়ে মা-বোনেরা সেখানে জীবিকা নির্বাহ করেন। কেন তাঁদের চাকরির জন্য রাঁচি, ওড়িশা, গুজরাটে যেতে হচ্ছে? দেশের স্বাধীনতা, উন্নয়নের লাভ পাওয়ার অধিকার নেই তাঁদের৷"
এর আগে রাজ্য ভাগ নিয়ে মুখে বিজেপি নেতৃত্ব যতই বিরোধিতা করুক না কেন কার্যক্ষেত্রে তার কোনও ছাপ দেখা যায়নি। বরং আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন। রাজ্য যুব মোর্চার সভাপতিও রয়েছেন সৌমিত্র।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন